ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

সৌদিতে নিহত রুবেলের মরদেহ ফেরাতে জটিলতা

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:১৪ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০২৩ বুধবার

গত ২ জুলাই ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে কেঁদেই চলেছেন মা ময়না খাতুন। দেড় মাস ধরে কেঁদেই যাচ্ছেন ছেলের মরদেহটা একবার নিজ চোখে দেখতে। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে কিন্তু ছেলের মরদেহ দেশে আসবে কিনা তা নিশ্চিত কিছুই বলতে পারছেন না তিনি।

পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরবে এমন আশায় যশোরের শার্শার রুবেল হোসেন (২৫) গিয়েছিলেন সৌদিতে। কিন্তু গত ২ জুলাই দুপুরে তিনি কর্মস্থলে মারা যান। ২৭ জুলাই মরদেহ দেশে ফেরার কথা থাকলেও রুবেলের কফিনে কিশোরগঞ্জের মোজাম্মেলের মরদেহ চলে আসে। তবে মরদেহের সাথে পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্রে ছিল রুবেলের নাম-ঠিকানা। এতে বাঁধে জটিলতা। 

নিহত রুবেল হোসেন শার্শা উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের বাগুড়ী বেলতলা দক্ষিণপাড়া গ্রামের হৃতদরিদ্র ফারুক হোসেনের ছেলে।

মৃতদেহের কফিনটি বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গত ২৭ জুলাই দুপুর ২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিয়ে আসে স্বজনরা।

গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দেখার পরে তৈরি হয় নানা ধূম্রজাল, মরদেহটি দেখে রুবেলের মা, বাবা ও পরিবারের কেউ চিনতে পারেনি যে এটা তাদের সন্তান। পরে অনেকটা ইচ্ছার বাইরে মরদেহটি ওই দিন রাতে বাগআঁচড়া সাধারণ কবরস্থানে দাফন করা হয়। 

পরের দিন ২৮ জুলাই সৌদি প্রবাসী কিশোরগঞ্জের মোজাম্মেল হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করে নিহতের বাড়ি কিশোরগজ্ঞে নিয়ে যান। 

সৌদির হাসপাতালের মর্গে এখনও পড়ে আছে রুবেলের মরদেহ। ওখানে যে কাগজপত্র রয়েছে সেটা মোজাম্মেলের। ওই কাগজপত্রে রুবেলের মরদেহ দেশে ফেরত পাঠাতে পারছে না সৌদি প্রশাসন ও প্রবাসীরা।

রুবেল হোসেনের মা দিনমজুর ময়না খাতুন জানান, তার বড় ছেলে সৌদিতে যে বসের সাথে কাজ করতেন, সেই বস লাথি মারলে দুই তলা থেকে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে ফুসফুস ফেটে নিহত হন রুবেল। তিনি আরও জানান, এক বছর দুই মাস হলো সৌদিতে গেছে রুবেল, এক বছরে মাত্র এক লাখ টাকা পাঠিয়েছে। দেশে আমরা এখনও সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণে আছি। ঋণ শোধ হওয়ার আগেই আমার রুবেলকে লাশ হতে হলো। 

দায়দেনা দিনমজুরি করে কিভাবে এই ঋণ পরিশোধ করবো। আদৌ আমার ছেলের মরদেহ পাবো কি পাবো না সেটাও নিশ্চিত কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন ময়না খাতুন।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র পাল জানান, বিষয়টি জানানোর পর আমরা ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে মরদেহটি দ্রুত ফেরত আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছি। 

এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। অফিস ঢাকাতে হওয়ায় দরিদ্র এই পরিবারের পক্ষে ঢাকায় গিয়ে তদবির করাও সম্ভব নয় বলেও জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন। 

এএইচ