শার্শায় মুখিকচু চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের
বেনাপোল প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:৫৭ পিএম, ৩০ মে ২০২৩ মঙ্গলবার
লাভজনক হওয়ায় যশোরের শার্শায় মুখিকচু (সারকচু) চাষে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকরা। কচু চাষে তুলনামূলক রোগবালাই ও সার প্রয়োজন কম, উৎপাদন ভাল ও স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। মৌসুমি এই কাজে খণ্ডকালিন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় নিন্মআয়ের মানুষের বাড়তি আয়ের ব্যবস্থাও হয়েছে।
সব মিলিয়ে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় প্রতি মৌসুমে বৃদ্ধি পাচ্ছে মুখিকচু চাষ। কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের নিয়মিত উৎসাহ ও পরার্মশ প্রদান করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর শার্শা উপজেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে মুখিকচু সবজি চাষ হয়েছে। অল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর ৫ হেক্টর বেশি জমিতে মুখিকচুর চাষ হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নে ৮৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে কেরালখালী-বাসাবাড়ি, বসন্তপুর-পাড়িয়ারঘোপ, কন্দর্পপুর-ভায়না এলাকাতেই ৫০ হেক্টর জমিতে মুখি কচুর চাষ হয়েছে।
উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, শত শত বিঘার দেশি ও উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড জাতের মুখিকচুর চাষ করা হয়েছে। সেই কচুর সবুজ পাতা-গাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে। দেখে মনে হয় এ যেন সবুজের সমারোহ।
কথা হয় বাসাবাড়ি বাজারে পাড়িয়ারঘোপ গ্রামের মুখিকচু চাষি সিদ্দিক বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বছর তিনি সাড়ে চার বিঘা জমিতে মুখিকচু চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং তেমন কোন রোগবালাই না হওয়ায় প্রতি বিঘায় আনুমানিক ৭০-৮০ মণ কচু উৎপাদনের আশা প্রকাশ করছেন, এতে সব খরচ বাদ দিয়ে দুই লক্ষাধিক টাকার লাভবান হবেন তিনি।
পাড়িয়ারঘোপের আবু জাফর ও আবদুল্লাহ, কেরালখালির বাবু, মিজান, তোতা, ইমরান, সালাম ও বিপ্লব, ভায়নার আজগার, বসন্তপুরের সাধন ও নৈহাটি গ্রামের তবিসহ বেশ কয়েকজন বড় চাষির সঙ্গে।
তারা সকলে জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের উৎসাহ ও পরামর্শ অনুযায়ী মুখিকচু চাষ করে তারা সকলেই গত বছর বেশ লাভবান হয়েছিলেন। এ বছরও তারা চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভাল থাকায় এ বছর কচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন এবং সেই সাথে ভাল দাম পাবারও আশা করছেন তারা।
ধান অপেক্ষা কচু চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় এই অঞ্চলের চাষিদের মধ্যে মৌসুমি ভিত্তিক আগ্রহ বাড়ছে। এ কাজে এলাকার নিন্মআয়ের পরিবারের সদস্যরা কচু উৎপাদনে পরিচর্যা, জমিতে কচু তোলা, পরিষ্কার, ও পরিবহনে খন্ডকালিন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় বাড়তি অর্থ উপার্জন করে কিছুটা সাবলম্বী হচ্ছেন।
ভায়না গ্রামের গোলাম হোসেন বলেন, তিনি এ বছর দেড় বিঘা জমিতে মুখিকচুর চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি আগাম কচু তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। কেজি প্রতি দাম ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কাটায় তিন মণ কচু পাচ্ছেন। কচুর দাম ও ভাল ফলন পেয়ে তিনি খুব খুশি।
বাসাবাড়ি বাজারের হালিমা ট্রেডার্সের মালিক কচুর আড়ৎদার শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে চাষিরা পুরোদমে মাঠের উৎপাদনকৃত মুখিকচু না উঠালেও স্থানীয় বাজারগুলোতে ইতিমধ্যে কয়েকজন কৃষক কচু তুলতে শুরু করেছেন। শুরুতে দামও বেশ চড়া। আগামি এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই পুরোদমে বাসাবাড়ি পাইকারি বাজারে শত শত মণ কচু উঠতে শুরু করবে।
নিজামপুর ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা অসিত কুমার মন্ডল বলেন, মুখিকচু সবজি চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা ও নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মালের গ্রেডিং বিষয়ে ধারণাসহ উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য পাইকারি বাজার সৃষ্টি করণে কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এই অঞ্চলের চাষিদের মুখিকচু চাষ সরাসরি দেখতে ইতিমধ্যে জেলার অন্য উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা সেখানকার চাষিদের সাথে নিয়ে সরেজমিন মাঠ পরিদর্শন করে গেছেন।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মন্ডল বলেন, মুখিকচু চাষে কোন মাঠ প্রদর্শনী নেই। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা থাকবে। সব সময় সরকার সব কিছু দেন না। যখন যেটা দেন আমরা সেটা চাষিদের দিয়ে থাকি।
এএইচ