ঢাকা, সোমবার   ১৩ জানুয়ারি ২০২৫,   পৌষ ৩০ ১৪৩১

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের দিন সহিংসতায় নিহত ৯

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৪১ পিএম, ৮ জুলাই ২০২৩ শনিবার

পশ্চিমবঙ্গে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন শনিবার দুপুর পর্যন্ত সহিংসতায় অন্তত নয় জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এবং কংগ্রেস ও বাম-কর্মীরাও রয়েছেন।

প্রায় সব জেলা থেকেই ব্যাপক বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ, ব্যালট পেপার লুঠ, বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট দেওয়া, এমনকি ব্যালট বাক্স ছিনতাই করার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভোট কর্মীরা বুথ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন প্রাণ বাঁচাতে।

দেশটির হাইকোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে পৌঁছলেও তাদের ঠিকমতো মোতায়েনই করা হয় নি বলে অভিযোগ করছে বিরোধী দলগুলি।

অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস বলছে এদিন তাদের কর্মী সমর্থকরাই বেশি মারা গেছেন। রাজ্যের ৬১ হাজারেরও বেশি বুথের মধ্যে গোটা পঞ্চাশেক বুথে অশান্তি হয়েছে বলে তাদের দাবী। তারাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপরে দোষারোপ করে বলেছে যে ওই বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।

ভোররাত থেকেই শুরু খুন, বুথ দখল

শুক্রবার রাত থেকেই খবর আসতে থাকে যে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বুথ দখল, ব্যালট ছিনতাই বা ব্যালট বাক্স ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে।

কোচবিহার জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের এক স্থানীয় নেতা গণেশ সরকার নিহত হন বলে স্থানীয় প্রশাসন সাংবাদিকদের জানিয়েছে।

শনিবার সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় বোমাবাজি আর গুলি শুরু হয়। বিজেপির এক বুথ এজেন্ট এবং এক তৃণমূল কর্মী খুন হন, বোমার আঘাতে আহত হন এক সিপিআইএম প্রার্থী।

আবার কোচবিহারের দিনহাটা জেলায় বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে দলীয় কর্মীরা বুথের বাইরে ব্যালট বাক্স নিয়ে এসে তা ভেঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেন।

মুর্শিদাবাদ জেলাতে একজন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী খুন হন শনিবার ভোর রাতে - জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। ভোট দিতে যাওয়ার সময়ে দুই কংগ্রেস কর্মী গুলির মুখে পড়েন। সিপিআইএম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক ভোটারের।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির ভিডিও ফুৃটেজে দেখানো হয়েছে যে রানিনগর এলাকায় হাতে কাটারি আর বোমা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। সংবাদমাধ্যমকে দেখেই তিনি উল্টোদিকে ঘুরে যান। ব্যাগ থেকে একটা বোমা বার করে তাকে ছুঁড়তেও দেখা যায়।

জেলার খড়গ্রাম, ডোমকলেও বোমাবাজি আর গুলির খবর এসেছে।

নদীয়া জেলায় এক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে চাপড়ার তৃণমূলের বিধায়ক রুকবানুর রহমান দাবী করেছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলায় খুন হয়েছেন এক সিপিআইএম কর্মী।

মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগণা, মালদা এবং উত্তর দিনাজপুর থেকেও।

তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন মৃত ও আহতদের কোনও হিসাব এখনও দেয় নি।

ভোট কর্মীরা কাঁদছেন, বুথ ছেড়ে পালাচ্ছেন

মালদা, বীরভূম আর হুগলি জেলা থেকেও ছাপ্পা ভোট, বুথ দখল করার অভিযোগ উঠেছে।

বীরভূম জেলার ময়ূরেশ্বর এলাকা থেকে এমন ভিডিও বিবিসির হাতে এসেছে যেখানে নারী ভোট কর্মীদের কান্নাকাটি করতে দেখা যাচ্ছে।

একটি বুথের প্রিসাইডিং অফিসার অঙ্গনা সেন জানিয়েছেন যে একদল লোক মুখ ঢাকা অবস্থায় তার বুথে ঢোকে। প্রথমে তারা ছাপ্পা ভোট দিচ্ছিল, কিন্তু তারপরে গোটা ব্যালট বাক্সই তুলে নিয়ে চলে যায়।

ওই বুথের সব ভোট কর্মীই নারী আর তারা বলছেন যে সেখানে যদি পুনরায় ভোট করানো নির্দেশ আসে হলে তাহলে তারা কোনমতেই থাকবেন না।

আরও কয়েকটি বুথ থেকে ভোট কর্মীরা চলে যাচ্ছেন, এরকম ছবি স্থানীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমও দেখাচ্ছে।

ভোট ঘোষণার পর থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার যে ভাঙ্গর এলাকায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছিল, সেখানে অবশ্য কিছু বোমাবাজি ছাড়া আর বড় ধরণের ঘটনা শনিবার হয় নি।

তৃণমূল কংগ্রেস – বিজেপির পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

ভোটের আগের রাত থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যে সহিংসতা চলেছে, তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দায়ী করছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস।

দলের নেত্রী ও মন্ত্রী শশী পাঁজা টুইটারে বলেছেন ,”বিজেপি-সিপিআইএম আর কংগ্রেস তো একজোট হয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর জন্য চিৎকার করছিল। তাদের মোতায়েন করা হয়নি কেন? কেন বাহিনী নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে পারল না? কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার দাবী যারা তুলেছিল, তারা তো মনে করেছিল যে ওই বাহিনীই শান্তির অভিভাবক হয়ে উঠবে। সেই অভিভাবকরা তো ব্যর্থ হল।“

বিজেপিসহ বিরোধী দলগুলিও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না করার বিষয়টি সামনে আনছে। তবে তারা বলছে, এক তো বাহিনী অনেক দেরীতে পৌঁছিয়েছে রাজ্যে, এমনকি শুক্রবার রাতেও বাহিনী এসেছে। আবার তাদের মোতায়েনের বিষয়টি যেহেতু রাজ্য পুলিশ এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আওতায়, তাই বেশিরভাগ এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনই করা হয় নি।

কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য পুলিশের মধ্যে সমন্বয় করছে বিএসএফ।

তারা জানাচ্ছে ৫৯ হাজার কেন্দ্রীয় এবং অন্য রাজ্য থেকে আসা বাহিনীর সদস্যদের শুধুমাত্র স্পর্শকাতর এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে, বাকি বাহিনীকে অন্যান্য ভোট কেন্দ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার ভোটের দিন সকাল থেকেই কিছুটা অভূতপূর্ব-ভাবে রাস্তায় নেমেছিলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “মানুষ আমার গাড়ি থামিয়ে খুন, বুথে যেতে বাধা দেওয়া এসবের কথা জানিয়েছেন। এটা গণতন্ত্রের সবথেকে পবিত্র দিন। ভোট হওয়া উচিত ব্যালট দিয়ে, বুলেট দিয়ে নয়।“

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সহিংসতা নিয়ে নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করে নি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসবি/