বিশ্বের বৃহত্তম ফুলের বাগান নেদারল্যান্ডসের কেউকেনাফ (ভিডিও)
বিকুল চক্রবর্তী, নেদারল্যান্ডস, একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:২৭ পিএম, ১৪ মে ২০২৩ রবিবার | আপডেট: ১০:৪৮ পিএম, ১৪ মে ২০২৩ রবিবার
ফুল ভালবাসে না পৃথিবীতে এমন লোকের সংখ্যা খুব কমই আছে। ফুল সৌন্দর্য ও পবিত্রতার প্রতীক। এটি যেমন পবীত্র কুরআনেও উল্লেখ আছে তেমনি সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন গ্রন্থেও আছে। অবাক বিষয় হচ্ছে কিছু কিছু ফুলের গাছ আছে যেগুলো এক ঋতুতেই শেষ। এক জীবনে ফুল একবারই ফোটে। নেদারল্যান্ডে ফুল ভালোবাসে না এবং ফুল আদান-প্রদান করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এমন বাড়ি নেই যে বাড়ির আঙ্গিনায় একটি ফুল বা অন্য কোন জাতের গাছ নেই। বিশ্বের বৃহত্তম ফুলের বাগান নেদারল্যান্ডের কেউকেনাফ। বিশেষ করে টিউলিপ ফুলের জন্য বিখ্যাত। অথচ মাত্র কয়েক শতাব্দী আগে নেদারল্যান্ডে টিউলিপের দাম স্বর্ণের চেয়ে বেশি ছিল!
কেউকেনাফ সম্পর্কে আরেকটি আকর্ষণীয় জিনিস ফুলপ্রেমিদের জানা প্রয়োজন যে, প্রতি বছর বাগানে বিভিন্ন থিম বাস্তবায়ন করা হয়। বাগানের সৌন্দর্য বর্ধন করার জন্যে দীর্ঘ হাঁটা পথ রয়েছে। ৪৫ মিনিটের দীর্ঘ নৌকা যাত্রায় আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকে বাগানের স্বর্গীয় সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। কেউকেনাফ ফুলের বাগানে অনেক শিল্পকর্ম ভাস্কর্য এবং ঝর্ণা রয়েছে। ফুল যারা ভালোবাসেন তাদের জন্যে কেউকেনাফ এক প্রাকৃতিক রঙের জগত। প্রায় ৮০একর জায়গা জুড়ে নেদারল্যান্ডের আমস্ট্যার্ডামে কেউকেনহফ টিউলিপ গার্ডেন।
বিশাল টিউলিফ ফুলের বাগান। প্রতি বছর বসন্তে টিউলিপ ফেস্টিভ্যালের সময় বাগানটি ৬ হাজার প্রজাতির টিউলিপ সহ বিভিন্ন প্রকারের ৭ মিলিয়নেরও বেশি ফুল ফোটে। টিউলিপ গার্ডেন বিশ্বের বৃহত্তম ফুল বাগানগুলির মধ্যে একটি।
বাগানটি ১৯৪৯ সালে নেদারল্যান্ডসের বোলেনস্ট্রিক অঞ্চলের লিসের কেউকেনাফ শহরে প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য ফুলের উৎপাদন শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় দেশটি এখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফুল রপ্তানিকারক।
এই বিশাল ফুলের সমাহারকে সামলে রেখে কেউকেনাফ গার্ডেন কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে একটি বার্ষিক টিউলিপ উৎসবের আয়োজন করে। যেখানে ফুলের শো, প্যারেড, বাদ্যযন্ত্র অনুষ্ঠান এবং আরও অনেক কিছুরই সমাহার হয়৷ আর এটি দেখতে প্রতি বছর দেড় মিলিয়নেরও বেশি দর্শকের আগমন ঘটে সেখানে।
এবছরও এই টিউলিপ মেলা শুরু হয় ২৩ মার্চ। যা ইতি টানবে ১৪ মে। এই বাগান দেখত আসা দর্শনার্থীরা কিছু সময়ের জন্য যেন হারিয়ে যান স্বপ্নের স্বর্গপূরীতে। তারা মন খোলে বাগানের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্থে নিয়ে ঘুরে বেড়ান। ফুলের সাথে মিলিত হন ফটোসেশনে। অনেকে নিয়ে আসেন তাদের শিশু সন্তানকেও। যা এই বাগান দর্শনার্থীদের মনেনে এনে দেয় উৎসব। আনন্দের হিল্লোল। শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে বিনোদনের ব্যবস্থাও।
বলা চলে টিউলিপ ফেস্টিভ্যাল নেদারল্যান্ডে বসন্ত ঋতুর সূচনা করে। শুধু কেউকেনাফ গার্ডেন নয় প্রদেশ জুড়ে সুন্দর রঙে লক্ষ লক্ষ ফুল ফুটতে শুরু করে। এর জন্য শরৎকালের শেষ দিকে দেশটিতে ৭ মিলিয়নেরও বেশি চারা হাতে লাগানো হয়। যাতে বসন্তে ফুলগুলো ফোটাতে পারে। ফেস্টিভাল রাখা হয়েছে তাদের ঐতিহ্যবাহী উইন মিল ও তাদের ঐতিহ্য লালিত জুতা। বর্তমান জড়া জীর্ণ ও নানা প্রাকৃতিক বাধাগ্রস্ত ব্যস্ততম বিশ্বে নেদারল্যান্ডের এই ফেস্টিভাল বিশ্ববাসীর মনে যোগ করে এক অন্যরকম আনন্দের মাত্রা।
লন্ডন থেকে টিউলিপ ফুল দেখতে আসা খায়রুল ইসলাম বলেন, টিউলিপ ফুল যে কত রঙের হতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস হয় না। সাদা, লাল, নীল আরো কত কি! বাগানের ভিতর ফুলের জাদুঘর আছে, আছে স্যুভেনিয়র কেনার দোকান। টিউলিপ ফুল আকৃতির বেগসহ নানা প্রসাধনী। কি অসাধারণ অভিজ্ঞতা! স্বপ্নের মত জায়গা।
ভারত থেকে আসা পর্যটক পল্লবী রায় জানান, এই টিউলিপ ফুলের বাগানে আনন্দের যেন শেষ নেই। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখছি ফুল। আর ছবি তুলছি বিরামহীনভাবে।
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কেউকেনহোফ এ ঘুড়তে আসা জোবায়ানা বলেন, গোর্ডেনের ভেতরে প্রবেশ করলাম, মুহূর্তেই আমি হারিয়ে গেছি ছবির মতো কোন এক শহরে। যেদিকে তাকাই শুধু নানা ধরনের নানা রঙের টিউলিপ সবুজের মাঝে ছেয়ে রয়েছে।
কানাডা থেকে টিউলিপ ফুল দেখতে আসা কিম বলেন, বাগানের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে অপূর্ব লেক আর ধার ঘেঁষে রয়েছে সারি সারি ফুলের বাগান। কোথাও কোথাও এমনভাবে সাজানো, যেন ফুল দিয়ে আঁকা হয়েছে বিমূর্ত কোনো শিল্পকর্ম।
টিউলিপ ফেস্টিভ্যালে ঘাস কাটায় নিয়োজিত এইজি জানান, গার্ডেনের ভিতরে পরিচ্ছন্নতায় ও বর্ধিত ঘাস কাটতে প্রতিদিন ৫০ জন লোক কাজ করে।
টিউলিপ ফেস্টিভাল এ কর্মরত নেদারল্যান্ডের ইয়াকুবা জানান, প্রতি মৌসুমে ১০ লক্ষ মানুষ কেউকেনাফ পরিদর্শন করেন। নেদারল্যান্ডের পশ্চিমে লিস শহরে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম ফুলের বাগান কেউকেনহোফ ফ্লাওয়ার গার্ডেন। এটি ইউরোপের বাগান নামেও পরিচিত।
টিউলিপ ফেস্টিভাল এর ডিউটি ম্যানেজার মি. ফেইও বলেন, এখানে আপনি দেখতে পাবেন যে কিভাবে পৃথিবী দ্রবীভূত, রূপান্তরিত, পূর্ণ এবং সুগন্ধি হয়। এখানে সুন্দর ছবির জন্য, রঙের জন্য, সুবাসের জন্য এবং এই বিশ্বের বৈচিত্র্যের কোন সীমা নেই । সারা বিশ্বের মানুষ ফুলের বাগান দেখার জন্য প্রতিবছর নেদারল্যান্ডসে আসে।
অনেকেরই জানা নেই, টিউলিপের আদি বাস ছিল হিমালয়ান অঞ্চলে; তিয়ান শান পর্বত এলাকায়। সেখান থেকে ষোড়শ শতকে তুরস্ক হয়ে এ ফুল পৌঁছায় নেদারল্যান্ডসে। তুর্কি সুলতানরা বসন্তকালে বাগানে টিউলিপ পার্টি করতেন বলে ইতিহাসে উল্লেখ আছে।
এসবি/