ঢাকা, বুধবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ১১ ১৪৩১

মডেল মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২২ এএম, ৩১ জুলাই ২০২৩ সোমবার

মসজিদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ইবাদত-বন্দেগির স্থান। মন খুলে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কথা বলার জায়গা। তাই মসজিদকে বলা হয় ‘বায়তুল্লাহ’ বা আল্লাহতায়ালার ঘর। পৃথিবীতে মসজিদ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস মানব ইতিহাসের সমান পুরনো। পৃথিবীর প্রথম মসজিদ কাবা শরিফ। আল্লাহপাকের নির্দেশে এ মসজিদ নির্মাণ করেন প্রথম মানব হজরত আদম আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে এ মসজিদ প্রতিষ্ঠার উল্লেখ রয়েছে। এর অন্য নাম মসজিদুল হারাম।

শেষ নবীর জন্মের আগে প্রতিষ্ঠিত আরেকটি প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ বায়তুল মোকাদ্দাস। মেরাজে যাওয়ার পথে এ মসজিদে নবী-রাসুলদের সঙ্গে নিয়ে নামাজ আদায় করেন নবী কারিম (সা.)। মদিনায় নবীর প্রতিষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ হচ্ছে মসজিদে নববি। এ মসজিদ থেকে ধর্ম প্রচারসহ শাসনকাজ পরিচালনা করতেন তিনি।

নবী কারিম (সা.)-এর নির্দেশে তার জীবদ্দশায় ও পরবর্তী সময়কালে ইসলামের বাণী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেন সাহাবারা। আরও পরে তাদের নির্দেশ পালন করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েন অলি-আউলিয়ারা। যেখানে তারা ধর্ম প্রচারে গেছেন, সেখানেই স্থাপন করেছেন মসজিদ। সে সময় ইবাদতের পাশাপাশি শাসনকাজের মূলকেন্দ্রও ছিল এসব মসজিদ।

বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রচার প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার প্রতিষ্ঠিত সেই চারাগাছ আজ মহীরূহে পরিণত হয়ে প্রচার করছে ইসলামের আদর্শ।

জাতির পিতার সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো দেশ গড়ার হাল ধরেন তারই সুযোগ্যতম কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি তার দূরদর্শী নেতৃত্ব, কুশলী পরিকল্পনা এবং তার যথাযথ বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশ আজ পেয়েছে বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেলের স্বীকৃতি।

দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ভিত শক্তিশালী করে এরই মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পর জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যার লক্ষ্য উন্নত, স্মার্ট বাংলাদেশ। এজন্য এরই মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করে এগিয়ে চলেছেন তিনি। পাশাপাশি একজন আদর্শ মুসলমান হিসেবে ধর্মীয় চেতনা অব্যাহত রাখতে ইসলাম ধর্মের বিকাশে অব্যাহত ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। কওমি মাদ্রাসাগুলোর স্বীকৃতি, জাতীয় মসজিদ হিসেবে বায়তুল মোকাররমের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি, আধুনিক হজ ব্যবস্থাপনা, দেশ জুড়ে মসজিদ-মাদ্রাসা-এতিমখানায় সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তার সরকারের এমনই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ। ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৫ সালে এ প্রতিশ্রুতি পালনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো মুসলিম শাসক বা সাম্রাজ্যের একসঙ্গে এতগুলো মসজিদ নির্মাণের ঘটনা নজিরবিহীন।

উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, বিশ্বে এখন ৪৬ লাখের বেশি মসজিদ রয়েছে। আর বাংলাদেশে মসজিদ রয়েছে ৩ লাখ ৩১ হাজারের বেশি। তবে দেশে আগে কখনো একই মসজিদে একই সঙ্গে ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়নি। সে হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে নির্মীয়মাণ মডেল মসজিদগুলো একেবারেই অভিনব।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশব্যাপী ৬৪টি জেলা সদর ও ৫টি সিটি করপোরেশনে ৬৯টি চারতলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ৪৭৫টি উপজেলা সদরে সমসংখ্যক তিনতলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং উপকূলীয় এলাকাগুলোতে নিচতলা ফাঁকা রেখে ১৬টি চারতলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। মোট মসজিদের সংখ্যা ৫৬০টি।

অনেক এলাকায় স্থানীয় মানুষ স্বেচ্ছায় মসজিদ নির্মাণের জন্য জায়গা দান করেছেন। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। নির্মাণকারী সংস্থারূপে কাজ করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তর। দেশ জুড়ে ৫৬৪টি মসজিদে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ জন পুরুষ এবং ৩১ হাজার ৭০০ জন নারী একই সময়ে নামাজ আদায় করতে পারবেন। অত্যাধুনিক ইসলামি স্থাপত্যশৈলী, নান্দনিক নকশা এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের চৌকস বাস্তবায়নে নির্মিত মসজিদগুলোর অবস্থান ভূমি থেকে খানিকটা উঁচুতে। ফলে দূর থেকেই এর সৌন্দর্য সবাইকে আকৃষ্ট করে। বাংলাদেশের জেলা-উপজেলাগুলোতে এ মসজিদগুলোই বর্তমানে সবচেয়ে সুদর্শন স্থাপনা। সমতলে ব্যস্ত শহরের বুকে, পাহাড়ঘেরা এলাকায় বা সাগর দ্বীপে একই নকশা মসজিদগুলো ভিন্ন ভিন্ন রূপে প্রকাশ করে যাচ্ছে এদের নির্মাণকলার সৌন্দর্য।

ধর্ম প্রচারের শুরুতে মসজিদ থেকেই পৃথিবী শাসন করেছেন নবী কারিম (সা.) ও তার সাহাবিরা। ফলে মসজিদ শুধুই নামাজের জায়গা নয়। শিক্ষাগ্রহণ, শাসনকাজ পরিচালনাসহ সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আগে মসজিদেই নেওয়া হতো। উমাইয়া শাসনামলে এসে নিরাপত্তাসহ নানা কারণে মসজিদ থেকে প্রাসাদে চলে যায় শাসনব্যবস্থা। তবে এখনো মূলধারার ইসলামচর্চার মাধ্যমে মসজিদকেন্দ্রিক শিক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টির কাজগুলো অনায়াসে করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে মডেল মসজিদগুলোর সঙ্গে অডিটরিয়ামসহ অন্যান্য সুবিধা যুক্ত করেছেন। এজন্য এ মসজিদগুলোকে বলা হয় মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স। মডেল মসজিদে মূলত নিচতলাটি ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে রয়েছে ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সেমিনার বা ওয়ার্কশপ আয়োজনের জন্য কনফারেন্স হল, অটিজম সেন্টার, শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিদের জন্য পৃথক অজুখানা ও টয়লেটের ব্যবস্থা, তাদের নামাজের স্থান, হুইলচেয়ারে চলাচলের জন্য প্রশস্ত র‌্যাম্পের ব্যবস্থা। এসব সুবিধা দেশের বড় মসজিদগুলোতেও বিরল।

ইসলামে মসজিদের নির্মাণ এবং মসজিদ সংরক্ষণের প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এজন্য আছে পরকালে পুরস্কার।