সারাদেশে বজ্রপাতে প্রাণ হারালেন ১৪ জন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৪৫ পিএম, ২৩ মে ২০২৩ মঙ্গলবার
সারাদেশে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন। এদের মধ্যে নরসিংদীতে পাঁচজন, পাবনায় দুজন, কুড়িগ্রামে দুজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুজন, নওগাঁয় একজন, পটুয়াখালীতে একজন ও কিশোরগঞ্জে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ মে) দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে পৃথক স্থানে এসব ঘটনা ঘটে।
নরসিংদী
দুপুরে সদর, রায়পুরা, মনোহরদী ও শিবপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে নারীসহ পাঁচজন মারা গেছেন।
তারা হলেন- রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের মোমরাজ মিয়ার স্ত্রী সামসুন নাহার (৪৫) ও নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের ইসমাইল মিয়ার ছেলে জাবেদ মিয়া (১২), মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পাতরদিয়া গ্রামের মৃত বাদল মিয়ার ছেলে রায়হান মিয়া (২৫), শিবপুর উপজেলার দক্ষিণ সাদারচর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩০) ও পৌর শহরের পশ্চিমকান্দাপাড়া মহল্লার সুকুমার রায়ের ছেলে শুপ্তকর (১৪)।
অন্যদিকে, শিবপুরের দক্ষিণ সাদারচর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া মাঠে কাজ করছিলেন। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে সেখান থেকে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
এছাড়া নরসিংদী পৌর শহরের পশ্চিমকান্দাপাড়া মহল্লার পুকুরে গোসলে নামলে বজ্রপাতে মারা যান শুপ্তকর। তার মৃত্যুর বিষয়টি স্বজনদের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেলেও তারা গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ করতে চাননি।
পাবনা
বিকেল সাড়ে ৫টায় ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশা ইউনিয়নের পাঁচ বেতুয়ান গ্রামে মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে দুই কৃষি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
মারা যাওয়া দুজন হলেন- চাটমোহর উপজেলার সাইকোলা নদীপাড়া এলাকার মনি মাঝির ছেলে মো. রুমিজ (২৮) ও মমিন হোসেনের ছেলে শাকিল (২০)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাটমোহর উপজেলার সাইকোলা নদীপাড়া গ্রামের শাকিল ও রুমিজসহ ১০-১২ জন বেতুয়ান গ্রামে গিয়ে ধান কাটার কাজ করছিলেন। এমন সময় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে তারা মাঠের মধ্যে একটি ঘরে অবস্থান নেন। ঝড়-বৃষ্টির সময় সেই ঘরের ওপর বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান এবং আহত হন ১১ জন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এদিকে বিশাকেল, মাস্টার পাড়া ও ভবানীপুর গ্রামে একজন করে মোট ৩ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম
বিকেল সাড়ে ৫টায় উলিপুর ও চিলমারী উপজেলায় বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের গণক পাড়ার রহিজউদ্দিনের ছেলে শাহাজালাল (৪৫) ও চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বাগানবাড়ী এলাকায় অবরু শেখ (৫০)।
অপরদিকে, উলিপুর উপজেলায় বাদাম ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে শাহজালালের মৃত্যু হয়েছে। উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আশরাফুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
দুই উপজেলায় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে নাসিরনগর উপজেলা ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া দুজন হলেন- নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হক (৩২) ও উপজেলার মানিকপুরের বাসিন্দা মনু মিয়া (৪৫)।
পটুয়াখালী
বিকেলে দশমিনা উপজেলা সদর ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে গরু নিয়ে ফেরার পথে বজ্রপাতে মো. আবদুর রব হাওলাদার (৬০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় একটি গরুও মারা যায়। কৃষক হাওলাদার ওই গ্রামের আবদুল আলী হাওলাদারের ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফসলের মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফেরার সময় বজ্রপাতে মারা যান কৃষক আবদুর রব হাওলাদার। এ সময় তার গরুটিও মারা যায়।
নওগাঁ
রানীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ভবানিপুর গ্রামে ক্ষেত থেকে ভুট্টা ওঠানোর সময় বজ্রপাতে জামিল হোসেন (২২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। জামিল একই গ্রামের মৃত আজাদ হোসেনের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের মাঠে জামিল হোসেনসহ কয়েকজন ক্ষেত থেকে ভুট্টা ওঠানোর কাজ করছিলেন। আকাশে হঠাৎ মেঘ জমে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন জামিল। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। যুবকের পরিবার মরদেহ নিয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ
দুপুরে ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুইন্দা খলাপাড়া গ্রামে বজ্রপাতে কাজী জিল্লুর রহমান (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। জিল্লুর ভৈরব পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার মৃত কাজী গোলাপ মিয়ার ছেলে। তিনি পৌর শহরের জগন্নাথপুর লক্ষ্মীপুর মাক্কু মোল্লা ফুড কারখানায় চাকরি করতেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মোস্তফা মিয়া বলেন, কারখানা সংস্কার কাজের জন্য ইট খুঁজতে উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুইন্দা এলাকার ইটভাটায় মোটরসাইকেলযোগে যান জিল্লুর। ফেরার পথে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন তিনি। স্থানীয়রা তাকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহরাব হোসাইন বলেন, জিল্লু মিয়াকে হাসপাতালে আনার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। বজ্রপাতের কারণেই তিনি মারা গেছেন। শরীরে বজ্রপাতে ক্ষতের চিহ্ন আছে।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। এ বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
কেআই//