গরুর চামড়া খাওয়া হালাল, জেনে নিন রেসিপি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৫০ পিএম, ২ জুলাই ২০২৩ রবিবার | আপডেট: ০৫:৪৮ পিএম, ২ জুলাই ২০২৩ রবিবার
পশুর চামড়া সাধারণত প্রক্রিয়াজাত করে ব্যাগ, জুতা, জ্যাকেট, বেল্ট, মানিব্যাগ এগুলো বানানো হয়। তবে এই কাঁচা চামড়ার আরও একটি ব্যবহার রয়েছে। সেটি হলো, রান্না করে খাওয়া যায় কাঁচা চামড়া। বাংলাদেশে রান্না করে চামড়া খাওয়া এখনো সেভাবে জনপ্রিয়তা না পেলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর প্রচলন আছে এবং এটি হালালও বটে।
একটি গরুর চামড়া থেকে আকার ভেদে ৫ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া যেতে পারে। পরিমাণে যো নেহায়েত কম নয়। আর খাদ্যমান হিসেবেও গরুর চামড়া মন্দ নয়।
বাংলাদেশেও বৃহত্তর চট্টগ্রামের কোনো কোনো এলাকায় পশুর চামড়ার তৈরি খাবারের প্রচলন রয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে কোরবানির পশুর চামড়ার উপযুক্ত দাম ও সংরক্ষণের অভাবে বিপুল পরিমাণ পশুর চামড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে পশুর ভুঁড়ি বা খাদ্যনালীর মতো চামড়া খাদ্য হিসেবে সংস্কৃতি গড়ে উঠলে এই অপচয় রোধ করা যায় অবশ্যই।
আবার চামড়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার করলে সেই চামড়া সিন্ডিকেটওয়ালাদের কাছে কম দামে বিক্রি না করে খেয়ে ফেলা হবে অধিক লাভজনক। আর একবার যদি বাঙালি এটা খাওয়া শুরু করে দেয়; তখন মাংসের দোকানেই চামড়া কেজি দরে বিক্রি শুরু হয়ে যাবে।
আসলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে চামড়া খাওয়ার কালচার গড়ে উঠেনি বলেই এদেশে ট্যানারি শিল্প দ্রুত বেড়ে উঠেছে। অপরদিকে অন্য মুসলমান দেশগুলোতে চামড়া খেয়ে ফেলা হয় বিধায়, তাদের দেশের ট্যানারি শিল্প তেমন বেশি প্রসার লাভ করেনি। তবে হ্যাঁ, তারাও চামড়ার ট্যানারি নিয়ে কিছু কাজ করে, কিন্তু সেটা অন্য কোন উপায়ে মৃত পশুর চামড়া, ধর্মীয় উপায়ে জবাই করা পশুর চামড়া নয়।
কী কী খাদ্যগুণ রয়েছে?
প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর চামড়ায় ২২৫ কিলো ক্যালরি শক্তি থাকে। উপাদান হিসেবে এই ১০০ গ্রামে ৪৭ গ্রাম প্রোটিন, ৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম চর্বি, ০.০২ গ্রাম ফাইবার এবং ৪৫ গ্রাম পানি থাকে। গরুর চামড়ার প্রোটিন সাধারণত জিলাটিন হিসেবে থাকে। আর খুবই সামান্য পরিমাণ চর্বি থাকায় শরীরে কোনো ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।
কোন কোন অঞ্চলে খাওয়া হয় গরুর চামড়া?
বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে যেমন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়ায় মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি খাবার খেয়ে থাকেন। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় কিকিল বা নাইজেরিয়ায় পনমো খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। আর চীনে সবধরনের পশুর চামড়া দিয়ে নানা স্বাদের খাবার তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশেও বৃহত্তর চট্টগ্রামের কোনো কোনো এলাকায় পশুর চামড়ার তৈরি খাবারের প্রচলন রয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে কোরবানির পশুর চামড়ার উপযুক্ত দাম ও সংরক্ষণের অভাবে বিপুল পরিমাণ পশুর চামড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে পশুর ভুঁড়ি বা খাদ্যনালীর মতো চামড়া খাদ্য হিসেবে সংস্কৃতি গড়ে উঠলে এই অপচয় রোধ করা যায় অবশ্যই।
কীভাবে খাওয়া যায়?
পশুর চামড়া খাবার হিসেবে প্রস্তুত করা একটু ঝামেলা। তবে গরু ছাগলের ভুঁড়ি খাবার হিসেবে প্রস্তুত করতেও কিন্তু ঝামেলা কম নয়।
* প্রথমে গরুর চামড়া এক থেকে দেড় ফুট সাইজের ছোট টুকরা করে নিতে হবে।
* এবার মেঝেতে রেখে চামড়ার উপরের অংশে গরম পানি ঢেলে সঙ্গে সঙ্গে স্টিলের চামচ দিয়ে আঁচড় দিন। দেখবেন খুব সহজেই চামড়ার পশমগুলো উঠে যাবে।
* লোম উঠে যাবার পর চামড়ার নিচের অংশ পরিষ্কার করে ছোট ছোট টুকরা করতে হবে।
* এরপর ভালোভাবে ধুয়ে গরম পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। সিদ্ধ হলে, প্রয়োজনীয় মশলা দিয়ে গোশতের মত করে রান্না করতে হয়। অথবা ভুড়ির মত রান্না করা যেতে পারে।
ইসলামের দৃষ্টিতে গরু-ছাগলের চামড়া খাওয়া হালাল। আমাদের দেশে গরু-ছাগলের বট খাওয়ার ব্যাপক প্রচলন আছে। আর কোথাও কোথাও চামড়া খাওয়ার প্রচলনও রয়েছে। জবাই করা হালাল পশুর সাতটি অংশ ছাড়া সবটাই খাওয়া হালাল।
হালাল পশুর যে ৭টি অঙ্গ খাওয়া হারাম। যথা-
১- প্রবাহিত রক্ত
২- নর প্রাণীর পুং লিঙ্গ
৩- অন্ডকোষ
৪- মাদী প্রাণীর স্ত্রী লিঙ্গ
৫- চামড়া ও গোশতের মাঝে সৃষ্ট জমাট মাংসগ্রন্থি
৬- মুত্রথলি
৭- পিত্ত
এসবি//