সন্দ্বীপের সৌন্দর্য নিয়ে আলাউদ্দিন মাহমুদ সমীরের গান
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৪৮ পিএম, ৭ জুন ২০২৩ বুধবার | আপডেট: ০৩:৫৯ পিএম, ৭ জুন ২০২৩ বুধবার
‘সাগর কন্যা’ খ্যাত সবুজে ভরা, অপরূপ এক দ্বীপ, সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের প্রিয় সন্দ্বীপ।
ভাঙ্গা গড়া নিয়ে আজও বেঁচে আছে অবিনশ্বর এই দ্বীপ। গানটি লেখা ও সুরারোপ করেছেন সন্দ্বীপের কৃতি সন্তান আলাউদ্দীন মাহমুদ সমীর।
সন্দ্বীপের প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপূর্ব চিত্রায়ন গানটিতে প্রাধান্য পেয়েছে, একই সঙ্গে ইতিহাস, ঐতিহ্যের তীর্থস্থান সন্দ্বীপের বরেন্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রাচীন এই জনপদের ইতিহাস ঐতিহ্য রূপ-লাবণ্য গানটিতে চমৎকারভাবে প্রাধান্য পেয়েছে সুরকার এবং গীতিকার সমীরের লেখায়। ইতো মধ্যে গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দেশে-বিদেশে সন্দ্বিপিদের মাঝে গানটি প্রিয় জন্মস্থান সন্দ্বীপের প্রতি স্মৃতিকাতর করেছে।
আলাউদ্দীন মাহমুদ সমীর এর জন্ম চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের কাটগড় ইউনিয়নে। তার বাবা সন্দ্বীপের ষাট ও সত্তর দশকের শীর্ষ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মরহুম মাহমুদুল হকের হাতে সমীরের সঙ্গীতে হাতেখড়ি। চট্টগ্রামে আর্য্য সঙ্গীতে দুই বছর এবং ঢাকায় বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে পাঁচ বছর সঙ্গীত অধ্যায়ন করেন তিনি। এরপর অনেক দিন ওস্তাদ করিম শাহাবুদ্দিনের সংস্পর্শে থেকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত চর্চ্চা চালিয়ে যান। সেই সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন ঢাকায় গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গেও। সমীরের সুরে কলকাতার বিখ্যাত শিল্পী শুভমিতা এবং বাংলাদেশের তপন চৌধুরী, রফিকুল আলম, শাকিল খান, স্বরলিপি, রাজীব, অপু সহ অনেকেই গান করেছেন। কয়েকটি সিনেমা এবং নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি৷ পেশাগত জীবনে আলাউদ্দীন মাহমুদ সমীর বর্তমানে বেক্সিমকোর নির্বাহী এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে কর্মরত আছেন।
দেশের একজন শীর্ষ কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব সমীরের মনোজগতের উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে রেখেছে প্রিয় জম্মভূমি সন্দ্বীপ। তাই নিজ জম্মভূমিকে সঙ্গীতের মাধ্যমে তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন ‘সাগর কন্যা সন্দ্বীপ’ মিউজিক ভিডিও’র মাধ্যমে। গানটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন সুমন কল্যাণ।
সমীরের পিতা মরহুম মাহমুদল হক ছিলেন ষাট এবং সত্তর দশকে সন্দ্বীপের শিল্প সাংস্কৃতির অন্যতম পুরোধা ব্যাক্তিত্ব। বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী মাহমুদুল হক ছিলেন, একাধারে গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত শিক্ষক, নাট্যকার, নাট্য নির্দেশক এবং চিত্রশিল্পী। উনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক গান লিখেন। তৎকালীন সন্দ্বীপের শিল্পীদের দিয়ে কলা ভবন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্লাবে নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মাহমুদুল হকের রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ 'ভাঙ্গনের তীরে' নাটকটি তখন ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। উনার শিষ্যদের কেউ কেউ এখনও সন্দ্বীপের শিল্প সংস্কৃতিকর জগতে সক্রিয় আছেন।
বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সন্দ্বীপ সন্দর্শন’ এ মরহুম মাহমুদুল হকের লেখা প্রবন্ধ ’পাইন্যা সাইর’ অবলম্বনে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন সন্দ্বীপ বিশারদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাজিব হুমায়ুন। মাহমুদুল হকের লিখা অর্ধশতাধিক গান বাংলাদেশ টেলিভিশনে তালিকাভূক্ত।
গানটি সম্পর্কে গীতিকার ও সুরকার আলাউদ্দিন মাহমুদ সমীর বলেন, আমাকে সন্দ্বীপের কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী সন্দ্বীপকে নিয়ে একটি গান তৈরী করতে বললেন। তবে আমি মুলত সুর করি। আমার সাথে যেসব প্রখ্যাত গীতিকাররা কাজ করেন তারা কেউই সন্দ্বীপের না। সন্দ্বীপ সম্পর্কে উনারা তেমন জানেন না। তাই বাধ্য হয়ে আমি নিজেই লিখে ফেললাম। সাগর বেষ্টিত সন্দ্বীপ হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সন্দ্বীপে অনেক গুণীজন জন্মগ্রহণ করেছেন। জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম সন্দ্বীপ বেড়াতে এসেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সন্দ্বীপের কৃতি সন্তানদের অবদান অনেক। গানের সীমিত পরিসরে অল্প কথায় এসব তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং সুর করার সময়ও যেন দেশাত্মবোধক আবহটা থাকে সে চেষ্টা করেছি।
উল্লেখ্য, গানটিতে কন্ঠ দিয়েছেন, শাকিল খান, সুমন কল্যাণ, সুরকার আলাউদ্দীন মাহমুদ সমীর, আজিম মাহমুদ সুমন, কৃষ্ণা আচার্যী, শুক্লা আচার্যী এবং জাহানারা মনসুর।
কেআই//