সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যানন্দ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:২২ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২৩ সোমবার | আপডেট: ০৭:০৩ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২৩ সোমবার
বাংলাদেশে মানুষের কল্যাণে কাজ করছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনসহ হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এদের কেউ কেউ দরিদ্র মানুষকে তিনবেলা খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে কাজ করে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জীবন মান উন্নয়নে কাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে। বিভিন্নভাবে তাদের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগও করছেন। আবার যারা ঘনিষ্ঠভাবে বিদ্যানন্দ বা এর প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাসকে জানেনা তারাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বক্তব্য তুলে ধরছেন। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগের জবাবও তারা তথ্যের ভিত্তিতে দিয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যানন্দ নিয়ে ফেসবুকে একজন লিখেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার পরে বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি বিভক্ত হয়ে গেছে। এখন অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কিংবা নাগরিক অধিকারসম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে কেউ একজন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে যায়।
লিখেছেন- ‘ইস্... বিদ্যানন্দ যদি না থাকতো, তাহলে আজকের বঞ্চিত- লোভাতুর - লুজাররা কিভাবে লাইক- শেয়ার বিক্রি করে খেতো!
আমরা গর্বিত, আমরা বিদ্যানন্দকে ভালবাসি। বিদ্যানন্দে বিশ্বাস রাখি।
আমরা ওই প্রবাদটাই মানি ‘তোমার ঈর্ষা- আমার জয়’!
জয়তু বিদ্যানন্দ।’
বিদ্যানন্দ নিয়া যারা হাউকাউ করতেছে তাদের ৮০% বিদ্যানন্দতে একটা টাকা দেয়াতো দূরে থাক, জীবনে রাস্তার একটা কুকুরকেও একটা রুটি খাইতে দেয় নাই।’
একজন লিখেছেন, ‘সমালোচনায় জর্জরিত বিদ্যানন্দ তাদের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য ধৈর্য ও বিনয়ের সাথে যে বক্তব্য দিয়েছে তা সাধুবাদ জানাই। অনেক প্রশ্নের উত্তর তারা দিয়েছে, কিছু দেয় নি যেগুলো খুব বড় কিছু না।’
দেশের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিক লিখেছেন, ‘ফেসবুকে নানা জনের নানা সমালোচনা, নিন্দা আর কুৎসা দেখেই বুঝতে পারছি বিদ্যানন্দ ভালো কাজ করছে। কাজ করছে বলেই মাঝে মাঝে ভুলও করছে। আর ফেসবুকের ফেরেশতারা, যারা জীবনে অন্যের জন্য কোনো কাজ করে না এবং ভুলও করে না তারা বিদ্যানন্দের পিণ্ডি চটকাচ্ছে।
আরেকজন লিখেছেন এ দেশে শুধুমাত্র তাদেরকেই লোকে গালি দেয় যারা ভালো কাজ করে। আর যারা ডাকাতি করে, ধর্ষণ করে, খুন করে, অন্যের জমি- বাড়ি দখল করে, ব্যাংক লুটে নেয় তাদেরকে লোকে কুর্ণিশ করে, তাদের পা চাটে!...’
একজন লিখেছেন, ‘জীবনে একদিনের জন্যও যারা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এর ফান্ডে একটা টাকা অনুদান দেয় নাই অথবা কোন একটা সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করে নাই সেইসব ফেসবুক বুদ্ধিজীবীগণ স্ট্যাটাসে বিদ্যানন্দের পিণ্ডি চটকাচ্ছে।
অন্য একজন লিখেছেন, ‘বিদ্যানন্দ এর সকল কাজকর্ম, কালেকশন, ব্যয় সবই সহজ ও খোলামেলা ভাবে রয়েছে। তাদের অডিট রিপোর্ট শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের মধ্যে ৬ নম্বর একটা ফার্মকে দিয়ে করা। বাংলাদেশের কোনো মাদ্রাসা, মসজিদ, মাজার এসবের অডিট করা হয় কী না, এ প্রশ্নের উত্তর কেউ দেবে না।’
কেউ লিখেছেন, ‘প্রতিহিংসা নয় পরামর্শ নিয়ে বিদ্যানন্দের পাশে থাকুন। কারণ বিদ্যানন্দ পেশাজীবীদের দ্বারা পরিচালিত নয়, স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা প্ররিচালিত প্রতিষ্ঠান।’
কথা হচ্ছে, বিদ্যানন্দ নিয়ে সমালোচনা থাকলে অবশ্যই সেটাকে তুলে ধরা উচিত তবে সেটা হতে হবে গঠনমূলক উপায়ে। এখানে ধর্মের ব্যাক্তিকে আক্রমনের কোনো বিষয় আসা উচিত না। বিদ্যানন্দের প্রধান কিশোর দাসের ফেসবুক লাইভ তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও সুচিন্তিত উপায়ে সব অভিযোগের একটা একটা করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ফলে তার বা তার প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যার পরে আর কোনো পক্ষই আঙ্গুল তোলার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলেছেন বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস। বিদ্যানন্দের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তেও তার আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
যাকাত নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাকাত ফান্ড আমরা নিতে চাইনি। এক হুজুর আমাকে বললেন, আপনি নেবেন না কেন, এটাকে অস্পৃশ্য মনে করছেন কেন? মানুষ দিলে আপনাকে নিতে হবে। না নিলে আরেক ধরনের বিজ্ঞাপন হবে। এজন্য আমরা চুপচাপ থাকি, মানুষ দিলে দেবে, না দিলে নাই। টোটাল ফান্ডের মাত্র ৫ শতাংশ যাকাত থেকে আসে।’
পার্বত্য চট্টগ্রামে কার্যক্রম চালানো বেশিরভাগ জমি শর্তসাপেক্ষে লিজ নেওয়া বলে দাবি করেন কিশোর। তিনি বলেন, ‘বিদ্যানন্দ কার্যক্রম বন্ধ করলে জমিগুলো মালিকের কাছে ফেরত যাবে। অনাথদের শিক্ষা কার্যক্রমে এ জমি ব্যবহৃত হবে।’
মজিদ চাচা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভালো ট্রল হচ্ছে। একবার একটা পোস্টে সত্যিকারের নাম দেই। সেই নামটা বিখ্যাত কারও নামে ছিল। তখন বলা হয়, ইচ্ছে করে ওই লোককে অপমান করার জন্য ওই নাম দেওয়া হয়েছে। সেজন্য আমরা সাধারণত রূপক নাম ব্যবহার করি। শুধু মজিদ না অনেকগুলো নাম পাবেন, একই নাম বার বার পাবেন।’
একই গরুর ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে চ্যারিটিটা হচ্ছে একটা অ্যাকশন, আমাদের কাছে সেটা যাত্রাপথ। প্রতিটি যাত্রাপথে মানুষকে ইনভলভ করি।’
তিনি বলেন, ‘অডিট নিয়ে যারা কথা বলছেন, তারা আমাদের একটা রিপোর্ট নিয়ে অডিট ফার্মে যান, জিজ্ঞসা করেন এটার কোথায় কোথায় ত্রুটি আছে। বিদ্যানন্দের টাকা ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া হয় না। ব্যাংকে যায়, অডিট ফার্মগুলো ব্যাংক থেকে রিপোর্ট নেয়। আমাদের বেশিরভাগ খরচ বড় বড় ভেন্ডর থেকে করা হয়। আমাদের অডিট রিপোর্ট অনলাইনে আছে।’
জামাকাপড়ের ভুল ছবি পোস্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইটস অ্যাবসুলেটলি অনেস্ট মিস্টেক। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে মাফ চাই।’
তিনি বলেন, ‘পদ ছাড়তে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি চাই এখান থেকে সরতে। আমাদের ৮-১০ টা ফেসবুক পেজ আছে৷ কম্বাইন্ড এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার লেখা লিখেছি। এর মধ্যে ৩০টা ভুল আপনি পাবেনই। এরকম লেখার জন্য আমাদের পেইড প্রতিষ্ঠান নেই। বিদ্যানন্দ বন্ধ হয়ে যাবে, এটা নিয়ে আমো ভয় পাই না। যদি মনে হয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিক, ইটস অ্যাবসুলেটলি ওকে।’
কারও কোনো ক্ষোভ বা অনুযোগ নেই জানিয়ে কিশোর বলেন, ‘আমরা মন খারাপ করছি, কিন্তু ক্লান্ত না। দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আমরা নিয়মিত রিপোর্ট করি। আমরা লাগামছাড়া প্রতিষ্ঠান না। আপনার নীতির সঙ্গে মিললে অনুদান দেবেন। দাতব্য প্রতিষ্ঠানে প্রশ্ন করার রীতিটা ভালো, অদূর ভবিষ্যতের জন্য। ধাক্কাটা আমাদের মধ্যদিয়ে গেছে, এ প্রশ্ন বাকিদের প্রতিও আসবে, প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি শুদ্ধ হবে।’