ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনার চেষ্টা, আদৌ সম্ভব?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:০২ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২৩ সোমবার

প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া একটি পাখি ডোডো৷ সেই পাখিকে আবারও ফিরিয়ে আনতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা৷ ডোডো ছাড়াও লোমশ ম্যামথ বা হাতি এবং তাসমানিয়ান বাঘ ফিরিয়ে আনতে চান তারা৷ কিন্তু কাজটি এত সহজ নয়৷

‘ডেড এজ এ ডোডো' বলতে বোঝায়, চিরদিনের জন্য চলে গেছে- যা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়৷ তবে ভবিষ্যতে হয়ত আর এই কথাটি বলা যাবে না৷

ভারত মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত মরিশাসে একসময় ডোডোরা ছিল৷ তারা পাখি হলেও উড়তে পারতো না৷ ১৬ শতকে মরিশাসে ইউরোপীয় জাহাজ আসার পর নানান শিকারিদের খপ্পরে পড়ে ডোডোরা৷ ফলে ৭০ বছরের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যায় পাখিটি৷ বিজ্ঞানীরা এখন তাদের ফিরিয়ে আনতে চাইছেন৷

এভুলিউশনারি জেনেটিসিস্ট বেঞ্জামিন ভ্যার্নট বলেন, ‘‘প্রযুক্তির কথা ভাবলে মনে হবে, এটা যেন একটা মজার প্রকল্প৷ এটা আসলে খুবই উচ্চাকাঙ্খী একটা প্রকল্প৷ কখনো সফল হবে কিনা, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে৷ আমার মনে হয় ডোডোর মতো দেখতে একটা কিছু তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে৷ আমি নিশ্চিত নই, তারা আসল ডোডো ফিরিয়ে আনতে পারবেন কিনা৷''

কলোসাল বায়োসায়েন্সেস কোম্পানির বিজ্ঞানীরা ডোডো ছাড়াও লোমশ ম্যামোথ বা হাতি এবং তাসমানিয়ান বাঘ ফিরিয়ে আনতে চান৷ কিন্তু কাজটি এত সহজ নয়৷

কলোসাল বায়োসায়েন্সেস কোম্পানির কর্মকর্তা টম গিলবার্ট জানান, ‘‘অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ, যার সমাধান করতে হবে তা হলো, একটি জীবের অনেকগুলো মিউটেশন আসলে কীভাবে একে অপরের উপর নির্ভর করতে পারে, তা নির্ধারণ করা৷ আপনি হয়ত একটি জিন পরিবর্তন করতে চাইতে পারেন, অর্থাৎ একটি ফিনোটাইপ দেওয়ার জন্য একটি মিউটেশন৷ এটা সরাসরি কাজ করতে পারে৷ এছাড়া আরও অনেক অজানা সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা আপনাকে পরিবর্তন করতে হবে৷''

টিকে থাকা ও বিলুপ্ত হওয়া কোনো প্রজাতিকে তাদের জেনেটিক কোড দিয়ে চেনা যায়, যা ডিএনএতে লেখা থাকে৷ একটি প্রাণীর বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে তার আচরণ কেমন হবে, সব নির্ধারণ করে এই কোড৷ তাই বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনার একটি উপায় হতে পারে, সংরক্ষিত নমুনা থেকে ডিএনএ নিয়ে কাছাকাছি কোনো প্রজাতির ডিম্বাণুতে বসানো, এবং তারপর সেই ডিম একটি সারোগেটে ইমপ্ল্যান্ট করা৷

তবে ক্লোনিং নামের এই প্রক্রিয়া ডোডো ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কাজ করবে না৷

টম গিলবার্ট বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত, দুটি কারণে আমরা ক্লোনিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবো না৷ প্রথমত, বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ক্লোনিং করা বিষয়টি শুনতে যতটা সহজ মনে হয়, আসলে ততটা নয়৷ এছাড়া বেঁচে আছে এমন কোনো ডোডো নেই, যার ভেতরে ছোট ডোডো বসানো যাবে৷ দ্বিতীয়ত, কোনো প্রজাতির ক্লোনিং করতে আপনার কার্যকর কোষ লাগবে, যা এখনও জীবিত৷ কিন্তু আমাদের কাছে এমন কোনো উপাদান নেই৷ ফলে ডোডো ফিরিয়ে আনতে ক্লোনিং করা সম্ভব নয়৷''

মৃত্যুর পর জীবন্ত কোষগুলো পচে যেতে থাকে৷ ডিএনএ-ও ভেঙে ছোট ছোট অংশে পরিণত হয়৷ সংরক্ষিত নমুনায় যা আছে, তা দিয়ে বিলুপ্ত হওয়া জেনেটিক কোড জোড়া লাগানোর চেষ্টা করতে হবে৷ কিন্তু যখন বিজ্ঞানীরা এই কাজ করা শুরু করবেন তখন সবসময়ই এমন কিছু ফাঁকা জায়গা থেকে যাবে, যা কখনও পূরণ করা যাবে না৷

কলোসাল বায়োসায়েন্সেস কোম্পানি তাই অন্য একটি পথ অনুসরণ করছে৷ তারা বিলুপ্ত প্রাণীর সবচেয়ে কাছাকাছি প্রাণীর ডিএনএ নিয়ে কাজ করছে৷ যেমন, লোমশ ম্যামোথের জেনেটিক কোডের সাথে এশিয়ান হাতির কোডের ৯৯ শতাংশের বেশি মিল আছে৷ সে কারণে বিজ্ঞানীরা একটি হাতির কোষের ডিএনএ নিয়ে কাজ করছেন এবং তার সঙ্গে ম্যামোথের জিন যোগ করছেন৷ তারা আশা করছেন, এর ফলে যে ভ্রুণ তৈরি হবে সেটা পরে শিশু হাতিতে পরিণত হবে- যে হাতিতে ম্যামোথের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকবে, যেমন ছোট কান বা লোমশ শরীর৷ কিন্তু এটা কি আসলেই ম্যামোথ?

টম গিলবার্ট বলেন, ‘‘ম্যামথ ফিরিয়ে আনায় সাফল্য বলতে যদি আপনি বিলুপ্ত হওয়ার সময় ম্যামোথ দেখতে যেমন ছিল, ঠিক তেমন ম্যামথ চান, তাহলে সম্ভবত আপনি কখনও সফল হবেন না৷ সাফল্য বলতে যদি আপনি এমন হাতি চান, যার শরীরে চুল থাকবে এবং যেটি শীতে টিকে থাকতে পারে, তাহলে সফলতা অর্জন অনেক সহজ হবে৷''

ফলে ডোডো, লোমশ ম্যামথ বা তাসমানিয়ান বাঘের মতো দেখতে জিন সম্পাদিত প্রাণী পেতে অনেক বৈজ্ঞানিক বাধা পেরোতে হবে৷ তবে সম্ভবত সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হচ্ছে: ধরে নিলাম আমরা পারবো- কিন্তু তা কি করা উচিত?

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এসবি/