ঢাকা, শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ৪ ১৪৩১

একনেকে অনুমোদন

৫৬২ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সুরক্ষা পাবে সন্দ্বীপ

কাজী ইফতেখারুল আলম

প্রকাশিত : ১২:২৪ পিএম, ২২ জুলাই ২০২৩ শনিবার | আপডেট: ০৫:১৬ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২৩ সোমবার

চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই জনপদ। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা হাজার বছরের পুরনো দ্বীপটি হাতছানি দিয়ে ডাকছে সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকদের। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার এই দ্বীপ ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। ভূগোলিক কারণে সন্দ্বীপ বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক্তি জনপদ। কিন্তু এখানকার মূল সমস্যা হল যাতায়াত এবং নদী ভাঙন। ভাঙ্গা-গড়ার এ খেলায়ও তার রূপ একটু কমেনি। যেন চির যৌবনা সে। সাগর আর নদীর অথই জলপথ পেরিয়ে দ্বীপের ভূখণ্ডে নামলেই শরীর যেন শিহরিত হয়ে ওঠে। চারিদিকে এক পলক চেয়ে মুহূর্তে মুগ্ধ হতে হয়। এমন সৌন্দর্য দেখে।  

সন্দ্বীপ দীর্ঘদিন অবহেলিত জনপদের নাম ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সন্দ্বীপ বদলে যেতে শুরু করে। সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয় সন্দ্বীপ। বিদ্যুতের ছোঁয়ায় বদলে গেছে এখানকার মানুষের জীবনমান। ক্রমাগত ভাঙন থেকে সন্দ্বীপকে রক্ষায় একসময় ক্রস বাঁধ নির্মাণের দাবি করেছিল এই জনপদের মানুষ। গত এক দশক ধরে সন্দ্বীপে ভাঙন কমে সন্দ্বীপের চারদিকে চর জেগে উঠে। অথচ এই দ্বীপকে রক্ষার জন্য ১৯৭৪ সালে সরকার নেদারল্যান্ডস সরকারের সঙ্গে সন্দ্বীপ-নোয়াখালী ক্রস বাঁধ নির্মাণের সম্ভাব্যতা পরীক্ষার জন্য একটি সমঝোতা চুক্তি সই করে। যদিও ক্রসবাঁধের এই দাবি এখন অমূলক হলেও এখানে ঝড় জলোচ্ছ্বাসের সময় আতংকে থাকতে হয় পাঁচ লক্ষ মানুষকে। টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে এখানে জোয়ারের পানিতে উপকূল প্লাবিত হয়। এর আগে বেশ কটি ঘূর্ণিঝড়ে সন্দ্বীপের কিছু বেড়িবাঁধে পানি প্রবেশ করে ক্ষতির সম্মুখীন হয় সন্দ্বীপ। 

বর্ষাকালে অধিকাংশ এলাকার লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প চলমান থাকলেও তার বাইরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে আরো ১৭ কিলোমিটার এলাকা। যার প্রভাবে অরক্ষিত অবস্থায় আছে কালাপানিয়া, সারিকাইত, মগধরা ও মুসাপুর ইউনিয়নের উপকূল। এ অরক্ষিত এলাকা রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সন্দ্বীপকে সুরক্ষার জন্য এবার সরকার নিয়েছে অবিনব পদক্ষেপ। এর ফলে সন্দ্বীপ যেমন ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষিত হবে তেমনি বদলে যাবে এই জনপদের মানুষের জীবনমান। 

সন্দ্বীপ সুরক্ষায় ভাঙন প্রতিরোধে বাপাউবোর গৃহীত ৫৬২ কোটি ২১ লাখ টাকার টেকসই প্রতিরোধ প্রকল্পটি গতকাল ১৮ জুলাই একনেকের সভায় অনুমোদন লাভ করেছে। নতুন এ প্রকল্পটি অনমোদনের মধ্য দিয়ে উপজেলা সন্দ্বীপ সুরক্ষার কাজ আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো। এর আগে একই উপজেলায় সমাপ্ত হওয়া ১৯৯ কোটি টাকার টেকসই ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের কাজের সাথে সঙ্গতি রেখে গতকাল গৃহীত নতুন প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় গৃহীত নয়া উদ্যোগটিও আরো একধাপ এগিয়ে গেলো।

গতকাল একনেকের সভায় অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের ২৩টি প্যাকেজে ১২.৩৪ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণ, ২টি নুতন রেগুলেটর নির্মাণ ও ৭টি পুরনো রেগুলেটর মেরামত এবং সাগর তীরজুড়ে পলি অপসারণ এবং উপকূলের তীরের ৮৮ হেক্টরে সৃজন করা হবে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১৮ হাজার ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসময় সন্দ্বীপকে রক্ষায় ৫৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার পোল্ডার নং–৭২ এর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের স্থায়ী পুনর্বাসনসহ ঢাল সংরক্ষণ প্রকল্প দুটিও অনুমোদন দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই দুটি প্রকল্প অনুমোদন করেন একনেক সভাপতি শেখ হাসিনা
এম.পি।

সন্দ্বীপ উপজেলার পোল্ডার নং-৭২-এর সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।  সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এ প্রতিবেদন দিয়েছে। তবে এ দ্বীপ রক্ষায় ৫৬৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পুরোপুরি পাল্টে যাবে অরক্ষিত দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। পাল্টে যাবে এ দ্বীপের জনগণের জীবনধারা। এমন তথ্য দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান।

পাউবোর তথ্যমতে, সন্দ্বীপ উপজেলার আয়তন ৭৩২ দশমিক ৪২ কিলোমিটার। সন্দ্বীপে বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে সিসি ব্লক দ্বারা ৯ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সুরক্ষিত আছে। অধিক ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে ২৯ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।

তিনি বলেন, সন্দ্বীপে কয়েক দশক আগের পুরোনো বেড়িবাঁধ আছে। কিন্তু আমরা সেখানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ করতে চাই। উরির চরের ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন আছে। তাই সন্দ্বীপ উপকূল রক্ষায় একটি প্রকল্প খুবই দরকার। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে আছে। তিনি বলেন, পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সন্দ্বীপের কৃষি, মৎস্য ও সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। পাল্টে যাবে
এই দ্বীপ উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রাও। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শুধু এই উপজেলায় ফসল উৎপাদন হবে ১ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিকটন, যা বর্তমানের চেয়ে ২২ হাজার ২৯৩ মেট্রিকটন বেশি।

সন্দ্বীপের সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের পথে উপকূলীয় ভাঙন প্রতিরোধ অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে উড়ির চরের মুন্সির হাট, কালনি বাজার, আদর্শ পাড়া, পূর্বের চরের ম্যানগ্রোভ বন পর্যন্ত তীব্র ভাঙন রয়েছে। সন্দ্বীপের উত্তর অংশে দীর্ঘাপাড়, আমানউল্লাহ, সন্তোষপুর ও কালাপানিয়া এলাকায় ভাঙন এলাকা বেশি। ফলে পুরোপুরি অরক্ষিত সন্দ্বীপ।

সিইজিআইএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্দ্বীপ উপজেলায় ১৫ হাজার ২৮৭ হেক্টর ও উড়ির চরে ১১ হাজার ৪৪৬ হেক্টর ফসলি জমি আছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে ধান ও ৯ হাজার ৬৬৩ হেক্টর জমিতে শস্য উৎপাদন হয়। বর্তমানে এসব জমিতে ১ লাখ ২ হাজার ৭৭৯ মেট্রিকটন ধান ও শস্য উৎপাদন হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ফসল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিকটন।

সন্দ্বীপ আসনের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, সন্দ্বীপ ও উরির চরের উন্নয়নে ভাঙন কবলিত উপকূলীয় এলাকা সুরক্ষিত করা জরুরি। এ জন্য একটি প্রকল্প খুবই দরকার। পানি উন্নয়ন বোর্ড যে প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে সেটি যত দ্রুত অনুমোদন হবে, তত বেশি উপকৃত হবে সন্দ্বীপের মানুষ। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে কৃষি, মৎস্য সেক্টরে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে। স্থায়ী বাঁধটি নির্মিত হলে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ হবে। ভাঙন রোধ হবে। ঝুঁকিমুক্ত থাকবে সন্দ্বীপ।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে ১৮ হাজার ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত ও টেকসই পৌর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প ও ৫৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার পোল্ডার নং–৭২ এর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের স্থায়ী পুনর্বাসনসহ ঢাল সংরক্ষণ এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ‘দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’। প্রকল্প দুটিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সন্দ্বীপের সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের পথে উপকূলীয় ভাঙন প্রতিরোধ অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উড়ির চরের মুন্সির হাট, কালনি বাজার, আদর্শ পাড়া, পূর্বের চরের ম্যানগ্রোভ বন পর্যন্ত তীব্র ভাঙন রয়েছে। সন্দ্বীপের উত্তর অংশে দীর্ঘাপাড়, আমানুল্লাহ, সন্তোষপুর ও কালাপানিয়া এলাকায় ভাঙন এলাকা বেশি। যার ফলে পুরোপুরি অরক্ষিত সন্দ্বীপ।

সূত্র আরও জানায়, সন্দ্বীপ উপকূলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলাস্থ পোল্ডার-৭২ এর অন্তর্গত কালাপানিয়া, মুসাপুর, সারিকাইত ও মগধরা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের স্থায়ী পুনর্বাসনসহ ঢাল সংরক্ষণ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৫৬৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের অধীনে বাঁধের ঢাল সুরক্ষা কাজ ২৯ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার, বাঁধ পুনঃআকৃতিকরণ ৪৫ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার, সিল্ট অ্যাক্সিলারেটর নির্মাণ এক দশমিক ৫ কিলোমিটার, পোল্ডার ৭২-এ ড্রেনেজ সাতটি খালের পুনঃখনন ১৯ দশমিক ১৮ কিলোমিটার, নতুন রেগুলেটর নির্মাণ দুটি, রেগুলোটর সংস্কার সাতটি, ম্যানেগ্রোভ বনায়ন ৩২ দশমিক ৩ কিলোমিটার, পোল্ডারের উত্তর দিকে নতুন বাঁধ নির্মাণ ১০ দশমিক ২২ কিলোমিটার, উত্তর দিকে খাল পুনঃখনন ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার, উত্তর দিকে নতুন খাল খনন ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার, উত্তর দিকে রেগুলেটর নির্মাণ তিনটি, উড়ির চরে তীর সংরক্ষণ কাজের ৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার।

উল্লেখ্য, দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন সেই সাথে বেড়েই চলেছে বৈশ্বিক উষ্ণতা আর সে কারণে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর বরফপুঞ্জ গলছে আর সেই সাথে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে প্রকৃতির আচরণ ক্রমান্বয়ে রুক্ষ থেকে রুক্ষতর হয়ে উঠছে। এতে প্রতি বছর দেশের উপকূলীয় অঞ্চল বিধ্বস্ত হচ্ছে সেই সথে উপকূলবর্তী সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যাপক আকারে ক্ষতি সাধিত হয়ে আসছে। পরবর্তীতে তা পূর্ণর্নিমাণে প্রতি বছরই সরকারকে ব্যয় করতে হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এ কারণে জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন তারই অংশ হিসেবে আগামী ১০০ বছরের বিষয়টিকে প্রধান্য দিয়ে সরকার ডেলটা প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। এর আগে বর্তমান সরকার, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা ২০০৯ (বিসিসিএসএপি-২০০৯) গ্রহণ করেন। যা উন্নয়শীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম এই ধরনের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বিশেষ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে অবহিত হয়েছে। সেই যুগান্তকারী উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারবিশেষ উদ্যোগে ২০০৯-১০  অর্থবছরে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ) গঠন করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।

তা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় আরো একটি টেকসই নয়া উদ্যোগ বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত ৭৬২.৪২ কিলোমিটারের দ্বীপ উপজেলা সন্দীপ সুরক্ষায় গৃহীত এই নতুন প্রকল্প। এতে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০০০ হাজার কোটি টাকা। আর তা বাস্তবায়নে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওযাটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) এবং সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক
ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) কে পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব (ঊঝওঅ) নিরূপণের দায়িত্ব প্রদান করা হয় সেই পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্ঠান নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্পের সমীক্ষা সম্পন্ন করেন। ওই সমীক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে গতকাল ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় বাপাউবো গৃহীত নতুন প্রকল্পটি অনুমোদনের মধ্য দিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গৃহীত উদ্যোগটি আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো।

সম্পাদিত সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্দ্বীপ-এর পানিসম্পদ ব্যবস্থা প্রধানত অভ্যন্তরীণ খাল দ্বারা পরিচালিত হয়। দ্বীপের বিভিন্ন অংশে বাঁধের উচ্চতাও পর্যাপ্ত নয়। সন্দ্বীপ এলাকাটি ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সরাসরি সমুদ্রের সংস্পর্শে থাকায় ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের প্রবণতা রয়েছে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে (২২৫ কিলোমিটার বেগে) দ্বীপটিতে অবস্থিত ৮০ ভাগ বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছিল। ওই ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল বলে বলা হয়েছে।

জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় সম্পাদিত সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে বাঁধের অভ্যন্তরে বন্যার পানির সর্বাধিক গভীরতা ৩ মিটার থেকে ৩.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০৫০ সালের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের কারণে বন্যার পানির সর্বাধিক গভীরতা বেড়ে ৪ মিটার থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। সন্দ্বীপের ৫৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪৫.৩৪ কিলোমিটার বাঁধের উচ্চতা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রতিরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে বলা হয়েছে।

এছাড়া অনন্য অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- 
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন’ প্রকল্প,  তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি (দ্বিতীয় পর্যায়),  স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (এসএমইউ)’ স্থাপন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘ঝিনাই, ঘাঘট, বংশী এবং নাগদা নদীর প্রবাহ পুনরুদ্ধারের জন্য শুষ্ক মৌসুমে নদীর প্রবাহ নিশ্চিতকরণ, নৌপথের উন্নয়ন ও বন্যা ব্যবস্থাপনা,  সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের
‘উলিপুর (হেলিপ্যাড মোড়)-চিলমারী (গুনাইগাছ) সংযোগ সড়ক নির্মাণ’,  গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘বেসরকারি ভবনসমূহের রেজিলিয়েন্সির (স্থিতিস্থাপকতা/সহনশীলতা) জন্য ডিজাইন এবং নির্মাণের গুণগত মান বৃদ্ধিকরণ’,  স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুইটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত ও টেকসই পৌর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন’,  ও ‘আমার গ্রাম- আমার শহর : পাইলট গ্রাম উন্নয়ন’, আইন, বিচার ও সংসদ
বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জন্য রেকর্ড ভবন নির্মাণ’,  কৃষি মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’, ‘ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মা নদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ সম্প্রসারণ’  এবং ‘টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন’,  পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুইটি প্রকল্প ‘ভূমি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে উড়িরচর নোয়াখালী ক্রস ড্যাম নির্মাণ’ প্রকল্প ও ‘চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলাস্থ পোল্ডার নম্বর-৭২-এর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের স্থায়ী পুনর্বাসনসহ ঢাল সংরক্ষণ’  এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ‘দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’।

কেআই//