ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২১ ১৪৩১

সেমিকন্ডাক্টরে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘প্রযুক্তি যুদ্ধে’ বেইজিংয়ের পাল্টা আঘাত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২০ পিএম, ১০ জুলাই ২০২৩ সোমবার

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘প্রযুক্তি যুদ্ধে’ বেইজিং সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেক্ট্রনিক যানবাহন তৈরিতে ব্যবহৃত দুটি প্রধান কাঁচামালের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের নতুন আদেশ দিয়েছে। ফলে এই বিধিনিষেধে বেকায়দায় পড়া কোম্পানিগুলোকে ওই উপাদান দুটির সরবরাহ নিশ্চিত করতে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যাচ্ছে। শিল্প সরবরাহকারীদের ধারণা, চীনের এই নীতিতে মাইক্রোচিপ শিল্পের ব্যয়বহুল উপাদান দুটির রপ্তানি ব্যাহত হতে পারে।

ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, সোমবার কিছু গ্যালিয়াম এবং জার্মেনিয়াম পণ্য রপ্তানির উপর হঠাৎ নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয় বেইজিং, যেটি ১ অগাস্ট থেকে কার্যকর হতে পারে। এই নিয়ন্ত্রণ চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনে আরও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

এই নিয়ন্ত্রণের পেছনে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ রক্ষার কথা বলেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দমাতে ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমানভাবে যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার প্রতিক্রিয়াতেই এই রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটছে বেইজিং।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন বেইজিং সফরের ঠিক আগে এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এই নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে বেইজিং।

চীনের গ্লোবাল মাইনিং অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান পিটার আরকেল জানান, নিয়ন্ত্রণ আরোপের মাধ্যমে আমেরিকার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণগুলোতে আঘাত করেছে চীন।

ইউরোপীয় কমিশন এই ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে। জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক বলেন, লিথিয়ামের মতো উপাদানগুলো নিয়ন্ত্রণের যে কোনো প্রয়াস ‘সমস্যাজনক’ হবে। ডাচ সরকার বলেছে, নতুন বিধিনিষেধের প্রভাব কেমন হবে, সেটি নির্ভর করবে সেই বিধিনিষেধগুলো কীভাবে পরিচালনা করা হবে।

একটি মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর ওয়েফার প্রস্তুতকারক কোম্পানি মঙ্গলবার বলেছে, তারা রপ্তানি পারমিটের জন্য আবেদন করছে। আর চীন ভিত্তিক জার্মেনিয়াম প্রস্তুতকারক একটি প্রতিষ্ঠান বলছে, বিধিনিষেধের ঘেরাটপে ওই উপাদানগুলোর দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছেন।
ছুরি দিয়ে মাখনের মতো কাটা যায় এমন একটি রুপালি ধাতু গ্যালিয়াম। সেমিকন্ডাক্টর ও এলইডি তৈরিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অন্যদিকে জার্মেনিয়াম এক ধরনের শক্ত, ধূসর সাদা ধাতব পদার্থ যা ব্যবহৃত হয় অপটিক্যাল ফাইবার তৈরিতে। এই ফাইবারগুলো দিয়ে আলো এবং ইলেকট্রনিক ডেটা পাঠানো যায়। 

মোট ১৭টি দুষ্প্রাপ্য ধাতুর শীর্ষ উৎপাদক চীন। গোটা পৃথিবীর মোট উৎপাদনের অর্ধেকই উৎপাদন করে দেশটি। এর আগে ২০২১ সালেও একবার চীনের এই ১৭টি ধাতুর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগের কথা এসেছিল গণমাধ্যমে। সোমবারের এই নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে ২০২১ সালের উদ্যোগের মিলের কথা সিএনএন বলেছে প্রতিবেদনে।

গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়াম সেই ১৭টি দুষ্প্রাপ্য ধাতুর মধ্যে পড়ে না। তবে এগুলো খনি থেকে আহরণ কিংবা কারখানায় উৎপাদন করা অনেক ব্যয়সাধ্য। এই দুটি ধাতু উৎপাদন ব্যয়বহুল হওয়ার কারণ, এগুলো কেবল অ্যালুমিনিয়াম, দস্তা ও তামার মতো ধাতু খনি থেকে উত্তোলনের সময় উপজাত হিসাবে পাওয়া যায়। ফলে এইসব ধাতু উৎপাদক দেশেই এগুলো কম খরচে প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব।

(সূত্র- ভয়েস অব আমেরিকা)