ঢাকা, শুক্রবার   ০১ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ১৭ ১৪৩১

কুবিতে ফের চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার অভিযোগ

কুবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:৩৮ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২৩ বৃহস্পতিবার

২০২০ সালের পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আবারও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে, উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার বিষয়টি তদন্তাধীন অবস্থায়ই ওই শিক্ষক বিদেশ চলে যাওয়ার জন্য অনাপত্তিপত্র পেয়েছেন। ঈদের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ কার্যদিবসে এ চিঠি পেয়েছেন তিনি।

অভিযুক্ত শিক্ষক সাদিয়া জাহান। তিনি ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ‘পিএইচএআরএম-২২০২: ফার্মাসিউটিক্যাল অরগানিক কেমিস্ট্রি-২’ শিরোনামের কোর্স শিক্ষক ছিলেন তিনি।

গেল বছরের ৬ নভেম্বর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সেমিস্টারের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘পিএইচএআরএম-২২০২: ফার্মাসিউটিক্যাল অরগানিক কেমিস্ট্রি-২’ কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েছিলেন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের এ কোর্সটি না থাকায় শুধুমাত্র মানোন্নয়ন দেওয়া পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রগুলো পরীক্ষার পর সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষক সাদিয়া জাহানকে বুঝিয়ে দেন পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা। 

তবে ওই পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করতে গিয়ে উত্তরপত্র না পেয়ে সাদিয়া জাহানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরপত্র খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি জানান পরীক্ষা কমিটির সভাপতি জয় চন্দ্র রাজবংশীকে। এরপর তাঁর মাধ্যমেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার বিষয়টি উল্লেখ করে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান সাদিয়া। 

যদিও এ বিষয়ে কমিটির বাকি দুই সদস্য বিদ্যুৎ কুমার সরকার ও মো. কামরুল হাসান কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।

উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার বিষয়টি স্বীকার করে সাদিয়া জাহান বলেন, “উত্তরপত্রগুলো আমার কক্ষেই ছিল। মূল্যায়ন করতে গিয়ে সেগুলো খুঁজে না পেয়ে আামি পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে জানাই। এরপর তাঁর থেকে অগ্রায়ন নিয়েই আমি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।”

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সাদিয়া জাহান থেকে চিঠি পেয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনকে জানালে তিনি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. রায়হান উদ্দিনকে আহ্বায়ক, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ আইনুল হককে সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

দিনক্ষণ নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও গেল মাসের শেষের দিকে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. রায়হান উদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদেরকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আমরা শিগগির সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেব।

এদিকে তদন্ত চলাকালীনই বিদেশ যাওয়ার জন্য অনাপত্তিপত্র পেয়েছেন সাদিয়া জাহান। আবেদনের পর গত বৃহস্পতিবার শেষ কার্যদিবসে তড়িঘড়ি এ চিঠি পান তিনি। যদিও একই ধরনের অনাপত্তিপত্র পেতে অন্যান্য শিক্ষকদের দেড় থেকে দুই মাসেরও বেশি সময় অপেক্ষা করা ও ভোগান্তি পোহানোর নজির রয়েছে। শিক্ষকরা দাবি করছেন, উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের গ্রুপের সদস্য হওয়ায় একটি বিষয় তদন্তাধীন থাকার পরও বিনা ভোগান্তিতে তিনি অনাপত্তিপত্র পেয়ে গেছেন।

উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়েও দেখা দিয়েছে বিতর্ক। সাদিয়া জাহান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে উপাচার্যপন্থী শিক্ষক আইনুল হকের গ্রুপের সদস্য। ওই বিভাগ কিংবা কোর্সের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকার পরও আইনুল হককে তদন্ত কমিটির সদস্য করায় তদন্ত প্রভাবিত হওয়া ও স্বজনপ্রীতির আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

এসব বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো আমার জানার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। তাই আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না।

এর আগে ২০২০ সালের ১ মার্চ অনুষ্ঠিত গণিত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এমটিএইচ-২২১: রিয়াল এনালাইসিস-২ শিরোনামের কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার সবকটি উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে ওই বিভাগের শিক্ষক মো. আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। সেসময় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় ৮০তম সিন্ডিকেট। যদিও পরবর্তীতে তাঁকে সতর্ক করেই অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়া হয়।

এএইচ