রক্ত দান একটি গর্বের বিষয়
মাহতাব মিনহাজ
প্রকাশিত : ০৬:১২ পিএম, ১৩ জুন ২০২৩ মঙ্গলবার
রক্ত দান মানে জীবন দান। রক্ত দানের মতো এমন মহৎ কাজ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। আপনার দেওয়া রক্ত একজন মৃত্যু পথযাত্রী মানুষকে নতুন জীবন দান করতে পারে। রক্ত দিয়ে স্থাপিত বন্ধন এবং সম্পর্ক গুলো অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বন্ধন এবং সম্পর্কের চেয়ে অনেক বেশি দামি।
রক্ত মানবদেহের একটি অপরিহার্য উপাদান । রক্ত মানবদেহে সঞ্জীবনী শক্তি দান করে এবং জীবনধারাকে অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে । কোনো রোগভোগের কারণে বা দুর্ঘটনা ঘটলে দেহ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে শরীরে রক্তের ঘাটতি পড়ে । সেই ঘাটতি পূরণের জন্য রক্তের প্রয়োজন হয় । মানবদেহে অন্য কোনো প্রাণীর রক্ত দেওয়া যায় না এবং কোনো রাসায়নিক পদ্ধতিতে রক্ত তৈরীও করা যায় না । মানুষের রক্তই মানবদেহে সঞ্চারিত করতে হয় । তাই রক্তের প্রয়োজনে মানুষ মানুষের কাছেই ছুটে আসে। সতেজ ও বিশুদ্ধ রক্তের ছোঁয়ায় মুমূর্ষু মানুষ প্রাণ ফিরে পায় ।
বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে বহু জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধি সহজেই নিরাময় হচ্ছে । মুমূর্ষু রোগীর দেহে রক্ত সঞ্চালন করে অনেক রোগ সারানো হয় । কিন্তু যে-কোনো মানুষের রক্ত নির্বিচারে অন্য মানুষের দেহে সঞ্চালিত করা যায় না । কারণ রক্তের উপাদান এক হলেও ব্যক্তিভেদে তার তারতম্য ঘটে । ভিয়েনার চিকিৎসাবিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ১৯০১ সালে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে অনেক গবেষণা করে মানুষের রক্তকে চারটি গ্রুপে বিভক্ত করেন । এগুলো হলো A , B , AB এবং O গ্রুপ। রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে সুস্থ ব্যক্তির দেহের রক্ত নিয়ে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সঞ্চালিত করা হয় ।
প্রতিবছরের মতো এবারও ১৪ জুন পালিত হবে বিশ্ব রক্তদান দিবস। থ্যালাসেমিয়া রোগীসহ অগণিত মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে যেসব হৃদয়বান স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন, তাদের দানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং উদ্বুদ্ধ করতে বিশ্বজুড়ে এ দিবসটি পালন করা হয়।
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হবে দিবসটি। দেশে রক্তের চাহিদা পূরণে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে থাকবে নানা কর্মসূচি।
এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘রক্ত দান করুন, দান করুন প্লাজমা, যতবার সম্ভব গ্রহণ করুন জীবন বাঁচানোর এ অনন্য সুযোগ’। আন্তর্জাতিকভাবে এবছর বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজক দেশ আলজেরিয়া।
আমাদের দেশে দিবসটি পালনে সরকারি নানা উদ্যোগের পাশাপাশি এবারও এগিয়ে আসছে সাড়ে চার লক্ষাধিক সুসংগঠিত ডোনার পুল নিয়ে গঠিত কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি ভবনে দেশে প্রথমবারের মতো দুই শতাধিক স্বেচ্ছা রক্তদাতা ও দুই শতাধিক থ্যালাসেমিক রক্তগ্রহীতার মিলনমেলা এবং বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করছে কোয়ান্টাম। স্বেচ্ছা রক্তদাতারা নীরবে তাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ রক্ত দান করে যান। রক্তদানের সময় তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জানেনও না, এ রক্ত কোন মানুষটির শরীরে বইবে। একইভাবে রোগীদের কাছেও অচেনা থেকে যান রক্তদাতারা। দাতা-গ্রহীতার আনন্দ আর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের এমন মেলবন্ধনে উদ্বুদ্ধ হবেন নতুন রক্তদাতারা, এমনই আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।
আমাদের দেশে রক্ত চাহিদার একটা বড় অংশ প্রয়োজন হয় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য। হেমাটোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ সূত্রে জানা যায়, দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে এক কোটি সত্তর লাখেরও অধিক মানুষ। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর প্রতি মাসে ১ থেকে ৩ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। থ্যালাসেমিয়া ছাড়াও রক্তস্বল্পতা, প্রসূতির রক্তক্ষরণ, অগ্নিদগ্ধ রোগী, বড় অপারেশন, দুর্ঘটনা ইত্যাদি নানা কারণে রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্তের এ চাহিদা পূরণে নতুন স্বেচ্ছা রক্তদাতার কোনো বিকল্প নেই। সাধারণত ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যেকোনো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ সক্ষম ব্যক্তি প্রতি চার মাস পরপর রক্ত দিতে পারেন।
প্রসঙ্গত, আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ৮-১০ লাখ ব্যাগ রক্ত ও রক্ত উপাদানের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে কোয়ান্টাম বছরে সরবরাহ করে এক লক্ষাধিক ব্যাগ। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দশকের যাত্রায় কোয়ান্টাম গড়ে তুলেছে ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার স্বেচ্ছা রক্তদাতার সুসংগঠিত ডোনার পুল। আর জীবন বাঁচানোর জন্যে এ পর্যন্ত সরবরাহ করেছে ১৫ লক্ষাধিক ইউনিট রক্ত ও রক্ত উপাদান।
এমএম//