ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

ঈদের পরের দিনে সুন্দরবনে পর্যটকদের ঢল

মোংলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:৪১ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২৩ রবিবার

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভয় ও শিহরণের স্থান সুন্দরবন। জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ। প্রকৃতির অকৃপণ হাতের সৃষ্টি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে আসা পর্যটকদের মন কাড়ে সবুজের সমরোহে। সেই সঙ্গে নীল আকাশের কোলে সাদা মেঘের ভেলা ও দখিনা বাতাসে দেহ-মন শীতল করে দেয়। তাইতো ঈদের ছুটিতে এবারও পর্যটকরা পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন জীববৈচিত্র্যের এই বনে।

ঈদের দিন তেমন লোকজন না আসলেও মূলত পরদিন আজ রোববার (২৩ এপ্রিল) থেকেই সুন্দরবনের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঢল নামতে শুরু করে পর্যটকদের। 

এদিন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ একাধিক ভিআইপি ব্যক্তিরাও এসেছেন সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে। ঘুরে দেখেছেন সুন্দরবনের অপরুপ সৌন্দর্য।

এই তথ্য জানিয়ে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, এদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় ৬০০’র মতো পর্যটক এসেছেন করমজলে। তারা এখানে হরিণ, বানর, কুমিরসহ নানা প্রজাতির প্রাণীসহ বনের বিভিন্ন স্থানে অবলোকন করেছেন। মুগ্ধ হয়েছেন বনের জীববৈচিত্র্য দেখে। 

সোমবারও পর্যটকদের আরও বেশি ঢল নামবে, এক্ষেত্রে অন্যান্য দিনের চেয়ে রাজস্ব আয় বেশি হবে বলে আশা বন কর্মকর্তাদের।

এদিকে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে করমজলে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মতো আকর্ষণীয় করে সুন্দরবনের স্পটগুলোকে সাজানো হয়েছে।

ট্যুর অপারেটর ব্যবসায়ী মোঃ নান্টু বলেন, তাদের বুকিং দেওয়া পর্যটকরা সুন্দরবন দেখতে আসবেন কাল। এজন্য তরা প্রস্তত রয়েছেন।

এখন সুন্দরবনে ভ্রমণ মৌসুম নয়। তাপরও ঈদের ছুটি কাটাতে দূর-দূরান্ত থেকে সুন্দরবনে ছুটে এসেছেন দর্শনার্থীরা। ঈদের ছুটিকে স্মরণীয় রাখতে কেউ এসেছেন বন্ধুবান্ধব আর কেউ পরিবার নিয়ে।

সিরাজগঞ্জ থেকে বন্ধুদের নিয়ে সুন্দরবনে প্রথমবার এসেছেন বেসরকারি একটি বিদ্যালয়ের ছাত্র ইয়াসির আরাফাত (২৯)। অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এত সুন্দর, তা বাদ দিয়ে কেন আমরা বিদেশ যাই, এখানে এলেই যেকোন মানুষের মন ভাল হবে। সুযোগ পেলে আমরা আবার আসবো।’

পাবনা থেকে এসেছেন জাহিদুর রহমান (৪৮)। দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঈদের ছুটিতে সুন্দরবনে এসেছেন এই সরকারি চাকরিজীবী। গত ঈদেও তারা সুন্দরবনে এসেছেন। সুন্দরবনের অপরুপ সৌন্দর্য তাদের মন কেড়েছে তাই আবার ছুটে আসা বলে জানান তিনি। 

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, যেকোন পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান সুন্দরবন। বিশেষ ছুটিতে তরা এখানে ছুটে আসেন।

তিনি বলেন, ‘বনের কচিখালীতে আছে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্যের হাতছানি। ভ্রমণ-পিপাসুদের জন্য কচিখালী হচ্ছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। এরপর কটাকা ও হিরনপয়েন্ট। এ তিনটি পয়েন্টে মোংলা থেকে ট্রলারে করে পৌঁছাতে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা সময় লাগে। বনের কটকাতে রয়েছে হরিণের অভ্যায়রণ্য, আছে ওয়াচ টাওয়ার। এ টাওয়ারে উঠে একনজরে দেখা যাবে অপূর্ব সুন্দরবন। আর করমজলে আসা পর্যটকদের মন কাড়ছে সেখানকার সৌন্দর্য। তবে মৌসুম না হলেও ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের ছুটিতে এ বনে হঠাৎ আনাগোনা বেড়ে যায় পর্যটকদের।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মোংলার আহবায়ক মোঃ নুর আলম শেখ বলেন, ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নৈসর্গিক লীলাভূমি অফুরন্ত সম্পদের চারণভূমি পুথিবী শ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তালিকায় নিঃসন্দেহে সেরা। এজন্য দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষ একটু সুযোগ পেলেই ছুটে আসেন এখানে। যারা সুন্দরবনে প্রথম এসেছেন সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে তারা বার বারই ছুটে আসছেন’।

মোংলা ট্যুরিস্ট পুলিশ সুন্দরবন জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের দিন পর্যটকরা না আসলেও পরদিন আজ রোববার সকাল থেকেই পর্যটকদের ঢল নামে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা মোংলার পিকনিক কর্ণার থেকে ছোট নৌযানে করে সুন্দরবনে ভ্রমণে রওনা হন। তাদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি।’

এএইচ