ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

সুস্থতার ৬ সূত্র

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৫০ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০২৩ বুধবার | আপডেট: ০৩:৫২ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০২৩ বুধবার

হৃদরোগ বলতে সাধারণভাবে করোনারি হৃদরোগকেই বোঝানো হয়। বিশ্বে প্রতিবছর পৌনে দুই কোটিরও বেশি মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি হচ্ছে হৃদরোগ। সেখানে বছরে ৩০ শতাংশ মানুষ মৃত্যুবরণ করে এ রোগে। জীবনদৃষ্টি ও জীবনাচারে ভুলের কারণে বাংলাদেশসহ প্রাচ্যের দেশগুলোতেও এ রোগের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। গবেষকেরা বলছেন, হৃদরোগ ইতোমধ্যে বাংলাদেশে নীরবে মহামারি আকার ধারণ করেছে।

করোনারি হৃদরোগের অত্যাধুনিক চিকিৎসা এখন বিশ্বজুড়ে প্রচলিত- এনজিওপ্লাস্টি, বাইপাস সার্জারি, রোবটিক সার্জারি ইত্যাদি। কিন্তু খোদ চিকিৎসকেরাই বলছেন, সমস্যা থেকে যাচ্ছে সমস্যার জায়গাতেই। আর এসব পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীর পুনঃব্লকেজও প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীরা একটি রোগচক্রের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

গত শতকের শেষের দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা. ডিন অরনিশ সর্বপ্রথম এর কার্যকর সমাধানটি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। প্রাচ্যের সাধকদের হাজার বছরের জ্ঞান-উপলব্ধির সাথে তিনি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক চমৎকার সমন্বয় ঘটান। হৃদরোগীদের লাইফস্টাইল বা জীবনযাপন পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনে তিনি উদ্ভাবন করেন করোনারি হৃদরোগের ফলপ্রসূ চিকিৎসাপদ্ধতি। অরনিশের উদ্ভাবনকে স্বীকৃতি দিয়ে বিশেষ গবেষণা-প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশন, ল্যানসেট ও আমেরিকান জার্নাল অব কার্ডিওলজি-র মতো বিশ্বের প্রথমসারির চিকিৎসা-সাময়িকীগুলোতে এবং এর অন্তর্ভুক্তি ঘটে চিকিৎসাবিজ্ঞানের মূলধারায়।

আসলে সুস্থতা ও নিরাময়ের জন্যে সুস্থ জীবনাচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ক্রমাগত ভুল জীবনযাপনের ফলে যে রোগের সূত্রপাত, জীবনাচার পরিবর্তনই হতে পারে তার প্রকৃত সমাধান। পৃথিবীজুড়ে আধুনিক ধারার চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা তাই একবাক্যে বলছেন, সুস্থ জীবনের জন্যে সুস্থ জীবনাচারের কোনো বিকল্প নেই। 

সুস্থ জীবনাচারের জন্য প্রয়োজন মূলত ছয়টি বিষয়। সেগুলো হলো : সঠিক জীবনদৃষ্টি, মেডিটেশন, বৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাস, ইয়োগা, নিয়মিত হাঁটা এবং কাউন্সেলিং। আমরা দেখেছি, এ বিষয়গুলোর প্রতিটিতেই যারা সমান মনোযোগ দিয়েছেন এবং অনুসরণে আন্তরিক থেকেছেন, তারা ক্রমশ হয়ে উঠেছেন আগের চেয়ে সুস্থ প্রাণবন্ত ও কর্মোদ্যমী।

এমনও হৃদরোগী আছেন, যার হৃৎপিণ্ডের ৭০ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ছয়টি ব্লকেজ শনাক্ত হয়েছিল এবং হাঁটাচলা তো দূরে থাক; বরং প্রাত্যহিক ছোটখাটো কাজকর্ম করতে গিয়েও যিনি তীব্র বুকব্যথায় আক্রান্ত হতেন, তিনিই এখন সুস্থ জীবনাচার অনুসরণ করে বেশ ভালো আছেন। একজন পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতোই প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টা পার্কে হেঁটে বেড়াচ্ছেন তারুণ্যদীপ্ত গতিতে।

প্রিয় সুহৃদ, জীবন আপনার। দেহ-মন আপনার। এই জীবনকে সুন্দর করার, দেহ-মনকে সুস্থ রাখার দায়িত্বও আপনারই।

তাই সুস্থতার ব্যাপারে বিশ্বাসী হোন। সচেতনভাবে উদ্যোগী হোন। আজ থেকেই প্রতিদিন একটু একটু করে সুস্থ জীবনাচারে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন। আপনি সুস্থ থাকবেন।

আপনার সর্বাঙ্গীণ সুস্থতা ও সাফল্য কামনা করি।

লেখাটি ডা. মনিরুজ্জামানের "এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ" বই থেকে নেওয়া।

এমএম//