বিশ্বনেতাদের চিঠির জবাব দিলেন আরাফাত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:৩৮ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০২৩ বুধবার
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেন ১৬০ বিশ্বনেতা। সেই চিঠিরই জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ এ আরাফাত।
বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক বার্তায় চিঠির জবাব দেন তিনি।
তিনি লেখেন, অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়ে বৈশ্বিক নেতাদের চিঠির দ্রুত প্রতিক্রিয়া:
শ্রম আদালতে বিচারাধীন বর্তমান বিচারিক মামলার অভিযোগকারীরা গ্রামীণ টেলিকমের কর্মী। এখানে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। শ্রমিকরাই মামলা নিয়ে এসেছে এবং এই মামলা নিয়ে তারা কি করতে চায় তা সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তাদের।
দ্বিতীয় শ্রম মামলাটি, শ্রম আইন লঙ্ঘনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের জন্য শ্রম বিভাগ থেকে করা হয়। প্রফেসর ইউনূসের পক্ষ থেকে অভিযোগগুলো সঠিক নয় এমন কোনো প্রমাণ আদালতে পেশ করা হয়নি। যা দাবি করা হয়েছে তা হলো ‘ব্যতিক্রমবাদ’। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
বাংলাদেশের আইনে বিচারকদের একটি প্যানেল গঠন করে তা পরিবর্তন পর্যালোচনা করার ক্ষমতা কোনো কর্তৃপক্ষের নেই। শ্রম আদালতের সভাপতিত্ব করেন একজন একক বিচারক। প্রফেসর ইউনূস শ্রম আদালতের বিচারকদের একটি প্যানেলের সামনে রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করার সুযোগ পাবেন। তারপরে হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের শরণাপন্ন হবেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এফআইআর অনুযায়ী, আইন অনুমোদিত সংস্থার তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷ সরকারকে অভিযোগ পর্যালোচনা করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিচারকদের একটি প্যানেল গঠন করার অনুমতি দেওয়ার কোনো আইন নেই। যে কোনো কর্তৃপক্ষের যে কোনো অভিযোগ পর্যালোচনার জন্য মূলত আইন লঙ্ঘন অভিযোগের তদন্তের প্রয়োজন হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ঠিক সেটাই করছে।
এর আগে গত ২৭ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে চিঠি লেখেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার একদিন পরই আগামী ৩১ আগস্ট পুনরায় ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচারিক কাজ শুরু হওয়ার কারণে ১০০ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ জনেরও বেশি বিশ্ব নেতা একটি নতুন চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।
চিঠির শুরুতে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ সম্বোধন করে লেখা হয়েছে- আমরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতার পাশাপাশি বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনাদের জাতি যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে আমরা তার প্রশংসা করি।
কিন্তু, সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি দেখেছি তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনে প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তা হলো- নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন, সম্প্রতি তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি বলেই আমাদের বিশ্বাস। এর আগে ৪০ জন বিশ্বনেতা তার নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আপনার কাছে যে আবেদন করেছিলেন এই চিঠিটি তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলারই চেষ্টা।
আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আপনি অবিলম্বে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন।
তারপর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা রাখার সুযোগসহ আপনার দেশের মধ্য থেকে নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেল দ্বারা অভিযোগের পর্যালোচনা করা হবে। আমরা নিশ্চিত, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী এবং শ্রম আইনের মামলাগুলোর যে কোনো পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করলে তিনি খালাস পাবেন। আপনি জানেন, ‘কীভাবে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ আন্তর্জাতিক অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হতে পারে’- এ নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের কাজ আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণামূলক।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিরা কীভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন তিনি তার একটি প্রধান উদাহরণ। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি, তিনি যেন নিপীড়ন বা হয়রানি মুক্ত হয়ে তার উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
চিঠির সমাপ্তি টানা হয়েছে এভাবে ‘আমরা আশা করি, আপনি এই আইনি সমস্যাগুলোর সমাধান একটি সমীচীন, নিরপেক্ষ এবং ন্যায়সংগত পদ্ধতিতে নিশ্চিত করবেন। এর পাশাপাশি আসছে দিনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং সব ধরনের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান (প্রদর্শন) নিশ্চিত করবেন। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে এই বিষয়গুলোর সমাধান করা হয় তা ঘনিষ্ঠভাবে নজরে রাখার জন্য আমরা বিশ্বের লাখ লাখ উদ্বিগ্ন নাগরিকদের শিবিরে যোগ দেব’।
কেআই//