লাল-সাদা বাড়ি
আহমেদ মুশফিকা নাজনীন
প্রকাশিত : ০৬:০৪ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২৩ বুধবার | আপডেট: ০৬:০৭ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২৩ বুধবার
দোতালা বাড়ি। বাড়ির দেয়াল জুড়ে মাধবীলতার ঝাড়। একপাশে একটা গোলাপের গাছ বাড়তে বাড়তে চাইছে আকাশ ছুঁতে। ওর ডালে অসংখ্য গোলাপ কুঁড়ি।
একটা দোলনা। ধুলোয় ঢাকা। কদিন আগেও ঝকঝকে ছিলো। লাল মেঝে ছিলো চকচকে। বাড়িটা জুড়ে ছিলো অতিথিদের আনাগোনা। হাসির শব্দ। টেবিল ভরা খাবার। চামচের টুংটাং শব্দ। দরজার সামনে বাহারি জুতো। বিছানায় নতুন চাদর। ফুলদানিতে সাজানো ফুল। বসার ঘরে সাদা কুরুস কাঁটার টেবিল ক্লথ। মন ভরা দুই লাল-সাদা বাড়ি।
বাড়ি দুটোর আজ মনখারাপ। যাদের পায়ের শব্দে জেগে ওঠতো তারা । সেই মানুষগুলো আজ নেই। ঘুমিয়ে আছে তারা। লাল-সাদা বাড়ি তাই আর জাগে না। ওদের ঘরের কোনে কোনে বিষন্নতার ছায়া।
পর্দা বলে মন ভালো নেই, জানালা বলে মন ভালো নেই। কাঁচের বাটি, সাদা গ্লাস সব চুপচাপ। মটরশুটি পোলাও, ঘিয়ে ভাজা সেমাই, ঘন দুধের পায়েস , রোস্ট, খাসির রেজালা সব অলস পরে থাকে টেবিলে।
সবার রঙ কেমন যেন ফ্যাকোসে।
ওদেরও মন ভালো নেই।
এ বাড়ির মেয়েগুলোর পাতে অলস পরে থাকে সাদা রোস্ট। মুখে রোচে না কারও। জায়নামায, টুপি ,আতর সুরমায় ধুলো জমে।
লাল দরজার তালা খুলে মেয়েটি যখন খোলে বাড়ির দরজা। হাত কাঁপে তার, পা কাঁপে তার, ঠোট কাঁপে তার তিরতির করে। মনের ভেতর কান্নার পাহাড়।
মন গুমড়ে কাঁদে মেয়ে। চাবি পরে যায় হাত থেকে।
সুনশান বাড়ি যেন গিলে খায় তাকে।
এক পশলা ঠান্ডা নিরবতায় মেয়েটি কেঁদে ওঠে।
এদিকে চোখ ভরা কান্না নিয়ে মনে মনে একপা দুপা করে হাঁটে সাদা বাড়ির মেয়ে । এই ঘরে হাঁটতো তার মা। হাঁটতো তার বাবা, হাঁটতো তার ভাই।
কিন্তু আজ! পায়ের চিহৃগুলো মুছে গেছে ধুলায়। কিন্তু ছাপ রেখে গেছে পুরো বাড়িময়। চশমা, লাঠি, ওষুধের বাক্স, পানজাবী, নতুন শাড়ি, লুডুর গুটি, বাদামী চাদর, কৌটা, কিছুদিন আগে কেনা নতুন জগ, ফুলঝুরি জাম বাটি সব আছে।
শুধু তারা নেই। তারা নেই, তাই আনন্দ নেই, তারা নেই, তাই মুখে হাসি নেই, তারা নেই, তাই বিষাদ হয় ঈদ।
আনন্দের দিনে সদ্য মা হারা সন্তানরা চোখ মোছে ঘরের নানা কোণে কোণে।
সবুজ ষ্টিলের আলমারিটা জড়িয়ে ধরে মেয়ে। মার হাতের র্শ্শ্প লেগে আছে কি তাতে। পাওয়া যায় কি মায়ের গায়ের গন্ধ! ন্যাপথলিনের সুবাস ভাসে বাতাসে।
কান্নায় ভেঙ্গে পরে মায়ের আঁচল ধরা মেয়েরা।
মার ঘরে থাকা বাদামী টিকটিকি আর দুই মাকড়সা অবাক হয়ে দেখে সে কান্না। মন নরম হয় তাদেরও। মমতা ঝরে পরে তাদের চোখেও। মায়ের জন্য তাদেরও মন কেমন করে।
মাকড়সাটা জাল গুটিয়ে বসে। উদাস গলায় বলে, আহা মার জন্য কি কাঁদাটাই না কাঁদছে মেয়েরা। ওদের মন ভালো হোক। টিকটিকিটা বলে ওঠে, ঠিক ঠিক ঠিক।
অলকানন্দা গাছ থেকে সেই সময় ভেসে আসে মনখারাপ করা এক বুনো বাতাস। সে বাতাস ছুঁয়ে যায় মেয়ের চুল, কান্নায় ভিজে যাওয়া গাল।
কাঠঠোকরা পাখিটা চুপ করে বসে থাকে বুড়ো আমগাছের কোঠরে। ভাবে সে মনখারাপের চিঠিটা কি পাখায় করে ও নিয়ে যাবে মায়ের কাছে, সবুজ ঘাসে কিংবা নীল আকাশে।
ঈদ এলে সবাই হাসে, বাড়ির মেয়েদের শুধু মন কেমন করে। সকাল বিকেল খোঁজে তারা সেই সে পাখি..সেই শুধু রয় বাকি!
এসএ/