জীবন্ত খাবার বনাম মৃত খাবার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:২৪ পিএম, ৪ আগস্ট ২০২৩ শুক্রবার
একটি খাবার যে অবস্থায় উৎপন্ন হয়, যদি খাবারটি সেই অবস্থাতেই পাওয়া হয়, সেটাই জীবন্ত খাবার। ভালোভাবে হজম হওয়ার মতো পর্যাপ্ত এনজাইন বা পাচক রস জীবন্ত খাবারে থাকে।
সকল জীবিত প্রাণী ও উদ্ভিদ এনজাইম তৈরি করে। এনজাইম ছাড়া জীবন চলতে পারে না। কিন্তু কোনো খাবার যখন উচ্চ তাপে রান্না করা হয়। অথবা প্রক্রিয়াজাত-প্যাকেটজাত করা হয় তখন সেই খাবারের এনজাইমগুলো নষ্ট হয়ে যায়, এনজাইমগুলো তাদের কার্যকারিতা হারায়। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে সেটাই তখন পরিণত হয় মৃত খাবারে।
যখন কেউ মৃত খাবার খান, তখন এই এনজাইমশূন্য খাবার শরীরে শক্তি ও পুষ্টি জোগানোর বদলে উল্টো শরীরের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। এই খাবারকে হজম করার জন্যে শরীরকে তখন প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে হয়। শরীর-মন ক্লান্ত, অবসন্ন, উদ্যমহীন, অবসাদগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ দিনের পর দিন অতিরিক্ত পরিমাণে এই মৃত বাবার গ্রহণ ।
মৃত খাবার : অধিক তাপ ও দীর্ঘসময় নিয়ে রান্না করা সব ধরনের খাবার (সিঙ্গাড়া পুরি পেঁয়াজু বেগুনি চপ কাটলেট পরোটা বিরিয়ানি কাচ্ছি), প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন : চিপস বিস্কুট ক্র্যাকার্স জুস কেক পেস্ট্রি এবং ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় ইত্যাদি। এগুলো যথাসম্ভব পরিহার করার চেষ্টা করুন। এ ছাড়াও অতিসেদ্ধ অর্থাৎ অনেক বেশি সময় নিয়ে রান্না করা শাকসবজিও মৃত খাবারের মধ্যেই পড়ে।
আবার মৃত খাবার হলেও মাছ মাংস ডিম দুধ চাল ডাল ইত্যাদি প্রয়োজনমতো সেদ্ধ করে রান্না করুন। তবে অতিরিক্ত সময় ধরে রান্না করে খাবেন না। কেননা এতে খাদ্যের পুষ্টিমান তো নষ্ট হয়ই, সেইসাথে খাবারটাও হয়ে ওঠে অস্বাস্থ্যকর।
জীবন্ত খাবারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ সব ধরনের তাজা ফল, সালাদ, গ্রিন জুস, বাদাম, মটরশুঁটি, ছোলা, বিভিন্ন প্রকার বীজ ও বিন, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ ইত্যাদি ।
পুষ্টিবিজ্ঞান এবং এনজাইম বিষয়ক গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের একজন নেতৃস্থানীয় গবেষক ড. হাওয়ার্ড এফ লুমিস জুনিয়র। Enzymes : The Key to Health বইতে তিনি বলেছেন, খাবারে ভিটামিন-মিনারেল কতটুকু আছে সে ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক থাকি, কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো খাবারের এনজাইম, যা অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে আমরা সাধারণত খুব একটা সচেতন নই। ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে স্বল্পমেয়াদি কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় বটে, কিন্তু খাবারের এনজাইমের অভাবে শরীরে সৃষ্টি হয় নানাবিধ দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা।
সুস্বাস্থ্যের জন্যে সবার প্রয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান, যেমন : এনজাইম, অক্সিজেন, হরমোন, ফাইটোকেমিক্যাল, বায়ো-ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি এবং লাইফ ফোর্স বা প্রাণশক্তি। যখন খাবারকে উচ্চ তাপে রান্না করা হয়, তখন উপরোক্ত সব উপাদান ধ্বংস হয়ে যায়। এরপরও ভিটামিন, মিনারেল, ফাইটোকেমিক্যাল কিছুটা যদি থেকেও যায়, তবে তার স্বাভাবিক প্রাকৃতিক অবস্থা অনেকটাই বদলে যায়।
এ ছাড়া সুষম খাদ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান ফাইবার বা আঁশ, যা রেচনের জন্যে জরুরি। পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে শাকসবজিতে। কিন্তু অধিক তাপে রান্না করলে ফাইবার বা আঁশ তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আর এ কারণেই দেখা যায়, নিয়মিত শাকসবজি খাওয়ার পরও কারো কারো কোষ্ঠকাঠিন্য সারে না।
গবেষকেরা বলছেন, এ-কালে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক দুর্বল এবং রোগবালাই – বিশেষত অসংক্রামক রোগের হার বেড়ে গেছে পূর্বের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এর একটি বড় কারণ ভুল ও অবৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাস। বর্তমান সময়ে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জীবন্ত খাবারের চেয়ে মৃত খাবারের পরিমাণ অনেকাংশে বেশি। আর মৃত খাবার কখনো একজন মানুষকে সুস্থ রাখতে পারে না ।
আবার এ-কালেও দেখা যাচ্ছে 'হুনজা উপত্যকা' ও 'ব্লু জোন্স' এলাকার অধিবাসীরা শতায়ু হচ্ছেন। এরও অন্যতম প্রধান কারণ তাদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস। তাদের খাদ্যতালিকার বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে তাজা ফল, টাটকা সালাদ ও সবজি, সবুজ লতাপাতা, বাদাম, বীজ ও বিন। অর্থাৎ জীবন্ত খাবার তাদেরকে দিয়েছে শত বছরের নীরোগ জীবন ।
সুতরাং সুস্থ কর্মব্যস্ত রোগমুক্ত দীর্ঘজীবনের জন্যে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জীবন্ত খাবার রাখুন কমপক্ষে ৩০ শতাংশ। যেমন : প্রতিদিন ৩-৪ ধরনের ফল, ৩-৪ ধরনের কাঁচা সালাদ, ৩-৪ ধরনের কাঁচা সবুজ পাতা সহযোগে তৈরি গ্রিন জুস, মুঠোভর্তি বাদাম এবং পরিমাণমতো বীজ ও বিন।
সেইসাথে শাকসবজি অর্ধসেদ্ধ ও অল্প তাপে রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস করুন। খাদ্যতালিকায় মৃত খাবারের পরিমাণ সীমিত রাখুন। প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার যথাসম্ভব বর্জন করুন। আপনার সুস্বাস্থ্যপূর্ণ দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনা বাড়বে।
সূত্র: এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ
ডা. মনিরুজ্জামান ও ডা. আতাউর রহমান
এসবি/