এনবিআর বনাম আইনজীবীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ!
রুহুল আমিন
প্রকাশিত : ১০:৫২ এএম, ৮ জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার
দুটি দাবিতে আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে (এনবিআর কার্যালয়) আয়কর আইনজীবীদের পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল গতকাল বুধবার। দাবি দুটি হল, কর এজেন্ট নিয়োগ বিধিমালা বাতিল ও নতুন রাজস্ব ভবনে কর আইনজীবীদের সংগঠন বারের জন্য অফিস কক্ষ বরাদ্দ দেয়া।
এই আন্দোলন বিষয়ে এনবিআরের কৌশল ছিল আইনজীবীদের ভবনে প্রবেশ করতে না দেয়া। আইনজীবীরা সড়কে বিক্ষোভ করে চলে যাবেন। এ লক্ষ্যে এনবিআর নিরাপত্তা জন্য নিজস্ব কর্মচারীদের পাশাপাশি অতিরিক্ত আনসার ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে।
ভবন এলাকায় প্রবেশে বাধা পেয়ে আইনজীবীরা সড়কে অবস্থান নিতে থাকেন। পৌনে দশটার দিকে কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী একটি গাড়ি নিয়ে এনবিআরে ঢোকার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে দুপক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। বাধা উপেক্ষা করে আইনজীবীরা দুটি গেট পেরিয়ে ভবনে প্রবেশ করে। তবে নিরাপত্তা গেট বন্ধ থাকায় তারা ভবনের ওপরে উঠতে পারেননি।
এরপর তারা মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। নেতারা তাদের বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যানের প্রতি তীব্র ক্রোধ উগড়ে দেন। মাইকে অশ্রাব্য, অশালীন ভাষায় গালাগালি করতে থাকেন। গালিগালাজ এতটাই বাজে ছিল যে, তা প্রচারের অযোগ্য। এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা রকম প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন তারা নিয়ে আসেন। প্রায় সব আইনজীবী, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ক্ষোভ উগড়ে দেন।
তাদের মধ্যে একজন সাবেক সংসদ সদস্যও ছিলেন। তার মুখের ভাষাও প্রচারের যোগ্য। বিক্ষোভের শেষ পর্যায়ে তারা এনবিআর চেয়ারম্যানের কুশপুত্তলিকায় আগুন ধরিয়ে দেয়। একজন উচ্চপদস্থ আমলার বিরুদ্ধে অংশীজনেরা এতটাই খারাপ ভাষা ব্যবহার করেছে যেটা আমার কল্পনায়ও আসেনি।
আইনজীবীদের ভাষায় ক্ষোভের অন্যতম কারণ, নতুন ভবনে তাদের অফিসের জন্য স্থান দেননি এনবিআর চেয়ারম্যান। তাদের মতে এনবিআরের আচরণ, অংশীজনদের পাত্তা না দেয়ায় ক্ষোভের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অফিস দেয়া না দেয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রতিবাদ থাকতে পারে সেটা প্রকাশের একটা যৌক্তিক সীমারেখা ও থাকতে হবে।
এনবিআরের কাজের ধরন নিয়ে অনেকের অভিযোগ থাকতে পারে। সবাইকে খুশি রেখে এনবিআরের কাংখিত সাফল্য অর্জন করতে পারবে না। এখন তো চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যেমন বাড়ছে আবার বাজার স্থিতিশীল রাখতে করছাড়ও দিতে হচ্ছে। এখানে একটু বলে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন কৌশলী, সৃজনশীল উদ্যোগ। না হলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কঠিন হয়ে পড়ে। আইনজীবী, গণমাধ্যম কর্মী বা বড় বড় ব্যবসায়ীদের প্রতি খারাপ সম্পর্ক বা আচরণ ভালো কাজের বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। দুষ্টু লোকেরা ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে ওত পেতে থাকে। অতীতে গোলমাল বাঁধিয়ে অনেক উদ্যোগ থামিয়ে দিয়েছিল।
কর আইনজীবীদের নিয়ে এনবিআরের কর্মচারীদের অভিযোগ কম নয়। এনবিআরের কর্মচারীরা আইনজীবীদের দ্বারা অপদস্ত হন বলে অভিযোগ আছে। একজন কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ আছে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে। তারা নাকি, একজন সদস্যকে পুরান রাজস্ব ভবনের বার অফিসে আটকে রেখেছিলেন। ইত্যাদি নানা কারণে আইনজীবীদের প্রতি এনবিআরের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা নাখোশ। এজন্য নতুন ভবনে বারের যায়গা দেয়া হচ্ছেনা বলেও জানান তারা।
সবমিলিয়ে বলা যায়, কর আইনজীবী ও এনবিআর সম্পর্ক চরম অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। যা মোটেও কল্যাণকর নয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতা শুধু রাজস্বের স্বার্থে জরুরি নয়। বরং আদর্শ সমাজ গঠনের জন্যও জরুরি।
বুধবারের ঘটনায় যা বোঝা যায়, আইনজীবীরা আগে থেকেই সহিংস মনোভাব ও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। অন্তত তাদের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও কুশপুত্তলিকা দেখে তাই বোঝা যায়। তবে এনবিআরের মনোভাব ততটা কঠোর ছিল না। এনবিআর কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল, তারা সড়কে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করবেন। শেষে তারা হয়তো চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে চলে যাবেন। কিন্ত পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয় যে, আইনজীবীরা স্মারকলিপি দিতে পারেননি। নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তাদের বিদায় নিতে হয়েছে।
আয়কর আইনজীবীরা রাজস্ব আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। তাই তাদের যৌক্তিক দাবিদাওয়া এনবিআরের শোনা উচিত। আলোচনা করা উচিত। একইভাবে আয়কর আইনজীবীদেরও নিজেদের পেশার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ধরে রাখতে সংযত হতে হবে। রাজস্ব আদায়ে কাজ অত্যন্ত সেনসিটিভ৷ এনবিআর এরকম ঘটনা আমি গত সাত বছরে দেখিনি। আই আন্দোলনের কারণে এনবিআরে প্রায় দুই ঘণ্টা সেবাবঞ্চিত হয় অনেক করদাতা।
কর এজেন্ট নিয়োগ কতটা ফলপ্রসূ হবে, এনবিআরের ভেবে দেখা উচিত।
এএইচ