এক ভবনেই অনুমোদনহীন ৭ হাসপাতাল (ভিডিও)
সাইদুল ইসলাম, একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:২৩ পিএম, ১৩ মে ২০২৩ শনিবার
হাসাপতাল পরিচালনার অনুমোদন নেই কিন্তু দিব্যি চলছে রোগী ভর্তি, চেম্বার বসিয়ে রোগী দেখা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের উল্টোপাশের এক ভবনেই গড়ে উঠেছে এমন ৭টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। এই চিত্র তুল ধরতে গেলে একুশে টেলিভিশনের কর্মীদের সঙ্গে করা হয় অসদাচরণ।
অবৈধ চিকিৎসা কেন্দ্রের বিপুল সমাহার। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পাশের এই ভবনেই গড়ে উঠেছে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়গনস্টিক সেন্টার মিলে কমপক্ষে ৭টি প্রতিষ্ঠান। সরকারি হাসপাতালের আশপাশে বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এখানে তার কিছুই মানা হয়নি।
সরকারি হাসপাতালের প্রায় গাঁ ঘেষে একই ভবনে এতোগুলো হাসপাতাল-ক্লিনিক কিভাবে কার আনুকূল্যে চলছে, তা তুলে আনতে সেখানে যায় একুশের টিম। হাসপাতালে গেলেই চড়াও হয় কর্মীরা।
চলতে থাকে অকথ্য গালিগালাজ। এক পর্যায়ে একুশের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন ধরে টানা-হেঁছড়াও করে হাসপাতালের কর্মীরা।
হাসপাতাল পরিচালনার অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে লাইসেন্সের বিষয়ে কিছইু জানেন না বলে জানান তারা।
তারা জানান, সারা বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালের পাশেই সব প্রাইভেট হাসপাতালের অবস্থান। অনুমোদন সম্পর্কে আমরা জানি না, তবে মালিক জানেন।
ঢাকা হেলথ কেয়ার হসপিটাল, এখানে উন্নত চিকিৎসা ও আধুনিক যন্ত্রপাতির বিজ্ঞাপন ঝুলছে। আইসিইউ, এনআইসিইউ, পিআইসিইউসহ সব ধরনের কথাও বলা হচ্ছে। কিন্তু লাইসেন্স আছে কিনা তার জবাব নেই কর্তৃপক্ষের।
টিজি হাসপাতালেরও অনুমোদন নেই। তবে, ব্যবসা চলছে। নেই জেনারেল বেড, জরুরি বিভাগসহ অনেক কিছুই।
এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের এখানে সিট নাই, শুধু আইসিইউ চালু আছে। অন্যান্য বিভাগ শুরু করা হয়নি।
মূলত পাশের সোহরাওয়ার্দী, কিডনী, পঙ্গু, হৃদরোগসহ আপপাশের সরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভর করেই গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক। অভিযোগ রয়েছে, দালালরা যোগসাজস করে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভাগিয়ে এনে এসব অবৈধ হাসপাতালে ভর্তি করাচ্ছে।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেখানেও অভিযোগের অন্ত নেই। রোগীরা জানান, সহজে প্রত্যাশিত সেবা মিলে না এখানে।
এক রোগী বলেন, “সকাল থেকে না খেয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী এখানে। কিন্তু ওনাদের ব্যবস্থাপনা এতোটাই খারাপ যে তা বলার মতো নয়। এক্স-রে রিপোর্টের জন্য ১ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেশীশক্তির দাপটেই চালানো হচ্ছে এসব তথাকথিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক।
বিএমএ সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব বলেন, “এটা হাসপাতালের ফ্লোর নিয়ে তো লাইসেন্স হয় না। আর সেটা যদি ঢাকা সিটিতে হয়, তা খুবই জঘন্য। ব্যবসায়ী নৈতিকতার দিক থেকে জঘন্যতম উদাহরণ। সেখানে আবার প্রত্যক্ষভাবে সহায়ক হচ্ছে রাষ্ট্র।”
বিএমএ সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল অর্সোনাল বলেন, “বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকারি হাসপাতালের কত দূরত্বে হবে, কিভাবে হবে এগুলো নির্ধারণ করা আছে, কিন্তু কেউ মানছেনা।”
সরকারি-বেসরকারি উভয় হাসপাতালে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
অধ্যাপক ডা. ইকবাল অর্সোনাল বলেন, “এই আইনগুলো বাস্তবায়নের জায়গায় যারা আছেন তাদের দায় এবং দায়িত্ব হচ্ছে এই আইনগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করা। কিন্তু সেগুলো হচ্ছেনা।”
দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নের স্বার্থেই অবৈধ এবং নীতিমালার বাইরে গড়ে ওঠা সব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
এএইচ