ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২১ ১৪৩১

প্রিয়া হত্যার রহস্য উন্মোচন, গ্রেফতার ২

নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:৪৫ এএম, ৬ আগস্ট ২০২৩ রবিবার


ইপিজেড কর্মী ফারজানা আক্তার প্রিয়াকে (২২) নৃসংশ খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে হত্যা ঘটনার ৩ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুই জনকে গ্রেফতার করেছে। 

শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনসহ হত্যার সাথে জড়িত দুই জনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলো বড়াইগ্রামের মেরিগাছা এলাকার মৃত ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ লকি উদ্দিন (৪২) ও একই গ্রামের মোঃ আব্দুল মমিনের ছেলে  মোঃ বুলবুল আহম্মেদ (৩৫)। 

উপজেলার নগর ইউনিয়নের মেরিগাছা এলাকার শহিদুল ইসলামের মেয়ে এবং ঈশ্বরদী ইপিজেড এর শ্রমিক ফারজানা আকতার প্রিয়াকে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে কুপিয়ে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়। 

পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ফারজানা আক্তার প্রিয়া পাবনা জেলার ঈশ্বরদী ইপিজেডে চাকরি করেন। প্রতিদিন তিনি বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত করতেন। কর্মস্থলে যাতায়াতের পথে একই এলাকার  মোঃ লকি উদ্দিন প্রতিদিনই প্রিয়াকে উত্যক্ত করতো এবং কু-প্রস্তাব দিতো। ভিকটিম প্রিয়া তার পরিবারকে বিষয়টি জানালে আসামি মোঃ লকি উদ্দিনকে একাধিকবার নিষেধ করা হয়। এতে লকি উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয় প্রিয়াকে হুমকি দেয়। 

কু-প্রস্তাবে প্রিয়া রাজি না হওয়ায় একই এলাকার বুলবুল আহম্মেদসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের সাথে প্রিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে লকি উদ্দিন। ৪ জুলাই সন্ধ্যা অনুমান ৭টার দিকে প্রিয়া কাজ শেষে ঈশ্বরদী ইপিজেড থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাত আনুমানিক ৮টা ১০ মিনিটের সময় বড়াইগ্রামের কয়েন বাজারে বাস থেকে নেমে আসামি বুলবুল আহম্মেদের ব্যাটারি চালিত ভ্যানে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। 

পথে মশিন্দা বিলের মাঝখানে চৌরাস্থা পৌঁছামাত্র পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা আসামি  লকি উদ্দিনসহ অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জন ভ্যানের সামনে দাঁড়ায় এবং জোরপূর্বক প্রিয়াকে ভ্যান থেকে নামিয়ে পার্শ্ববর্তী ফাঁকা মাঠে জনৈক আঃ মতিনের পাটক্ষেতে নিয়ে যায়। এসময় লকি উদ্দিন ধারালো চাকু দিয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রিয়ার মুখে, গলায়, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপস), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) এর সমন্বয়ে গঠিত টিমের পরিকল্পনায় এবং তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে অপরাধীদের সনাক্ত করা হয়।  লকি উদ্দিন ও  বুলবুল আহম্মেদকে মেরীগাছা গ্রাম থেকে ঘটনার ৩ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয়। 

গ্রেফতারকৃত লকি ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এঘটনায় বড়াইগ্রাম থানায় ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়। 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা সামছুজেআহা জানান, রংপুর এলাকার অনি নামে এক যুবকের সঙ্গে প্রিয়ার বিয়ে হয়েছিল। তাদের সংসারে একটি সন্তান রয়েছে। তবে পারিবারিক কলহের কারণে বেশ কিছুদিন থেকে প্রিয়া মেরিগাছা গ্রামের বাবার বাড়িতে থেকে ঈশ্বরদী ইপিজেডে কাজ করতেন। চার দিন আগে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। এই হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। 

এদিকে, প্রিয়ার হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন বাবা শহিদুল ইসলামসহ পরিবারের লোকজন।

এএইচ