রাজশাহী সিটিতে ২৫ ওয়ার্ডে বিএনপি ও ৭টিতে জামায়াতের প্রার্থী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:৩৬ পিএম, ৮ মে ২০২৩ সোমবার
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না নেতাকর্মীদের এমন নির্দেশনা দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। তবে দলের হাইকমান্ডের দেয়া নির্দেশনা অমান্য করে রাজশাহী সিটিতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোটের মাঠে নেমেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। এবার তাদের প্রার্থী থাকছে ২৫টি ওয়ার্ডে।
শুধু বিএনপিই নয় তাদের শরীক দল জামায়াতে ইসলামও অনেকটা ঘোষণা দিয়েই রাজশাহী সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী দিচ্ছে। নগরীর ২, ২৬, ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বরসহ অন্তত সাতটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মহানগর জামায়াতের শুরা সদস্য মাজেদ আলী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের যেসব নেতা কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর হিসেবে আছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বেশির ভাগই ইতিমধ্যে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। বাকিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অমান্য করে অন্তত ২৫টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়বেন বিএনপি নেতারা। কোনো কোনো ওয়ার্ডে বিএনপির একাধিক নেতা লড়াইয়ে নামছেন।
সূত্রমতে, নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপি নেতা মাহবুব সাঈদ টুকু। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রস্তুতি নিচ্ছেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য তাজউদ্দিন আহমেদ সেন্টু। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটে অংশ নিচ্ছেন বদিউজ্জামান বদি।
৭ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর সোহরাব হোসেন এবং যুবদল নেতা আতাউর রহমান নির্বাচনে নামতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। জেলা বিএনপির সাবেক সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি আজিজুর রহমানের ছেলে রেজাউল করিম নান্নুও এখানে নির্বাচন করবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
১২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনে আসছেন বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর দিলদার হোসেন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আবদুস সোবহান লিটন বিএনপির সমর্থক। তিনি এবারও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২০০২ সাল থেকে টানা চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন শাহ মখদুম থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি বেলাল আহমেদ। এবারও তিনি নির্বাচনে লড়তে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচা। তিনি যুবদলের সাবেক নেতা। তিনিও ভোটে অংশ নিচ্ছেন। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটো। তিনি রাজশাহী মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন মহানগর বিএনপির সহসভাপতি তরিকুল আলম পল্টু। এবারও তিনি ভোটে অংশ নিচ্ছেন।
২০০২ সাল থেকে টানা চারবার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ারুল আমিন আজব। তিনি মহানগর বিএনপির সহ- সভাপতি ছিলেন। তিনিও মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আশরাফুল হোসেন বাচ্চুও মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামসুন নাহার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুসলিমা খাতুন বেলী। তারা দুজনই নির্বাচনে আসছেন। বেলী ইতোমধ্যে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। সামসুন নাহার তুলবেন কাল।
নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশরাফুল আলম বাচ্চু বলেন, ‘আমি সক্রিয়ভাবে ছাত্রদল করেছি। তারপর বিএনপির পদে নেই। সব মানুষ আমাকে বিএনপির লোক হিসেবেই চেনে। বিএনপি নির্বাচনে আসছে না, সেটা ঠিক আছে। আমি মানুষের সঙ্গে থাকি। সে জন্যই নির্বাচনে আসছি।’
সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও মহিলা দলের নেত্রী সামসুন নাহার দাবি করেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিংবা না নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলেননি। তাই নির্বাচনে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার চেয়ে সিনিয়র নেতারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারা মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। তাই আমিও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। মনোনয়ন ফরম তুলব।’
মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব মামুন অর রশিদ বলেন, বিএনপি নেতাদের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা অজুহাত দিচ্ছেন, এটি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন নয়। তাই তাদের নির্বাচন করতে বাধা নেই।
তিনি বলেন, বিএনপির অনেক জায়গারই কমিটি নেই। তাই যারা নির্বাচনে আসছেন, তাদের অনেকেরই পদ-পদবি নেই, কিন্তু তারা বিএনপি করেন। তাদের নির্বাচন করতে বারণ করা হলেও কথা শুনছেন না। এ নিয়ে আমরা বিব্রত। যারা নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপি নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে দলটির রাজশাহী মহানগরের আহবায়ক এরশাদ আলী বলেন, ‘যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তারা মনে মনে আওয়ামী লীগ। তারা বিএনপির লোক হতে পারে না। আমরা তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘আমরা সংসদ নির্বাচনের বাইরে কোনো নির্বাচন নিয়ে এখন ভাবছি না। এই সরকারের অধিনে আমরা কোনো নির্বাচনে অংশ নিব না। আমাদের সংগঠন থেকে কোনো প্রার্থী রাজশাহী সিটি নির্বাচনে অংশ না নেন সে নিয়ে আমরা কাজ করছি। এর পরই কেউ সিটি ভোটে অংশ নেয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে, রাজশাহী সিটিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রার্থীর ছড়াছড়ি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই তাদের একাধিক নেতা প্রার্থী হচ্ছেন। মেয়র পদে জোটগতভাবে মাঠে থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে দুটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী দিচ্ছে। এছাড়াও জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১০টি ওয়ার্ডে।
নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, আগামী ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দেয়া যাবে। রোববার পর্যন্ত মেয়র পদে একজন, ১০টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন, ৩০টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৭৪ জন মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন। তবে এখনো কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টিতে জিতেছিলেন বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ওই নির্বাচনে মেয়র হন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের ২১টিতেই বিজয়ী হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলররা। সে নির্বাচনে মেয়র হন আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
কেআই//