উপ-নির্বাচন
রাত পোহালে সন্দ্বীপে ভোট
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৪৫ পিএম, ২৪ মে ২০২৩ বুধবার | আপডেট: ০৯:২৬ পিএম, ২৪ মে ২০২৩ বুধবার
রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের এলাকা হওয়ায় এ নির্বাচনকে নিয়ে সবার সতর্ক ও বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে সমর্থকদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণায় সরগরম গোটা সন্দ্বীপ। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এরইমধ্যে জোরদার করা হয়েছে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল।
এই উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৪ জন প্রার্থী। নৌকা প্রতীক নিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন মিশন, আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, মশাল প্রতীক নিয়ে জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, ও দোয়াত প্রতীক নিয়ে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান বেলাল।
গতকাল ২৩ মে মঙ্গলবার আনারস প্রতীককে সমর্থন দিয়ে মশাল ও দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন এখানকার নির্বাচন খুব সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছেন।
নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শেষ হয়েছে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যা যা করা দরকার তা-ই করা হবে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসতে পারে এবং কেন্দ্রের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাচনে ৭৯৭ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া মোতায়েন করা হবে ৬ প্লাটুন বিজিবি ও ৫ প্লাটুন কোস্টগার্ড।
তিনি আরও বলেন, আজ বুধবার (২৪ মে) ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের ব্যালট ছাড়া নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে স্ব-স্ব কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে রাতের পরিবর্তে ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, সন্দ্বীপের ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সন্দ্বীপ উপজেলা। মোট ৮৬টি কেন্দ্রের ৫৭২টি বুথে ১ লাখ ২১ হাজার ৭৩৫ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৫ জন মহিলাসহ মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১০ জন ভোটার ভোট প্রয়োগ করবেন।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারে মাইক ভাংচুর, কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, ভোটারদের হুমকি, প্রচার প্রচারণায় বাধাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন প্রার্থীরা। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনে ৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। ইভিএম এবং সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর দাবিতে নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারের কাছে চিঠিও দিয়েছেন কয়েকজন প্রার্থী।
নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে জমজমাট প্রচার প্রচারণা ছিল লক্ষণীয়। তবে অভিযোগও কম ছিল না।
আনারস প্রতীকে নাগরিক কমিটির স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, 'দেশের সব উপ-নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হচ্ছে। কিন্তু সন্দ্বীপে কেন ব্যালটে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা শংকিত অবস্থায় আছি। ইতিমধ্যে আমার বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থকের ওপর হামলা হয়েছে, মাইক ভাংচুর করেছে।'
প্রত্যাহার করা অন্য দুই প্রার্থী বলেন, সন্দ্বীপ সিইসি’র গ্রামের বাড়ি। এখানে যদি ভোট চুরি হয়, তাহলে মানুষ হতাশ হয়ে যাবে। মানুষের আস্থা কমে যাবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে এসব বিষয় আলোচনায় আসবে।
পরদিন ২৩ মে মঙ্গলবার উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলাউদ্দিন বেদন বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আনারস প্রতীকের প্রার্থী বিএনপির মতো নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। তিনি নৌকার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাঈন উদ্দিন মিশন বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে যে উন্নয়ন করেছেন, সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় মাহফুজুর রহমান মিতা এমপির মাধ্যমে সন্দ্বীপে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সেটার প্রত্যক্ষ সাক্ষী আপনারা। উন্নয়নের এই ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য আগামি ২৫ মে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে জয় যুক্ত করবেন সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আনারস প্রতীকের প্রার্থী যেসব অভিযোগ করেছেন সেটা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।'
এদিকে মগধরা ইউনিয়নের ঘোলশহর বাজারে নির্বাচনী প্রচারণার পথসভায় উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য মঙ্গলবার সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলমগীর মগধরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম সমিরকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে দুটি গ্রুপে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এক অংশ কাজ করছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে অপরটি কাজ করছেন আনারসের পক্ষে। সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেই।
এরই মধ্যে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে আনারসের নির্বাচন করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাজিবুল আহসান সুমনকে অব্যাহতি প্রদান করেছে। একইভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আকবর এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোশাররফ হোসেন লিটন এবং সদস্য মিজানুর রহমানকে কমিটি থেকে অব্যাহতি প্রদান করে।
এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সন্তোষপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান ফুলমিয়া, আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও আমানউল্লা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাত চৌধুরীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাবেক পদধারী বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন আনারসের পক্ষে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের লড়াইয়ে শেষ দিকে এসে নির্বাচনী মাঠে নতুন করে নানা হিসাব-নিকেশ শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার শাহজাহান বি.এ'র মৃত্যুর পর নির্বাচন কমিশন এ পদ শুন্য ঘোষণা করেন। যার ফলে আইন অনুযায়ী আগামীকাল ২৫ মে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
কেআই//