ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

রাতে মাটি নিয়ে ইটভাটায় যাচ্ছিল ট্রাক্টর, পথে ভ্যানচালককে চাপা

রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:৩৪ এএম, ২৫ মে ২০২৩ বৃহস্পতিবার

রাজশাহীর বাগমারায় রাতের আঁধারে অবৈধভাবে পুকুর খনন করে মাটি বহনের সময় ট্রাক্টর চাপায় ফজলুর রহমান শাহ (৫২) নামের এক অটোভ্যান চালক নিহত হয়েছেন। 

বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাটি ঘটে উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের রামরামা প্রেমতলী এলাকায়। 

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর জন্য নিহতের লাশ থানায় নেয়া হয়। 

এ ঘটনায় রাতেই থানায় মামলা হয়েছে। নিহতের মেয়ে নুসরাত জাহান বাদি হয়ে বাগমারা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ট্রাক্টর চালকসহ দুইজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন, ট্রাক্টর চালক মুনছের আলী ও পুকুর মালিক ইয়াছিন আলী। তাদের দুইজনের বাড়িই রামরামা গ্রামে।

নিহত ফজলুর রহমান সাজুড়িয়া গ্রামের মৃত শেফাতুল্লাহ শাহর ছেলে। ভ্যানচালক ফজলুর শারিরীক প্রতিবন্ধি ছিলেন। তার তিন মেয়ে। তারা স্কুল ও কলেজে লেখাপড়া করে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক সপ্তাহ থেকে রাতের আঁধারে প্রেমতলী মোড়ের পাশেই অবৈধভাবে পুকুর খনন করছিলেন রামরামা গ্রামের ইয়াছিন আলী। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে পুকুর খনন করে আসছিল। অতি লাভের আশায় পুকুর খননের মাটি আধা কিলোমিটার দূরে আব্দুস সোবহানের ইটভাটায় বিক্রি করে। 
প্রতিদিনের ন্যায় বুধবার রাতেও পুকুর খননের কাজ চলছিল। পুকুরের সেই মাটি ইটভাটায় বহনের সময় বেপরোয়া ট্রাক্টর ভ্যানচালক ফজলুকে পিছন থেকে চাপা দেয়। এ সময় তার মাথার উপর দিয়ে ট্রাক্টরের চাকা চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান ফজলু। তিনি ভ্যান নিয়ে তাহেরপুর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন।

ঘটনার পরই ট্রাক্টর নিয়ে দ্রুত চলে যায় চালক মুনছের আলী মৃধা। তিনি সোবহানের ভাটায় ট্রাক্টর রেখে পালিয়ে যান। 

বাগমারা থানায় তাহেরপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই জিলালুর রহমান বলেন, ভ্যানচালককে চাপা দেয়ার ঘটনায় ট্রাক্টর জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে যাওয়ায় ধরা সম্ভব হয়নি। তাকে ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, লাশ উদ্ধার করে রাতেই থানায় নেয়া হয়। সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে। এরপর পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুকুর খননে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটার তোয়াক্কা না করে দিব্যি রাতের আঁধারেগোপনে পুকুর খনন করে আসছিলেন ইয়াছিন আলী। আর মাটির দাম বেশি হওয়ায় তা বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করেন।

স্থানীয়রা জানান, রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা না করায় বেপরোয়া উঠেছে এক শ্রেণীর অসাধু চক্র। ক্ষমতার জোর দেখিয়ে তারা অবৈধভাবে পুকুর খনন কাজ চালিয়ে থাকে। এর আগে গত ১১ মার্চ গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের কনোপাড়া গ্রামে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে পুকুর খননের মাঠি বহনের সময় ট্রাক্টর উল্টে একজন নিহত হয়।

বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম আবু সুফিয়ান বলেন, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতে পুকুর খনন করতে গিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত কেন তারা পুকুর খননের মাটি বিক্রয় করছে সেটা জানা নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে পুকুর খননকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

এএইচ