ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড় মোখা, গুমোট চট্টগ্রামের আবহাওয়া

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৪৭ পিএম, ১২ মে ২০২৩ শুক্রবার

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা আরো শক্তিশালী হয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ আজ দুপুরে এটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১ হাজার ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। চট্টগ্রামসহ চার সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, ‘মোখা’ এখনো চট্টগ্রাম থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করলেও সাগরের চরিত্র ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে। ছোটো ঢেউগুলো ক্রমে বড়ো হচ্ছে। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উত্তাল বঙ্গোপসাগর। ইতিমধ্যে অধিকাংশ লাইটার জাহাজ ও সকল মাছ ধরার ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি নিয়ে আসা হয়েছে। প্রকৃতিতেও রয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। তাপমাত্রা গত কয়েকদিনের তুলনায় কমেছে। তাপমাত্রা দুপুরে কিছু সময় ৩৪ ডিগ্রি থাকলেও বিকেলে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। দিনের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিল সকালে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চট্টগ্রামে বৃষ্টি শুরু না হলেও সকাল থেকেই গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। 

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব বলেছেন, ৪ নম্বর সংকেত জারির পর প্রায় সকল লাইটার জাহাজ সতর্কতা হিসেবে মোহনা হয়ে সদরঘাট, কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু ও কালুরঘাট সেতুর কাছাকাছি কর্ণফুলী নদীতে অবস্থান করছে। সংকেত ৭ নম্বরে ওঠে গেলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত মাদার ভেসেলগুলোকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। 
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাত ও জানমাল রক্ষায় চট্টগ্রামের উপকূলীয় চার উপজেলাসহ জেলার ১৫ উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। 

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি। ইতিমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির সভা করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে এনে নিরাপদ স্থানে রাখতে ১ হাজার ৩ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৫ লক্ষাধিক। ৮ হাজার ৮৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্ট  সোসাইটির ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। পর্যাপ্ত সরঞ্জামসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের রেসকিউ বোট ও মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় চসিকের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ৬ নম্বর সংকেতের পর নগরীর উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে  নেয়াসহ তাদের মাঝে শুকনো খাবার ও পানি সরবরাহ করা হবে। এ জন্য নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সহায়তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। 

তিনি জানান, আজ পতেঙ্গাসহ নগরীর উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস থেকে ৬ নম্বর সংকেত দেয়া হলে এসব এলাকার মানুষকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য আমাদের দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ শুরু করবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেডিকেল টিম ও বিদ্যুৎ বিভাগকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কর্পোরেশনের কন্ট্রোল রুম ও ৪১ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর অফিসে পানি ও শুকনো খাবার রাখা হবে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারী লোকজনকে রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা দ্রুত শুকনো খাবার পৌঁছে দিতে পারবে।

কেআই//