করিডোর সুযোগ না পেয়ে নির্বাচন নিয়ে সরব কিছু দেশ (ভিডিও)
মুহাম্মদ নূরন নবী
প্রকাশিত : ১২:০৬ পিএম, ১১ জুলাই ২০২৩ মঙ্গলবার
ভারত মহাসাগরে নিজেদের মর্জি-মাফিক উপস্থিতির সুযোগ না পেয়ে কিছু দেশ নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইস্যুতে সরব। নানান নিষেধাজ্ঞা, বিধিনিষেধের খেলায় নেমেছে। এতে সুবিধা পাচ্ছে জনবিচ্ছিন্ন কিছু দল। এমন পরিস্থিতিতে ভেবে-চিন্তে পথ চলার তাগিদ দিয়েছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিশ্ব বাণিজ্যের ৮৬ ভাগ হয় ভারতমহাগরীয় করিডোর দিয়ে। দিন দিন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে এই করিডোর। তাই সব পরাশক্তিই ভারত মহাসাগরের ওপর আধিপত্য বাড়াতে তৎপর।
সম্প্রতি ভারত মহাসাগরীয় রুপ রেখা বা ইন্দো-প্যাসিফিক অউটলুক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। সামরিক উপস্থিতি ব্যতিরেখে শান্তিপূর্ণ ও অর্থনৈতিক বিকাশের কথা স্পষ্ট করা হয়েছে এতে।
ঠিক এই বিষয়টি পছন্দ নয় বলেই গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার পশ্চিমা দেশগুলো।
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এই নাক গলানো ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে থাকলেও এখন ছাড়িয়েছে দেশের গণ্ডি। কখনও নিজ দেশের প্রেসিডেন্টের কাছে নালিশের ঢঙে চিঠি দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা। তা কখনও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের সদস্যের চিঠি জন্ম দিচ্ছে নানা বিতর্ক।
অযৌক্তিক-অসামঞ্জস্য ভিসানীতি, এমনকি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এদেশের শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ ঠেকাতেও তৎপর।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হাসান বলেন, “ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ৬ মাস বাকি। নির্বাচনের ৬ মাস আগে শুরু হয়েছে প্রসিসিং। প্রসেসটা সরকার নিজেও শুরু করেছে, কাজেই তখন সবাই ইনভল্ব হতে শুরু করেছে। আমি মনে করি, আগামী ৬ মাস এই ধরনের মধ্যে দিয়েই যাবে। আরও ডেলিগেশনস আসবে, আলাপ-আলোচনা হবে। সরকারের একটা অবস্থান থাকবে, বিরোধীদের একটা অবস্থান থাকবে।”
ইউরোপীয় ইইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষকদল ১৬ দিনের সফরে আছে। বাংলাদেশের পথে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের আরও একটি দল। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের স্বার্থে ঐকমত্য হওয়ার কথা থাকলেও দলগুলোর অবস্থান বিপরীতমুখী।
তৌহিদ হাসান আরও বলেন, “ঘরে যদি ঝগড়া লেগে থাকে পাশের বাড়ির লোক সেই সুযোগ নেবেনা, এটা কি হয়। ঘর সামলানোর একটাই উপায়, এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা যাতে করে মানুষ ভোট দিতে পারে, যাকে ভোট দিবে সে জিতবে। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং একই সঙ্গে ভারত কিছু চিন্তিত তো বটেই যে চিনের আধিপত্য বাড়ছে। কাজেই এখানে তারা শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করবেই।”
পশ্চিমা এহেন তৎপরতায় নীরব নেই চীন ও রাশিয়াও। বিভিন্ন সময়ে চীন এবং সব শেষ রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়েও পশ্চিমাদের সমালোচনা করেছে। বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে, ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় পরাশক্তিগুলোর এমন তৎপরতা।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “সেখানে এমন একটি সুযোগ যেখানে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের সঙ্গে একমত পোষণ করে সমালোচনা করতে পারে সেই সুযোগ তারা ছাড়বে কেন।”
যদিও এসব সফরে শ্রমি-অধিকার, রোহিঙ্গা ইস্যু, বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হওয়ার রয়েছে। কিন্তু সব ছাপিয়ে প্রধান ইস্যু হয়ে উঠে নির্বাচন।
তৌহিদ হাসান বলেন, “ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করা। সেটা দক্ষিণ চীন সাগর হোক আর বঙ্গোপসাগর হোক।”
এএইচ