সাফল্য জাপটে ধরুন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৫৮ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:৫৯ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার
একটা উর্দু শায়ের আছে। শায়ের মানে হচ্ছে কবিতা। 'অ্যা জজবায়ে দিল আগার ম্যা চাহু হারচিজ মোকাবিল হো যায়ে'। হে আমার উষ্ণ হৃদয় (জজবায়ে দিল) দিলের জজবা আরকি। যদি আমি চাই সবকিছু আমি পেতে পারি।
'মঞ্জিলকে লিয়ে দো’কদম চলু তো মঞ্জিল নজদিক চালে আয়ে'। আমি আমার লক্ষ্যপানে যদি দুই কদম অগ্রসর হই দুই পা ফেলি লক্ষ্য আমার দিকে চলে আসবে তার জায়গা ছেড়ে।
সাফল্য সফল মানুষের পেছনে দৌড়ায়। সাফল্য সফল মানুষকে আলিঙ্গন করে। সফল মানুষ কখনো সাফল্যের পেছনে দৌড়ায় না। সাফল্যের পেছনে দৌড়ে তাকে ধরা যায় না, সাফল্যকে আলিঙ্গন করতে হয় সাফল্যের দিকে এগোতে হয়। পেছনে দৌড়ানো না, সাফল্যের দিকে এগোতে হয়।
এই সাফল্যের দিকে এগোনোটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ তার দিকে যেতে হবে পেছন থেকে তাকে ধাওয়া করলে হবে না। পেছন থেকে ধাওয়া করে কখনো ধরা যায় না তাকে। কখনো না। আপনার আসলে সাফল্যের দিকে এগোতে হবে।
এই সাফল্যের দিকে এগোনোটা হচ্ছে খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাফল্যের প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করতে হবে।
রামায়ণের মূল চরিত্র কী? রঘুপতি রাঘব রাজা রাম, রামের দুই ছেলে কুশ এবং লব। কুশ বড় লব হচ্ছে ছোট।
তো তারা একবার মায়ের সাথে মুনির সাথে দেখা করার জন্যে গিয়েছে। সদ্য তরুণ লব। মুনির আশ্রম থেকে বের হয়ে শহর ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যা দেখছে তাই ভালো লাগছে। স্বাভাবিকভাবে গ্রাম থেকে যখন কেউ আসে শহর খুব ভালো লাগে। তো যা দেখে তাই ভালো লাগে।
শহরে হঠাৎ একটা সুন্দর ঘোড়া তেজি ঘোড়া কোনো সাওয়ারি নাই। একাই ঘুরে বেড়াচ্ছে। লব জিজ্ঞেস করল লোকজনকে যে, এরকম একটা সুন্দর ঘোড়া কোনো সাওয়ারি নাই একা ঘুরে বেড়াচ্ছে!
লোকজন বলল যে, এই ঘোড়ার পিঠে কেউ উঠতে পারে না। এই ঘোড়ার নাম হচ্ছে কলঙ্কি। এর পিঠে কেউ উঠতে পারে না। এবং আমাদের শহরে কোনো রাজা নাই যে এই ঘোড়ার পিঠে উঠতে পারবে। তো যে এই ঘোড়ার পিঠে উঠতে পারবে তাকেই এই নগরের অধিবাসীরা রাজা হিসেবে গ্রহণ করবে।
তো তরুণ লব অশ্বচালাতে জানে ঘোড়া চালাতে জানে, ঘোড়সওয়ার খুব দক্ষ। সে ঘোড়ার পেছনে দৌড়ানো শুরু করল। তো ঘোড়ার সাথে তো সে দৌড়ে পারবে না। সেও দৌড়াচ্ছে ঘোড়াও দৌড়াচ্ছে। ঘোড়াও দৌড়াচ্ছে সেও পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে।
এদিকে ছেলেকে ফিরতে না দেখে মা সীতা চিন্তায় পড়ে গেলেন। বড়ভাই কুশকে পাঠালেন খুঁজতে যে, নিয়ে আস কোথায় কী হচ্ছে দেখ! সে গিয়ে দেখে যে, লব বিষণ্ন হয়ে বসে আছে হতাশ যে-এত দৌড়ালাম ঘোড়াটাকে ধরতে পারলাম না। কিন্তু সে প্রতিজ্ঞা করেছে যে, ঘোড়া না আনা পর্যন্ত ঘোড়ার পিঠে না বসা পর্যন্ত সে বাড়ি ফিরে যাবে না।
তখন কুশ তাকে বলল যে, দ্যাখো! ঘোড়া ধরার প্রক্রিয়া এটা নয়। ঘোড়ার পেছনে দৌড়ে তুমি কোনোদিন ঘোড়া ধরতে পারবে না। ঘোড়ার দিকে তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে সামনে থেকে। তোমাকে তো ঘোড়াকে চিনতে হবে। ঘোড়া তোমাকে চিনবে তোমার সাথে ভাব হবে তারপরে না তুমি ঘোড়ার পিঠে উঠবে।
আর পেছনে পেছনে যদি দৌড়াও ঘোড়াও দৌড়াতে থাকবে তুমিও দৌড়াতে থাকবে। আজীবন দৌড়াতে পারবে। কিন্তু ঘোড়ার পিঠে কখনো উঠতে পারবে না। তো সাফল্যের পেছনে কখনো দৌড়াতে হয় না। সাফল্যের দিকে যেতে হয়। সাফল্যের সামনে যেতে হয় সাফল্যের পথে যেতে হয়। সরাসরি সাফল্যের পথে সামনাসামনি যাতে সাফল্য আপনাকে চেনে। সে যেন পছন্দ করে।
কোনো মেয়েকে যদি পেছন থেকে গিয়ে প্রস্তাব দেন, ওগো! আমি এত দেনমোহরে আমি তোমাকে বিবাহ করিব। বলো, কবুল। মেয়ে কবুল বলবে? না তাকে সামনে যেতে হবে। সামনে থেকে তাকে দেখতে হবে, তারপরে যা যা বলার তা বলেন। তারপরে বলেন যে, এবার কবুল বলো, তখন না সে কবুল বলবে। তো সবসময় এটা মনে রাখবেন, সরাসরি সামনাসামনি সামনের দিকে যেতে হবে, পেছন থেকে সাফল্যের পেছনে দৌড়ানো যাবে না।
লব এরপরে সামনে গেল। সামনে থেকে তার দিকে এগিয়ে এলো। তো নিরীহ নিরুপদ্রব এসে এই যে ঘাড়ে একটু আদর করল। ঘোড়া দাঁড়িয়ে রইল। সে হট করে উঠে পড়ল, ঘোড়ায় চেপে বসল এবং রাজা হয়ে গেল।
অর্থাৎ আমরা অধিকাংশ মানুষ সাফল্যের পেছনে ছুটি যে, অমুক লোক এটা করে সফল হয়েছে আমিও এটা করে সফল হবো। অমুকে বিদেশে গিয়েছে আমিও বিদেশে যাব। অমুকে মালয়েশিয়া গিয়েছে শুনেছি যে ওখানে সে অনেক উপার্জন করছে আমিও ট্রলারে উঠে যাব।
কেআই//