প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের ৩১ বছর, আজও অরক্ষিত উপকূলীয় এলাকা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৩০ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০২৩ শুক্রবার
আগামীকাল ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এই দিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল দেশের উপকূলীয় জনপদ। এদিন প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত এবং ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস তছনছ করে দিয়েছিল উপকূলীয় জনপদ। সেদিনের ঘটনায় দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয়। ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়।
দেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে নিহতের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের এই ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রামের সন্দীপসহ উরির চর ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক মানুষ মারা যান।
পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়টি ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ছয় মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয় এবং এতে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
এদের বেশিরভাগই নিহত হয় চট্টগ্রাম জেলার উপকূল ও দ্বীপসমূহে। সন্দ্বীপ, মহেশখালী, হাতিয়া দ্বীপে নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক। শুধু সন্দ্বীপেই মারা যায় প্রায় ২৩ হাজার লোক।
ধারণা করা হয়, এই ঘুর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। সাগর ও নদীর উপকূল প্লাবিত হয়। কর্ণফুলী নদীর তীরে কংক্রিটের বাঁধ থাকলেও এটি জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংস হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১০০ টন ওজনের একটি ক্রেন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে স্থানচ্যুত হয় এবং আঘাতের কারণে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
বন্দরে নোঙর করা বিভিন্ন ছোট বড় জাহাজ, লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান নিখোঁজ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অনেক যানও ছিল। এছাড়া প্রায় ১০ লাখ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
২৯ এপ্রিলের সেই ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি বয়ে উপকূলীয় মানুষের কাছে দিনটি ফিরে আসে বার বার। দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি শোকাবহ দিন। প্রলয়ংকরী এই তাণ্ডবের ৩১ বছর পরও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ হয়নি। অরক্ষিত উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের খবর শুনলে এখনও নির্ঘুম রাত পার করেন।
২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে আঘাতহানা প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল সীতাকুণ্ডের সলিমপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত ৯টি ইউনিয়ন। প্রায় ২২৫ কিলোমিটার গতিবেগ সম্পন্ন ও ৩০-৩৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে উপকূল পরিণত হয়েছিল বিরাণ ভূমিতে। এসময় মারা গিয়েছিল এলাকার প্রায় সাত হাজার মানুষ। আর নিখোঁজ হয়েছিল প্রায় তিন হাজার শিশু-নারী-পুরুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রায় তিনশত কোটি টাকার সম্পদ।
১৯৯১ সালের এইদিনকে স্মরণ করে ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রতি বছর ২৯ এপ্রিল ঘরে-ঘরে মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানি, দোয়া কামনা, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন আয়োজনে দিনটি পালন করে আনোয়ারা, বাঁশখালী, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ সমগ্র উপকূলীবাসী।
এসবি/