ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২১ ১৪৩১

চিকিৎসক সোহেলের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় হতভাগ পরিবার-কর্মক্ষেত্র

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৮:৫১ এএম, ১৪ আগস্ট ২০২৩ সোমবার | আপডেট: ০৯:৫৩ এএম, ১৪ আগস্ট ২০২৩ সোমবার

স্ত্রী হাফসার সঙ্গে চিকিৎসক সোহেল তানজিম

স্ত্রী হাফসার সঙ্গে চিকিৎসক সোহেল তানজিম

চাঞ্চল্যকর মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন ‘ইমাম মাহামুদের কাফেলা’র ১০ সদস্য আটকের ঘটনায় সিরাজগঞ্জের চিকিৎসক দম্পতি সম্পৃক্তের ঘটনায় জেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।  স্ত্রী আয়শা ইসলাম হাফসা আটক হলেও পলাতক রয়েছেন চিকিৎসক সোহেল তানজিম রানা। এ ঘটনায় চিকিৎসকের পরিবার ও তার কর্মক্ষেত্র খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিব্রত। 

সিরাজগঞ্জ সদরের পোড়াবাড়ি গ্রামের সাবেক মেম্বর হেলাল উদ্দিন একমাত্র ছেলের ধর্মীয় গোড়ামীপনা, শ্বশুর বাড়ির ইন্ধনেই এই পথে ধাবিত হতে পারে বলে আশংকা করেছেন। এদিকেএলাকার মানুষ সোহেল তানজিদকে নিরহ ও শান্ত স্বভাবের বলে দাবি করেছেন।

ডাঃ সোহেল তানজিম রানা তার ৩ ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের হওয়ায় সবার আদরে বড় হয়েছেন। গ্রামের স্কুল ও হাইস্কুলে লেখাপড়া শেষ করে জেলার অন্যতম মেধাবী বিদ্যাপিঠ উল্লাপাড়া মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসিতে কৃতিত্বের সাথে পাস করে ২০১৫ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। 

সেখান থেকে এমবিবিএস পাস করে গত ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর গত ১২ মে তিনি পরিবারের অমতে নাটোর সদরের চাঁদপুর বাজারে ধর্মান্ধ সাইদুল ইসলাম প্রামানিক (দুলাল) এর মেয়ে মাইশা ইসলাম হাফসাকে বিয়ে করেন। পরে কর্মস্থল সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। 

হঠাৎ গত ২৫ জুলাই তারা নিখোঁজ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পিতা হেলাল উদ্দিন থানায় ৩১ জুলাই জিডি করেন। এরপর শুক্রবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার টাট্রিউলি গ্রামের পাহাড়ে জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহামুদের কাফেলা’র প্রশিক্ষনের আস্তানায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিষ্ফোরক দ্রব্যসহ ১০ জনকে আটক করে পুলিশ। বাকি সহযোগীরা পালিয়ে যায়। 

এর মধ্যে চিকিৎসক তানজিম সোহেল রানার স্ত্রী মাইশা ইসলাম হাফসাও ছিল। 

তাদের আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তাদের পোড়াবাড়ির বাড়িতে চলছে নীরবতা। পিতা হেলাল উদ্দিন ছেলের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা গুরুতর দেশ বিরোধী অপরাধ হিসেবেই দেখছেন। তবে এ কাজে জড়ানোর জন্য ধর্মান্ধ শ্বশুর বাড়ির ইন্ধনকে দায়ী করছেন তিনি। 

হেলাল উদ্দিন জানান, ছেলে ডাঃ সোহেল তানজিমের সাথে নাটোরের  চাঁদপুর বাজার গ্রামের মাইশা ইসলাম আফসার সাথে স্যোসাল মিডিয়ায় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার সুবাদে গত ২৫ মার্চ শ্বশুর সাইদুল ইসলাম প্রামানিক (দুলাল) আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। আপ্যায়নের পর তিনি বলেন, আপনারা আমার বাড়িতে যাবেন। তবে কথা আছে, আমার মেয়েকে দেখাবো না, সে পর্দা করে। বাড়িতেও নেয়া যাবেনা, আপ্যায়ন করা হবে বাড়ির বাহিরে। 

এমন কথা শুনে হতভাগ হয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, এ বিয়েতে আমার মত নেই। কোনভাবেই যেন আমার ছেলের সাথে আপনার মেয়েকে বিয়ে না দেয়া হয়। তারপরও কৌশলে আমাদের অমতে ডেকে নিয়ে বিয়ে দেয় দুলাল। এরপর থেকে আমার ছেলে ও তারা কোন যোগাযোগ করেনি।

ধর্মান্ধ শ্বশুর ও তার মেয়ের প্ররোচনায় ছেলেকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টায় আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। স্থানীয়রাও এ বিষয়ে একমত পোষণ করলেন।

ছেলের এমন দেশ বিরোধী কাণ্ডের শাস্তি দাবি করে হেলাল উদ্দিন বলেন, এমন পরিস্থিতিতে কোন পরিবার যাতে না পড়ে সেজন্য সবার দৃষ্টি রাখার আহবানও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে মাইশা ইসলাম হাফসার বড় ভাই ওমর ফারুক জানান, আমরা ইসলামের অনুসারী বাড়ির সবাই পর্দা করে। তাই বিয়ে আয়োজন ওইভাবে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তবে আমরা কোনভাবেই জঙ্গি সংশ্লিষ্টায় জড়িত না। আমরাও বুঝে উঠতে পারছিনা, কিভাবে তারা ওই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হলো।

এদিকে ডাঃ সোহেল তানজিম রানা এলাকায় শান্ত স্বভাবের বলে পরিচিত। হঠাৎ স্ত্রীসহ তার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় বিব্রত পরিবারসহ গ্রামবাসী। 

বিষয়টি নিয়ে ডাঃ সোহেল তানজিম রানার কর্মস্থল খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হতভাগ ও মর্মাহত। একজন চিকিৎসক কিভাবে জঙ্গি সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে পারে? বললেন হাসপাতালের জনপ্রশাসন বিভাগের ডিপুটি ম্যানেজার কৌশিক আহমেদ। 

তিনি জানান, গত ৯ মাস আগে আমাদের হাসপাতালের আইসিইউতে যোগদান করে তার কর্মজীবন পরিচালিত হচ্ছিল। হঠাৎ করে তিনি কাজে যোগদান না করলে তার বাবাকে অবহিত করি। পরে তার স্ত্রীরও হদিস না মেলায় বাবা হেলাল উদ্দিনকে ডেকে নিয়ে আমাদের মাধ্যমে থানায় জিডি করা হয়। পরে জানতে পারি তার স্ত্রী জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় আটক হয়েছেন। তিনিও পলাতক রয়েছেন। বিষয়টি শুনে আমরা চরমভাবে বিব্রত ও মর্মামত হয়েছি।  

এদিকে, এনায়েতপুর থানার ওসি আনিছুর রহমান জানান, জিডি হবার পর থেকে আমরা চিকিৎসকের সন্ধান পেতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছি। এরমধ্যে একজন শুনেছি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় জঙ্গি আস্তানা হতে তার স্ত্রী আটক হয়েছে। বাকি ডাঃ সোহেলকে উদ্ধারেও পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে।

এএইচ