ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

আসছে নতুন বাজেট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৪৭ পিএম, ৩০ মে ২০২৩ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৪:২৬ পিএম, ৩০ মে ২০২৩ মঙ্গলবার

দরজায় কড়া নাড়ছে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট। দেশের ৫২ তম বাজেট কেমন হতে চলেছে, চলুন জেনে নিই এক নজরে। 

বাজেট হচ্ছে একটি দেশের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব। যেমন একটি সংসারের আয় ব্যয়ের হিসাব হয় ঠিক তেমনি। তবে ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের বাজেটের একটি মৌলিক পার্থক্য আছে।

ব্যক্তি আগে আয় কত হবে, সেটি ঠিক করেন, তারপর ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্র করে ঠিক উল্টোটা, আগে ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করে। এরপর ঠিক করে, কোথা থেকে অর্থ আসবে।

অর্থাৎ সরকার ব্যয় বুঝে আয় করে, আর ব্যক্তি আয় বুঝে ব্যয় করেন। এক্ষেত্রে খরচের সাথে আয়ের সামঞ্জস্য না হলে রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্র অথবা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ ধার করতে পারে, তবে তা ফেরতযোগ্য। 

সরকার মূলত কী করে? সরকার দেশ চালায়। দেশ চালাতে যে লোকবল প্রয়োজন তাদের বেতন দিতে হয় সরকারকে, এটি সরকারের একটি খরচের খাত। আবার প্রতিটি নাগরিকের জন্য রাস্তাঘাট বানানোসহ যে সকল উন্নয়ন কাজ করা হয় সেটিও একটি খরচের খাত। এটিকে বলা হয় উন্নয়ন বাজেট। এমন প্রতিটি খরচের খাত নির্ধারণ করা হয় এবং কোথায় কত অর্থ ব্যয় করা হবে তা নির্ধারণ করা হয়।

এরপর এই খরচ কোথা থেকে আসবে সেটি নির্ধারণ করা হয়। এই খরচের বেশিরভাগ আসে জনগণের কর অথবা রাজস্ব থেকে। আবার রাজস্ব বহির্ভূতভাবেও সরকার আয় করে থাকে। এরপরে যদি ঘাটতি থেকে থাকে তাহলে তা পূরণে সরকার জনসাধারণের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে, বৈদেশিক ঋণ অথবা অনুদান নিতে পারে। এছাড়া সরকার চাইলে নতুন অর্থ সৃষ্টি করতে পারে। 

মহামারির কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে পরপর দুই বছর অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছিল, সেটা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে কাটিয়ে ওঠার চেষ্ঠা হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন  যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বের অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়েছে, বাংলাদেশের মতো অনেক দেশে ডলার সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। 

বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ছিলো ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাহুল্য ব্যয় পরিহার করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার নির্দেশনা আগে থেকেই দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই এটি নির্বাচনী বছর হলেও জনসন্তুষ্টিমূলক কোন ব্যয় এই বাজেটে থাকছে না। 

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ জুন জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। 

এবারে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এতে করে আসছে বাজেটে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৫ শতাংশ যা গত বছরের তুলনায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। 
আগামী বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকে ৯৪ হাজার কোটি টাকা, বিভিন্ন অনুদান ও বাজেট সহয়তা ফান্ড থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা, দেশীয় ব্যাংক থেকে ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা এবং জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও অন্যান্য খাত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি মেটাতে পাওয়া যাবে বলে আশা করছে সরকারের অর্থ বিভাগ।

নতুন অর্থবছর মোট দেশজ প্রবৃদ্ধির হার ৭.৫% এবং মূল্যস্ফীতির হার ৬.৫% প্রাক্কলনের তথ্য জানিয়েছে অর্থবিভাগ। 
আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মূল্যস্ফীতিকে। এছাড়া, রফতানি ও প্রবাসী আয় বাড়ানোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উন্নয়ন, আইএমএফ এর শর্ত অনুযায়ী ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ০.৫০% বাড়ানো, এক লাখ কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি এবং সরকারি ঋণের সুদব্যয় যোগান নিশ্চিত করাকে আগামী অর্থবছরের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেছে অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী, আসছে বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকবে ২.৬৩ লাখ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারের পরিচালন ব্যয়খাতে বরাদ্দ হবে। উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বরাদ্দ থাকবে ১.৬৯ লাখ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ব্যয় হবে ৯৪ হাজার কোটি টাকা।

পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় ৭৭,০০০ কোটি টাকা, পণ্য ও সেবা ক্রয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা, ঋণের সুদ পরিশোধে ১.১০ লাখ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ১.১৮ লাখ কোটি টাকা এবং ভর্তুকি ও প্রণোদনায় ১.০৫ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে অর্থবিভাগ, যে প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাজেটের আকার প্রতি বছরই বাড়ে, এবারেও বেড়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। উন্নয়নশীল দেশের জন্য বাজেটের আকার বড় হওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে এর সুফল তখনই পাওয়া যাবে যখন বাজেটের আয় ব্যয় খাত সঠিকভাবে সমন্বয় করা হবে। 

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, “এবারের বাজেটে সরকারের সামনে অনেকগুলোচ্যালেঞ্জ আছে। অতিরিক্ত খরচ এড়িয়ে চলা, এখনই প্রয়োজন হবেনা এমন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ না করা, আবার দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা এই বাজেটের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। 

এক নজরে দেশের সব বাজেট (১৯৭২-৭৩ থেকে ২০২২-২৩)


অর্থবছর – বাজেট পেশের তারিখ- বাজেট উত্থাপক - বাজেটের আকার

এসবি/