ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ১১ ১৪৩১

বিদ্রোহী ওয়াগনার নেতাদের ‘বিচারের আওতায় আনা’ হবে: পুতিন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৩৪ পিএম, ২৭ জুন ২০২৩ মঙ্গলবার

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ওয়াগনারের বিদ্রোহের পর এই গোষ্ঠীর নেতাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলেছেন যে, তারা “রাশিয়াকে রক্তক্ষয়ী সহিংসতার মাধ্যমে একটি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় দেখতে চেয়েছিলেন"।

কঠোর সমালোচনায় পূর্ণ ছোট একটি ভিডিও বার্তায়, মি. পুতিন বিদ্রোহের সংগঠকদের ‘বিচারের আওতায়’ আনার শপথের কথা জানিয়েছেন।

তবে তিনি সাধারণ ওয়াগনার যোদ্ধাদের “দেশপ্রেমিক” হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, তারা চাইলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারে, বেলারুশ যেতে পারে কিংবা ঘরে ফিরে আসতে পারে।

তিনি সরাসরি ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন এর নাম উল্লেখ করেননি।

মি. প্রিগোজিন এর আগে পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টার কথা অস্বীকার করেছেন।

ওয়াগনার হচ্ছে ভাড়াটে সেনাদের একটি বাহিনী যারা ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি লড়াই করছিলো।

ক্ষণস্থায়ী এক বিদ্রোহে ওয়াগনার যোদ্ধারা একটি গুরুত্বপূর্ণ রুশ শহরের দখল নেয়।। এরপর তারা সারিবদ্ধ সামরিক গাড়িবহর নিয়ে মস্কোর দিকে রওনা হয়। সোমবার টেলিগ্রামে প্রকাশিত ১১ মিনিটের এক অডিও বার্তায় প্রিগোজিন দাবি করেছেন যে, ওয়াগনার গোষ্ঠীর উপর সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ছিল এটি।

জুনে রাশিয়া বলে, “স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠীটিকে” প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি চুক্তি সই করতে বলা হবে, যাকে ওয়াগনারের উপর প্রিগোজিনের নিয়ন্ত্রণের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছে।

ওয়াগনারের প্রধান বলেন, এটি ছিল ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধের সময় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ভুল পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ওয়াগনার সবসময়ই রাশিয়ার স্বার্থের পক্ষেই কাজ করেছে।

বিদ্রোহ স্থগিত করার বিষয়ে একটি চুক্তিতে রাজি হওয়ার পর প্রিগোজিনের এটাই জনসমক্ষে প্রথম বক্তব্য। এই চুক্তির আওতায় তার বিরুদ্ধে সব ধরণের অপরাধের অভিযোগ প্রত্যাখ্যানের পর তার বেলারুশে চলে যাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম অবশ্য বলেছে যে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান থাকবে।

তিনি বলেন যে, ‘রুশ সেনাদের রক্তপাত বন্ধ’ করার জন্যই তিনি এই এই বিদ্রোহের ইতি টেনেছেন। তিনি আরো বলেন যে, তারা তাদের অগ্রগতি থামিয়ে দেয়ার কারণে অনেক রুশ নাগরিক হতাশা প্রকাশ করেছে।

কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, রাশিয়ার নির্বাচিত কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতাচ্যুত করার কোন অভিপ্রায় তার ছিল না।

যেহেতু তার বার্তাটি শুধু অডিও ছিল তাই তিনি কোথায় রয়েছেন এবং পরবর্তীতে তিনি কী করবেন তা কিছু জানা যায়নি।

রুশ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে তৈরি করা নিজের সংক্ষিপ্ত ভাষণে মি. পুতিন বলেন, মস্কোর উদ্দেশ্যে যারা যাত্রা শুরু করেছিল তাদরেকে “বিচারের আওতায়” আনা হবে এবং তার পুরোনো মিত্র প্রিগোজিন রাশিয়ার ‘পিঠে ছুরি মেরেছে’ বলে উল্লেখ করেছেন।

এই ভাষণের মাধ্যমে তিনি তার কর্তৃত্ব পুনর্ব্যক্ত করাএবং ওয়াগনার বিদ্রোহের প্রতি তার প্রতিক্রিয়া দুর্বল ছিল- চলমান এমন সাম্প্রতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দেয়ার চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয়েছে। সংক্ষিপ্ত কিন্তু লিপিবদ্ধ সম্বোধনে তার কণ্ঠস্বর ছিল ক্রোধান্বিত; বারবারই তার ঠোঁট কুঁচকে যাচ্ছিল।

প্রেসিডেন্টের বার্তা ছিল যে, যারা এই বিদ্রোহ সংগঠিত করেছে তারা দেশ ও জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং একে রক্তপাত ও বিভক্তির মধ্যে টেনে এনে রাশিয়ার সব শত্রুদের কাজ একাই করছে।

পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ তুলেছেন যে, তারা চায় রুশরা “পরস্পরকে হত্যা করুক”। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, ওয়াগনারের বাতিল করা বিদ্রোহের সাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্রদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

মি. পুতিন বলেছেন যে, তার নিজস্ব সংকট ব্যবস্থাপনাই দুর্যোগ প্রতিহত করেছে। কিন্তু এই যুক্তি অনেকেই গ্রহণ করবেন না এবং অনেক রুশ নাগরিকই পুরো বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখেন বলে মনে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেছেন যে, ওয়াগনার গোষ্ঠীর যে সেনারা “ভ্রাতৃঘাতী রক্তপাতে” অংশ নেয়নি, তাদেরকে বেলারুশে যেতে দেয়ার ওয়াদা পালন করবেন তিনি।

“আমি ওয়াগনার গোষ্ঠীর সেই সব যোদ্ধা ও নেতাদের ধন্যবাদ জানাই যারা শুধু সঠিক সিদ্ধান্তটিই অনুসরণ করেছেন- যারা ভ্রাতৃঘাতী রক্তপাতে অংশ নেননি, তারা শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন,” তিনি বলেন।

“আজ, রাশিয়ার (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়) বা অন্য কোন সামরিক বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাথে একটি চুক্তি সই করে আপনাদের এই সেবা অব্যাহত রাখার সুযোগ রয়েছে, অথবা আপনার আপনাদের পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের কাছে ফিরে যেতে পারেন।

“যারা বেলারুশে ফিরে যেতে চান, তারা যেতে পারেন। যে ওয়াদা আমি করেছিলাম, সেটা রক্ষা করা হবে। ”

মি. পুতিন বলেন, “প্রচুর রক্তপাত ঠেকাতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে” একবারে বিদ্রোহের শুরু থেকেই এবং এর সংগঠকরা “বুঝতে পেরেছিল যে তাদের কর্মকাণ্ড অপরাধমূলক”।

তিনি রুশ সমাজের একতার প্রশংসা করেন এবং এই বিদ্রোহ শেষ করার চুক্তিটি করতে এবং পুরো পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে তার প্রচেষ্টার জন্য বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেংকোকে ধন্যবাদ জানান।

সারা দেশ তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট যে বক্তব্য দিচ্ছেন সেটির সাথে রোস্তভ শহরের শনিবারের চিত্রের মধ্যে বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ওই দিন যখন ওয়াগনার গোষ্ঠী শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তখন স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তায় যোদ্ধাদের প্রশংসা করে, তাদের বুকে টেনে নেয় এবং তাদের সাথে সেলফি তোলে।

এ কারণেই সম্ভবত মি. পুতিন ওয়াগনার সদস্যদের বের হওয়ার একটি পথ তৈরি করে দিয়েছেন এটা বলে যে তারা প্রতারিত এবং তাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে।

রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব এবং ওয়াগনার গোষ্ঠীর মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে চলা উত্তেজনার পরিণতি গত সপ্তাহান্তের বিদ্রোহ।

শুক্রবার রাতে ওয়াগনার যোদ্ধারা ইউক্রেনে স্থাপিত তাদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সীমান্ত পার হয়ে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তভ-অন-ডন যেখান থেকে রাশিয়া যুদ্ধ পরিচালনা করছিলো সেখানে প্রবেশ করলে অভ্যন্তরীণ লড়াই শুরু হয়।

এরপর তারা আঞ্চলিক সামরিক নেতৃত্ব নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং সামরিক গাড়িবহর নিয়ে উত্তরে মস্কোর দিকে যাত্রা করে।

প্রিগোজিন দাবি করেন, তার “ন্যায়ের জন্য যাত্রা” “পুরো দেশে নিরাপত্তা নিয়ে মারাত্মক সমস্যার বিষয়টিকে” সামনে এনেছে।

বিদ্রোহ শেষ করতে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করার বিষয়ে মি. লুকাশেংকোর ভূমিকার উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, এই নেতা একটি “আইনি ব্যবস্থাপনায়” থেকে ওয়াগনারদের পরিচালনা অব্যাহত রাখার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন।

ভাড়াটে যোদ্ধাদের এই নেতা বলেন, তার এই যাত্রার কারণে কিছু রুশ সেনা প্রাণ হারিয়েছে কারণ ওয়াগনার যোদ্ধারা আক্রমণরত হেলিকপ্টারগুলো ভূপাতিত করেছে।

কিন্তু তিনি আরো বলেন যে, “যুদ্ধের মাঠে একটি সেনাকেও হত্যা করা হয়নি।”

“আমরা দুঃখিত যে আমাদেরকে বিমানে আক্রমণ করতে হয়েছে, কিন্তু তারা আমাদের উপর বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করছিলো,” বলেন তিনি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসবি/