ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

ইটালিতে মৌসুমী কর্মী হিসেবে যেভাবে যাবেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৪০ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২৩ রবিবার

মৌসুমী কর্মী নেয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপের অভিন্ন নীতি নেই৷ তবে প্রতিটি দেশের আছে নিজস্ব নীতিমালা৷ ইউরোপের দেশগুলোতে মূলত কৃষিখাতেই মৌসুমী কর্মীর প্রয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি৷ 

মৌসুমী কর্মীদের জন্য বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভিসা ইস্যু করা হয়৷ আর এই ভিসা নিয়ে যারা আসেন তাদেরকে সাধারণত অন্য কাজ করতে দেয়া হয় না৷ কাজ শুরুর আগে আগে তাদের ইউরোপে প্রবেশ করতে দেয়া হয় এবং কাজ শেষে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়৷

এই সময়টিতে অন্য কাজ করতে দেয়া না হলেও ইউরোপের কিছু দেশ মৌসুমী ভিসায় আসা কর্মীদের পড়াশোনার বা প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়৷

ইটালিতে মৌসুমী কর্মী হিসেবে আসতে চাইলে, যে বিষয়গুলো আপনার জানতে হবে-

এক ঝলকে

ইটালির ভিসা নয় মাস থেকে দুই বছর মেয়াদি হতে পারে৷ তবে এটা নির্ভর করবে চাকরির ধরন, নিয়োগদাতা এবং খাতের ওপর৷ তাই নিয়মগুলো দেখে নিন এবং নিশ্চিত করুন আপনি ভিসায় উল্লেখিত মেয়াদের চেয়ে বেশিদিন আপনি ইটালিতে থাকছেন না৷

আপনি যদি ‘ডিক্রেটো ফ্লুসি’-এর অধীনে ইটালি আসেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যদি আপনার চাকরি থাকে, তবে আপনি ভিসা নবায়ন করতে পারবেন৷

মৌসুমী কাজের ভিসা পেতে, অবশ্যই ২০ দিন থেকে নয় মাস পর্যন্ত কাজের অনুমতি থাকতে হবে৷ কাজের চুক্তি হয়ে গেলে, আপনাকে ভিসায় উল্লেখিত সময় পর্যন্ত থাকার অনুমতি দেয়া হবে৷

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন https://vistoperitalia.esteri.it/home.aspx এই ওয়েবসাইট থেকে আপনি ভিসা পাওয়ার যোগ্য কিনা তা যাচাইয়ের সুযোগ আছে৷

মৌসুমী ভিসার ঘোষণা

প্রতিবছর এ সংক্রান্ত একটি ডিক্রি জারি করে ইটালি সরকার৷ সাধারণত জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে এটি জারি করা হয়৷ সরকারি গেজেটা উফিশিয়ালে এই ঘোষণা দেয়া হয়৷ যার লিংক https://www.gazzettaufficiale.it/atto/serie_generale/caricaDettaglioAtto/originario?atto.dataPubblicazioneGazzetta=2023-01-26&atto.codiceRedazionale=23A00232&elenco30giorni=false

এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও ঘোষণার লিংকটি দেয়া থাকে৷ ঘোষণাতে উল্লেখ করা হয়, এ বছর কতগুলো মৌসুমী ভিসা বা সিজনাল ওয়ার্কিং ভিসা দিচ্ছে ইটালি৷

প্রতি বছরের মার্চে ‘ডিক্রেটো ফ্লুসি’ প্রকাশ করা হয়৷ সেখানে ঘোষিত চাকরির জন্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ থাকে৷ এ সংক্রান্ত তথ্য দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাবে৷

কখনও কখনও বসন্তের শেষ দিকে অথবা গ্রীষ্মের শুরুতে আরো কিছু মৌসুমী ভিসা ঘোষণা করা হয়৷ বিশেষ করে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মী ঘাটতির কথা সরকারকে বোঝাতে পারলেই এই ঘোষণা আসে৷

জেনে রাখা ভালো, কয়েক বছর ধরে ইটালি বলে আসছে ডিক্রি ঘোষণার কয়েক ঘন্টা বা দিনের মধ্যে তাদের কোটা পূরণ হয়ে গেছে৷

কত সংখ্যক ওয়ার্ক পারমিট জারি করা হয়?

২০২৩ সালে ইউরোপের বাইরের দেশ থেকে কর্মী আনতে আত্মকর্মসংস্থানের অধীনে পাঁচশটি ভিসা এবং মৌসুমী কাজের জন্য ৪৪ হাজার ভিসা ঘোষণা করেছিলো দেশটি৷

বেশিরভাগ মৌসুমী ভিসা নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলের জন্য কৃষি, পর্যটন এবং হোটেল খাতে দেয়া হয়৷

২০২৩ সালের ঘোষণায় চালক, ভবন নির্মাণ, পর্যটন এবং হোটেল, টেলিযোগাযোগ, যন্ত্রপাতি, জাহাজ নির্মাণ এবং খাদ্য উৎদনখাতে মৌসুমী কর্মী ভিসা দিয়েছে ইটালি৷

যেখানে চাকরি খুঁজবেন

চাকরি খোঁজার জন্য বেশ কয়েকটি জব পোর্টাল আছে ইটালিতে৷ ইউরেস থেকে ইটালিতে চাকরি খোঁজার সুযোগ রয়েছে৷ তবে এই সাইটে দক্ষতা এবং যোগ্যতা সম্পন্ন চাকরির খোঁজ বেশি পাওয়া যায়৷ এই সাইটের লিংক: https://eures.ec.europa.eu/select-language?destination=/node/11

ইনফোজবস থেকেও সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরি খোঁজ পাওয়া যাবে৷
ইনডিড থেকে পেশাভিত্তিক এবং অঞ্চলভিত্তিক চাকরি খোঁজ মিলবে৷
গ্লাসডোর থেকে ইংরেজি ভাষার চাকরি সম্পর্কে জানা যাবে৷
মনস্টার থেকেও বিভিন্ন চাকরি খোঁজ মিলবে, একইসঙ্গে সিভিও আপলোড করার সুযোগ দেয় সাইটটি৷

**এই ওয়েবসাইটগুলোতে তালিকাভুক্ত কোনও চাকরির জন্য ইনফোমাইগ্রেন্টস দায়ী নয়, আপনাকে অবশ্যই বিজ্ঞাপনের শর্তগুলো সাবধানে দেখতে হবে৷ ওয়েবসাইটগুলোর সেবা পেতে কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে, তা যাচাই করে তবেই সেবা নিন৷

আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, বসনিয়া হার্ৎসেগোভিনা, মিশর, এল সালভাডর, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, জর্জিয়া, ঘানা, গুয়েতেমালা, ভারত, আইভরি কোস্ট, জাপান, কসোভো, মালি, মরিশাস, মলডোভা, মন্টেনেগ্রো, মরক্কো, নাইজার, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, পেরু, ফিলিপাইনস, নর্থ মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্র, সেনেগাল, সার্বিয়া, সাউথ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, সুদান, টিউনিশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকেরা এসব চাকরির জন্য আবেদনের যোগ্য৷

আপনাকে অবশ্যই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশের নাগরিক হতে হবে৷
আপনাকে অবশ্যই ইটালিতে একটি চাকরির প্রস্তাব থাকতে হবে৷
আপনার অবশ্যই একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে৷
আপনার রেকর্ডে অপরাধী হিসেবে কোনো তথ্য থাকতে পারবে না৷
আপনাকে অবশ্যই ইটালিয়ান ভাষায় কথা বলতে পারতে হবে৷
ইটালিতে নিজের জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ থাকতে হবে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইমিগ্রেশন পোর্টাল অনুযায়ী ভিসার জন্য ১১৬ ইউরোর মতো অর্থ খরচ হয়৷ তিন থেকে ১২ মাসের রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের অনুমতির কার্ড নিতে খরচ হবে আরো ৪০ ইউরো৷ আর মেয়াদ যদি এক বছর থেকে দুই বছরের মধ্যে হয়, তাহলে দিতে হবে ৫০ ইউরো৷ দীর্ঘমেয়াদি রেসিডেন্স কার্ডের জন্য প্রয়োজন হবে একশ ইউরো৷ এটি অবশ্য দক্ষ কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য৷ এ ছাড়াও আবেদন প্রক্রিয়া ও পোস্টাল কিটের জন্য প্রশাসনিক খরচ ৩০ ইউরো, অফিশিয়াল স্ট্যাম্পের জন্য ১৬ ইউরো এবং বীমার জন্য ৩০.৪৬ ইউরো খরচ করতে হবে৷

নোট: মৌসুমী কর্মী ভিসা দিয়ে আপনি পরিবারের কোনও সদস্যকে আনতে পারবেন না৷ এমনকি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে বসবাসের অনুমতিও চাইতে পারবেন না৷

যেভাবে আবেদন করতে হবে

চাকরির প্রস্তাব পেলেই আপনি অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন৷ অথবা আপনার দেশে থাকা ইটালিয়ান দূতাবাস বা কনস্যুলেট থেকেও ভিসার আবেদন করা যাবে৷

ইমিগ্রেশন কাউন্টার দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন৷
এখানে আপনাকে একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে৷ নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র আপলোড করতে হবে৷

ইটালিতে অনেক বিষয়ে অফিশিয়াল আবেদনের জন্য আপনার একটি পিইসি থাকতে হবে৷ এর অর্থ হলো একটি নিরাপদ ও আইনি ভিত্তিযুক্ত ইমেইল অ্যাড্রেস৷ 

ইটালিতে থাকুক বা না থাকুক, সব ইটালীয় নাগরিকেরা এটির জন্য অনুরোধ জানাতে পারেন৷ এছাড়াও, ইউরোপীয় এবং ইউরোপের বাইরের প্রাপ্তবয়স্করা তাদের অনুরোধ জানাতে পারেন, কিন্তু বেশিরভাগ সময় ইটালিতে একটি আবাসিক ঠিকানার কথা জানতে চাওয়া হয়৷ অনেক ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে পিইসি নেয়া যায়৷ এটি একটি সাধারণ ই-মেইল ঠিকানা নয় এবং এটি ছাড়া অনেক কিছুর জন্য আপনাকে জটিলতা পোহাতে হতে পারে৷ যেখান থেকে পিইসি পাবেন: https://www.agid.gov.it/index.php/it/piattaforme/posta-elettronica-certificata/elenco-gestori-pec৷

 **পিইসি চেয়ে অনুরোধ করতে আপনার একটি বৈধ পরিচয়পত্র লাগবে৷ ইটালীয় পোস্ট অফিস এক বছরের জন্য পাঁচ ইউরোর বিনিময়ে সাবস্ক্রিপশন দেয়৷ কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে ট্রায়ালের সুযোগ দেয়৷

ইটালিতে সাধারণত সপ্তাহে ৪০ কর্মঘণ্টা কাজের অনুমতি থাকে৷ তবে আপনি চাইলে ওভারটাইম করতে পারবেন৷

একজন কর্মীকে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১১ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ দিতে হবে৷ প্রতি সাত দিনে অন্তত একটি দিন ছুটি দিতে হবে৷

আপনি যদি পূর্ণকালীন কাজ করেন, তবে প্রতি বছরে কমপক্ষে চার সপ্তাহ বেতনসহ ছুটি পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷

যখন আপনাকে জাতীয় মানদণ্ডের চেয়ে কম বেতন দেয়া হচ্ছে, বা কর্মঘণ্টার চেয়ে কম মজুরি দেয়া হচ্ছে, তখন বুঝবেন আপনি শোষণের শিকার হচ্ছেন৷ বারবার ওভারটাইম করতে বলা হলে এবং সাপ্তাহিক ছুটি, মজুরিসহ ছুটি, অসুস্থতাজনিত ছুটি দেয়া না হলেও বুঝবেন আপনাকে শোষণ করা হচ্ছে৷

এ অবস্থায় বিনা খরচে ৮০০২৯০২৯০ এই নম্বরে ফোন দিতে পারেন৷ এ

এসবি/