ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

নিজ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ বীর বিক্রম মুহিবুল্লার পরিবার (ভিডিও)

মুহাম্মদ নূরন নবী

প্রকাশিত : ১২:৫৮ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২৩ সোমবার

মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সাথে একই রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ বীর বিক্রম। জাতির এই বীর সন্তানকে সম্মান জানতে সম্প্রতি নৌবাহিনী তাঁর নামে একটি যুদ্ধজাহাজের নামকরণ করেছে। ঠিক একইসময়ে শহীদ মুহিবুল্লার পরিবারকে নিজ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে একটি দুষ্টচক্র। জাল-জালিয়াতির দলিলপত্রে আদালতের একপাক্ষিক রায় নিয়ে কাজটি করেছে পেশীশক্তির বলিয়ানরা। 

বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সহযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন মুহিবুল্লাহ বীর বিক্রম। বেতার বার্তার ভুল-বোঝাবুঝিতে পাকিস্তানী হানাদারদের জঙ্গি বিমানের গোলাবর্ষণের শিকার হন। দু’জন শহীদ হন একই দিনে। একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর এ ঘটনাটি খুলনার রুপসা নদীতে ঘটে।

অকুতোভয় এ মুক্তিযোদ্ধাকে স্মরণ ও সম্মান জানতে নতুন যুক্ত হওয়া আসা একটি পেট্রাল ক্রাফট শহীদ মুহিবুল্লার নামে নামকরণ হয়। বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটিতে কমিশনিং করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শহীদ মুহিবুল্লাহর ছোট ছেলের সাথে কথা হচ্ছিল। জন্মের আগেই বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। একটি মাত্র ছবি আর বীরত্বগাথার গল্প শুনে চিনেছেন, বুঝেছেন বাবাকে। 

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন মুহিবুল্লাহর ছোট ছেলে সালাউদ্দিন বলেন, “বাবাকে দেখতে পাইনি কিন্তু বাবার একটা ছবি দেখে এ পর্যন্ত আমার বেড়ে ওঠা। বাবা ও বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন একসঙ্গেই শহীদ হন এবং একসঙ্গেই তাদের কবর রূপসা নদীর পাড়ে।”

বড় ছেলে আলাউদ্দিন বলেন, “উনি ছুটিতে বাংলাদেশে আসেন, এরপরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানে আর ফিরে যাননি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দেশ শত্রুমুক্ত এবং স্বাধীন করার প্রায়াসে আমার বাবার বিন্দুমাত্র হলেও একটা অবদান আছে।”

কথা প্রসঙ্গে জানা গেল এক করুণ গল্প। অর্ধ শতাব্দিরও বেশি সময় বসবাসের স্থান থেকে কোন নোটিশ ছাড়াই উচ্ছেদ করা হয়েছে শহীদ পরিবারটিকে। 

সালাউদ্দিন বলেন, “তার এই অবদানে আমরা খুশি, অন্যদিক দিয়ে আমরা কষ্টে আছি। হঠাৎ করে বিনা নোটিশে আমাদেরকে বাড়িতে থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।”

এ বাড়িতে বসবাসের সুযোগ রাষ্ট্রই দিয়েছে পরিবারটিকে। দেশ স্বাধীনের পর নৌ বাহিনী এমনকি রাষ্ট্রপতির আদেশও জারি হয়েছিল। বৈধ কাগজপত্র থাকা স্বত্ত্বেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পায়নি শহীদ মুহিবুল্লার পরিবার। 

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন মুহিবুল্লাহর পুত্রবধূ উন্মে জোহরা মৌসুমি বলেন, “দুই সন্তানকে নিয়ে এখানে আমার শাশুড়ি সরকারি আশ্রয়ে ছিলেন। এই বাড়িতে থেকে যেদিন আমাদেরকে নামানো হয়েছিল সেদিন মনে হয়েছিল যে, আমরা কোনো বীর বিক্রমের সন্তান নয়, আমরা মনে হয় কোনো দেশদ্রোহী।”

অনেক আগে থেকে এ ষড়যন্ত্র এত গভীরে হয়েছে বুঝতেও পারেনি শহীদ পরিবারটি। অর্পিত সম্পতি হলেও জাল কাগজপত্র দাঁড় করিয়ে একপাক্ষিক আদালতের রায় নিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে। 

এলাকাবাসী জানান, তারা তো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। যেহেতু এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন বিশেষ করে স্বাধীনতার পর থেকে।  এ বিষয়ে তাদের দিকে প্রশাসন ও সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিত।

এ অবস্থায় অসহায় পরিবারটি এখন এক আত্মীয়ের বাসায় কোন মতে দিন কাটাচ্ছেন। 

স্বাধীন বাংলাদেশের ভূখণ্ডের একমাত্র স্বপ্ন ছিল শহীদ ক্যাপ্টেন মহিবুল্লাহ বীর বিক্রমের। তাঁর শহীদ হবার ৬ দিন পরেই বাংলাদেশ জন্ম নেয়। তার রেখে যাওয়া পরিবার যে বাড়িটিতে বসবাস করতো সেটি থেকে নানান আইনের বেড়াজালে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। পরিবারটির দাবি যে বাংলাদেশ ভূখণ্ড তার বাবা চেয়েছিল সেখানে তাদের বসবাসের জন্য একখণ্ড ঠিকানা হয়। 

এএইচ