ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

তামাক কেন ক্ষতিকারক?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১১ এএম, ৩ আগস্ট ২০২৩ বৃহস্পতিবার

আমাদের দেশে অবাধে তামাক সেবন চোখে পড়ে। সিগারেট, বিড়ি, হুঁকা, জর্দা, গুল, সাদা পাতা—বুঝে না বুঝে ব্যবহারের কারণে সার্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পরিবেশ ভয়ংকর ঝুঁকিতে পড়ছে।

অনেকে দেখা যায়, মুখে গুল রাখেন। গুলের ব্যবহারে মুখে ক্যান্সার হয়। তামাকের ব্যবহারে হার্ট অ্যাটাক, করোনারি হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক হয়। ধূমপান ডায়াবেটিসেরও কারণ।

তামাকের নিয়মিত ব্যবহারের ফলে মানব স্বাস্থ্যের উপর অনেক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। 

১৯৫০ সালে Richard Doll নামক বিজ্ঞানী ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে এটি গবেষণা প্রকাশ করেন যেখানে তিনি ধূমপান ও ফুসফুস ক্যান্সারের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। এর ঠিক চার বছর পর ১৯৫৪ সালে ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি নামক আরেকটি গবেষণা প্রকাশ করেন যেটি চল্লিশ হাজার ডাক্তারের বিশ বছর ধরে করা গবেষণার ফলাফল। সেখানে ধূমপানের সাথে ফুসফুসের সম্পর্কের বিষয় নিশ্চিত করা হয় যার উপর ভিত্তি করে সরকার ঘোষণা করে যে, ধূমপানের ফলে ফুসফুসে ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পায়।

যেসমস্ত বস্তুর ব্যবহার বাদ দিলে অকাল মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস করা যায় তামাক এর মধ্যে শীর্ষে। যত লোক তামাক ব্যবহার করে তার প্রায় অর্ধেক এর ক্ষতিকর প্রভাবে মৃত্যুবরণ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, প্রতিবছর সারাবিশ্বে প্রায় ৬০ লাখ লোক তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবে মারা যায় (সর্বমোট মৃত্যুর প্রায় ১০%) যার প্রায় ৬ লাখ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। বিংশ শতাব্দীতে তামাক প্রায় দশ কোটি ব্যক্তির মৃত্যু ঘটিয়েছে।

একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার কর ডিজিজ কন্ট্রোল এবং প্রিভেনশন (CDC) ও এটাকে সারা বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তামাক মূলত হৃৎপিণ্ড, লিভার ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে।

ধূমপানের ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) (অ্যামফাইসিমা ও ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসসহ) ও ক্যান্সার (বিশেষজ্ঞ ফুসফুস ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার, ল্যারিংস ও মুখ গহ্বরের ক্যান্সার) এর ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়।

তামাক উচ্চ রক্তচাপ ও প্রান্তীয় রোগও সৃষ্টি করতে পারে। এর প্রভাব নির্ভর করে একজন ব্যক্তি দৈনিক কতটি ও কয় বছর ধরে ধূমপান করে তার উপর। অল্প বয়স থেকে এবং অধিক তামাকের ঘনত্ব সম্পন্ন সিগারেট খাওয়ার ফলে ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে। পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত তামাকজাত ধোঁয়া ও পরোক্ষ ধূমপান ও সকল বয়সী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

গর্ভবতী নারীদের উপর তামাকের ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। ধূমপায়ী নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভপাত ঘটার হার বেশি। এছাড়া গর্ভস্থ ভ্রূণেরও অনেক ক্ষতি করে। যেমন অকালের শিশুর জন্ম হওয়া (প্রিম্যাচুর বার্থ) জন্মের সময় নবজাতকের ওজন আদর্শ ওজনের তুলনায় কম হওয়া (LBW) ও সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিসনড্রোম (SIDS) এর হার ১.৪-৩% বেড়ে যায়। অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে যৌন সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার হার ৮৫% বেশি।

সিগারেটে প্রায় পঞ্চাশটিরও বেশি রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যারা মানব শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। তামাকে নিকোটিন নামে আরেকটি উপাদান আছে যা আসক্তি সৃষ্টির জন্য দায়ী। ধূমপান করলে নিকোটিন মানসিক ও শারীরিক নির্ভরশীলতা তৈরি করে। অনুন্নত দেশগুলোতে যে সিগারেট বিক্রি করা হয় তাতে তামাকজাত উপাদান অনেক বেশি থাকে ফলে ওইসব অঞ্চলে ধূমপানজনিত ক্ষতি বা রোগসমূহ অনেক বেশি।

এমএম//