ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

২১শে আগস্ট: শালীহর গণহত্যা দিবস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৯ এএম, ২১ আগস্ট ২০২৩ সোমবার

১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট ময়মনসিংহের গৌরীপুরে শালিহর গ্রামে পাক হানাদার ও তাদের দোসররা মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে গিয়ে ওই দিন শালিহর গ্রামের নিরীহ ১৪ জনকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এ সময় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয় বেশ কয়েকটি বাড়িতে। 

শুধু নির্মমভাবে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পাক হানাদাররা, ধরে নিয়ে যায় এ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হাসিমের বাবা ছাবেদ হোসেন বেপারীকেও। তিনি গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট নিলুফার আনজুম পপি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও একুশে টেলিভিশনের সাংবাদিক আজহারুল ইসলাম অপুর পিতামহ।

রক্তঝরা দিনে এসব বীর শহীদের স্মরণে প্রতিবছর ২১ আগস্ট গৌরীপুর শালিহর গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন উপজেলা প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা, বিভিন্ন সংগঠনসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

স্থানীয় কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, ১৯৭১-এর ২১ আগস্ট পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা রেলযোগে গৌরীপুরে আসে। এদিন তারা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে গিয়ে পশ্চিম শালিহর গ্রামে হানা দিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হাসিমের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এ সময় পাকবাহিনী ধরে নিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসিমের বাবা ছাবেদ হোসেন বেপারীকে। এর আগে ১৬ মে ধরে নিয়ে যায় সাংবাদিক সুপ্রিয় ধর বাচ্চুর বাবা মধুসূদন ধরকে। তারা আজও ফিরে আসেননি।

তারা আরও জানান, পাকবাহিনী এ গ্রামের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে ধরে এনে শালিহর কদমতলা নামক স্থানে ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে সেখানেই তাদের কবর দেওয়া হয়। পাক বাহিনীর ব্রাশফায়ারে গণশহীদরা হলেন এ উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের শালিহর গ্রামের মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, নবর আলী, কিরদা সুন্দরী, শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, তারিণী কান্ত বিশ্বাস, খৈলাস চন্দ্র নমদাস, শত্রুঘ্ন নমদাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, দেবেন্দ্র চন্দ্র নমদাস, কামিনী কান্ত বিশ্বাস ও রায় চরণ বিশ্বাস।

২০০৮ সালে সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মরহুম ডা. ক্যাপ্টেন (অব) মজিবুর রহমান ফকিরের হস্তক্ষেপে উল্লিখিত বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।

২০১৮ সালে জেলা পরিষদ সদস্য এইচএম খায়রুল বাসারের হস্তক্ষেপে স্মৃতিসৌধটি সংস্কার ও তাতে গণশহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। ২০২১ সালে গণপূর্ত বিভাগের অধীনে ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে গণশহীদদের স্মরণে একটি নতুন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।

তারপর থেকে প্রতিবছর ২১ আগস্ট উপজেলা প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন গণশহীদদের প্রতি পরম শ্রদ্ধায় স্মৃতিসৌধে পুষ্প নিবেদন করে তাদের আত্মত্যাগকে চির জাগরূক করে রাখে।

এএইচ