সৌন্দর্যের আলাদা কোন রং নেই
ফখরুল আলম অপু
প্রকাশিত : ০৮:২৯ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৩:০৭ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বুধবার
মানুষকে নিয়ে সমালোচনা করার আগে, নিজের সাথে নিজেকে নিয়ে আলোচনা করুন। লোহাকে কেউ নষ্ট করতে পারে না কিন্তু তার নিজ মরিচা নষ্ট করে দেয়। একইভাবে আপনাকেও কেউ কষ্ট দিতে পারবে না, কিন্তু আপনার চিন্তা আপনাকে হারাতে পারে।
নিজেকে কখনো অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। নিজের সাথে নিজেকে তুলনা করুন। প্রতিদিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
সস্তা মানেই বাজে অবস্থা। সস্তার কোন মান নেই। তাই নিজেকে সস্তা করে দিবেন না, কখনো কোন সম্পর্কেই না। যতদিন ভুল জায়গায় নিজের মহামূল্যবান সময়, শক্তি আর যত্ন দিবেন ততদিন আপনি শান্তি আর আত্মসম্মান নষ্ট করতে থাকবেন।
মানসিক ভাবে ভালো থাকতে, স্থির হতে হলে জীবনের অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু বাদ দিতে হয় বা ভুলে যেতে হয়। সবকিছুকে অতিরিক্ত বিশ্লেষণ করে ধরতে গেলে আপনি কোনদিন সুস্থ থাকতে পারবেন না।
নিজেকে হাসিখুশী রাখুন। আনন্দ করুন। নিজের জ্ঞানকে ব্যবহার করুন। কাছের মানুষগুলোকে হাসান, আনন্দ দেন। প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সময় কাটান। যত কষ্ট থাকুক, যত সমস্যা থাকুক, যত ব্যস্ততা থাকুক আপনি নিজের চিন্তাকে সহজ করুন। যা ভালো লাগে করুন। দিনে অন্তত একটি কাজ নিজের ইচ্ছায় স্বাধীনভাবে করুন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আপনার মধ্যে গুণগত পরিবর্তন আসবে। এই গুণগত পরিবর্তন আপনাকে নতুন করে বাঁচতে শেখাবে। আপনি শিখবেন অনেক কিছু না পেয়েও অনেক ভালো থাকা যায় কিভাবে। অনেক বিষন্ন ও হতাশার মধ্যেও আপনি আলোর পথ খুঁজে পাবেন।
দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচতে প্রতিদিন কিছু সময় হলেও সৃষ্টিকর্তার সাথে কথা বলুন, প্রতি উত্তর হয়তো পাবেন না। তবে বিশ্বাস করেন; শান্তি পাবেন, কারণ সৃষ্টিকর্তার চেয়ে আপন আর কাছের কেউ নেই।'
আদালতে যত মামলা হয়, তার কাহিনী কমপক্ষে ৮০ শতাংশ অতিরঞ্জিত, মিথ্যা ও সাজানো। কারও হয়তো হাতাহাতি হইছে, সে মামলা করবে তাকে হত্যার উদ্দেশে গুরুতরভাবে জখম করেছে, টাকা চুরি করেছে, হুমকি দিয়েছে ইত্যাদি। প্রকৃত ৩২৩ এর সাথে অবধারিতভাবে মিথ্যে ৩৭৯, ৩২৬, ৩০৭ লাগাবে। কেননা আসামীকে আটকাতে হবে। মানুষের নোংরামি যে কত প্রকার ও কি কি তা বুঝা যায় আদালতে আসলে। হুজুর টাইপ লোকও আদালতে এসে শপথ নিয়ে মিথ্যে বলে। মিথ্যার প্রবলতায় সত্যের ঠিকানা খোঁজাও কঠিন। আর মিথ্যার এই মহাসমুদ্রে সত্য খুঁজে বের করার দায়িত্ব সহজসাধ্য নয়। হে মহান সৃষ্টিকর্তা তুমি ছাড়া কেউ ন্যায়বিচার করতে পারবে না। আমরা এতো এতো মিথ্যার মধ্যে কত শত ভুল করি! দয়াময়! ক্ষমা করো, মাফ করো, রক্ষা করো।
মানুষ মনে করে সে সাহায্য না করলে আপনি পথে বসে যাবেন। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার মনোনীত আরো অনেক অচেনা সাহায্যকারী দাঁড়িয়ে যাবে, সৃষ্টিকর্তার প্রতি আপনি যদি বিশ্বাস সত্যি সত্যি রাখতে পারেন। আসলে কাউকে ছাড়া কারো দিন থেমে থাকেনা। কেউ সাহায্য না করলে আপনার কোন লস নেই কারণ সৃষ্টিকর্তার প্রতি ঈমানী শক্তি আপনার মাঝে থাকলে আপনার প্রার্থনা কবুল হবার দ্বারা অজানা মানুষ দিয়ে হলেও আপনি সাহায্য পাবেন। বিপদে কাউকে পাশে না পেলেও, সবসময় সৃষ্টিকর্তাকে ঠিকই পাবেন।
সময়ের সাথে সাথে মন বদলে যায়... খেয়াল করে দেখবেন, অনেক কিছুই আছে আগে না করলে ভালো লাগতোনা...আর এখন করতে ইচ্ছা করেনা। আসলেই সময়ের সাথে সাথে মানুষের ভালোলাগার তালিকা বদলায়!
কাউকে ভালোবাসা স্বাভাবিক কিন্তু অধিক মরিয়া হয়ে অস্থিরতা নিয়ে বেশি ভালোবাসলে সেটি এক ধরণের মানসিক সমস্যা। কারণ এটাকেই আপনি অক্সিজেন ধরে নিয়েছেন, ঝাপ্টে ধরে বাঁচতে চাইছেন। এটা আপনার অন্তর দহন করে ছাড়বেই। যদি কোন কিছু আপনাকে ভেঙ্গে ফেলে আবার দাঁড়ান আবার তৈরী হতে সময় নিন। পৃথিবীতে শেষ বলতে কিছু নেই। যেখানে শেষ সেখানেই নতুন আরেক অধ্যায় শুরু এবং এবারের অধ্যায় প্রথম অধ্যায়ের থেকেও বেশি গভীর, বেশি শক্তিশালী। আগেরটা তো আপনার জন্য পরীক্ষা ছিলো, এখন হলো আপনি ধাক্কা খেয়ে পাক্কা খেলোয়াড়।
ইতিবাচক থাকুন ও দুশ্চিন্তা কমান। মানসিকভাবে সুখি ও শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। আপনি তার প্রতি অনুভূতি প্রকাশ করা বন্ধ করে দিন। সৃষ্টিকর্তাকে নিজের অভিভাবক করে নিন। কারো আগ্রহ-মনোযোগ-যত্ন পেতে জোর করা ছেড়ে দিন। মন খুব হাঁসফাঁস করলে দু রাকাত করে নামাজ পড়ে এক পশলা হঠাৎ বৃষ্টির মতো খুলে সৃষ্টিকর্তাকে কষ্ট বলে দিন। নিজের জন্যে নিজের শক্ত হওয়া, স্থিরতা সুস্থতা ও রিজিকের প্রার্থনা বেশি করবেন। কেউ অবহেলা করলে যেচে পড়ে জিজ্ঞেস করে বারবার তার ভাব বাড়াতে যাবেন না, সেই সময়ে ঠিক করতে যাবেন না। এসব ক্ষেত্রে সময় নিবেন আবার সময় দিবেনও। অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করে দিন। প্রত্যাশা করা বাদ দিন। সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবেসে সবকিছুতে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ হলে আপনি পারবেন। চুপ থাকা শুরু করুন, জ্ঞান বাড়ান, প্রচুর পড়াশোনা করুন, স্মার্ট হতে পারবেন। নিজের জড়তা কাটিয়ে মজবুত হতে পারবেন; সৃষ্টিকর্তা চাইলে আপনি আগের চেয়ে অনেক শান্তিতে থাকবেন!
মনের মরীচিকা দূর করতে বেশি বেশি সৃষ্টিকর্তাকে ডাকুন। দেখবেন সবকিছুতেই আপনার শান্তি লাগছে।
ঘটনাটি হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবনের, একদিন এক দরিদ্র মানুষ নবীজী (সঃ) এর জন্যে এক গুচ্ছ আঙ্গুর উপহার আনলো। নবীজী (সাঃ) হাত বাড়িয়ে আঙ্গুরের গুচ্ছটি নিলেন। তারপর মানুষটির সামনে তিনি আঙ্গুরের গুচ্ছ থেকে একটা আঙ্গুর ছিঁড়ে নিজের মুখে দিলেন। এবং আঙ্গুরে কামড় দেয়ার পর তিনি খুশি হয়ে হেসে উঠলেন। এরপর হাসি মুখে দরিদ্র মানুষটির সাথে গল্প করতে করতে একটা একটা করে তিনি সবকটা আঙ্গুর খেয়ে নিলেন। নবীজী (সাঃ) সবগুলো আঙ্গুর খেয়েছেন দেখে দরিদ্র মানুষটি অত্যন্ত আনন্দিত হলো। সে ভাবেনি যে, নবীজী (সাঃ) তার আনা আঙ্গুর সবগুলো খাবেন। সে পরম আনন্দ নিয়ে এক সময় বিদায় নিলো। দরিদ্র মানুষটি চলে যাওয়ার পর ওখানে উপস্থিত সাহাবীদের একজন নবীজী (সাঃ) কে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেসা করলেন, "ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ), আপনার কাছে কেউ কোনো উপহার আনলে আপনি তা অবশ্যই সবার মাঝে ভাগ করে দেন। কিন্তু আজ আপনি উপহার পাওয়া আঙ্গুরের গুচ্ছ থেকে আমাদের একটা আঙ্গুরও দিলেন না। সবকটা আপনি খেলেন।
এমন তো কখনো হয় না?" সাহাবীর কথা শুনে নবীজী (সাঃ) হাসলেন। এরপর জবাবে তিনি যা বললেন, তা অসাধারণ শিক্ষণীয়! নবীজী (সাঃ) ওখানে উপস্থিত সমস্ত সাহাবীদের উদ্দেশে বললেন, "আঙ্গুরগুলো তোমাদের না দিয়ে সবকটা আঙ্গুর আমি এজন্যই খেয়েছি যে, আঙ্গুরগুলো খুব টক ছিলো। যদি তোমাদের দিতাম, তবে আঙ্গুর খেতে গিয়ে আচমকা টকের তীব্রতায় তোমরা মুখ বিকৃত করতে। এতে দরিদ্র মানুষটি বুঝে যেতো যে, তার আনা আঙ্গুরগুলো ভালো হয়নি। এতে সে কষ্ট পেতো। দরিদ্র মানুষটি তার পরিশ্রমের টাকা দিয়ে ঐ আঙ্গুরগুলো কিনেছিলো আমাকে খুশি করার জন্যে। সে তার সর্বোচ্চ সাধ্য দিয়ে আমাকে খুশি করতে চেয়েছিলো, এর বিনিময়ে আমি কী করে তার মনে আঘাত দিই বলো? দরিদ্র ভাইটিকে আমি দুঃখ দিতে চাইনি।"
দরিদ্র মানুষটির প্রতি মহানবী (সাঃ) আশ্চর্য সুন্দর ব্যবহার দেখে সাহাবীরা মুগ্ধ হয়ে নবীজীর দিকে চেয়ে রইল।
অন্তর বড় ভয়ংকর! কখনো ব্যক্তি তাকে নিয়ন্ত্রন করে, আবার কখনো সে ব্যক্তিকে।
বন্ধু নির্বাচনে সাবধান! ‘যদি আপনার এমন কোন বন্ধু থাকে, যে আপনাকে ধর্মের পথে অটল থাকতে সাহায্য করে তাহলে সেই বন্ধুটাকে কখনোই হাতছাড়া করবেন না’।
ভেতর থেকে ভেঙে পড়েছেন? সেটা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কাউকে বুঝতে দিবেন না, মনে রাখবেন লোক ভেঙে যাওয়া বাড়ির ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায়।
নাহ, উন্নতির একমাত্র পথ দোকান দিয়ে বসা নয়। উন্নতির একমাত্র পথ উবার নিয়ে পথে নামা নয়। উন্নতির একমাত্র পথ ব্যবসা নয়। উন্নতির একমাত্র পথ কুসংস্কারমুক্তি। নিজের উপর যে নিয়ন্ত্রণের পথটাকে আপনি হারিয়ে ফেলেছেন, সেই অধিকার নিজের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া। সেটা হাজার পথে হতে পারে, লাখ পথে হতে পারে। সেটা তখনই হবে, যখন আপনার মস্তিষ্ক আপনার সাথে সমন্বয় করে চলবে। আপনি যা করছেন, তার ভিতরে থেকেই উন্নতির বীজ প্রতিদিন বপন করুন। সেখানে সার দিন। মাটি দিন। পানি দিন। নিজের গায়ের ঘাম দিন। আমরা নকল শিক্ষা নিয়ে গোঁয়াড়গোবিন্দ হয়ে বসে আছি, আর ভাব করছি আমরা সিলেটের রাজা গৌড়গোবিন্দ! আসল শিক্ষাই তো আমাদের ভিতর নেই।
কখনো অন্যের স্বপ্ন পূরণে নিজের স্বপ্ন ছেড়ে দিয়েননা। এতে আপনার স্বপ্নের পৃথিবীতে কেউ যাবে, কেউ থাকবে কিন্তু তবু আপনি শুন্য হবেননা কখনো।
আপনি আপনার ভালোটুকু করুন। তাহলে যোগ্য মানুষ থেকে ভালোটাই পাবেন। ভালো করলে ভালোটাই ফেরত আসে।
বিনয়ী হোন কিন্তু নিজ সরলতার সুযোগ নিতে দিয়েননা, ভদ্রভাবে কঠিন হোন যাতে প্রয়োজনে নিজের পক্ষে অবস্থান নিতে পারেন। বিনয়ী হবেননা কেন? অবশ্যই হবেন তবে কৌশলে "না" বলতে শিখুন, সে পয়েন্টগুলোতে যেখানে আপনার সম্মান হানি হতে যাচ্ছে বলে অনুভব করতে পারেন। নিজেকে নিজে যদি যত্নে আগলে না রাখেন তো আপনাকে আগলে আর রাখবেটা কে?
যা হয় যখন হয় যেভাবেই হয় ... সবকিছু সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে ভালোর জন্যই হয়। নিঃসন্দেহে তাতে আমাদের ভালোই লুকিয়ে আছে। কিছু বছর পর যখন পিছন ফিরে তাকাবেন, তখন বুঝবেন যা হয়েছিল সব ভালোই হয়েছিল! জীবনে যাই ঘটুক না কেন গতকালকে আপনার সাথে যাই হোক না কেন আজকের দিনকে নষ্ট করবেননা, একদম না।
মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেরই কথা এবং কাজের ওজন থাকা উচিত। আসলে মানসিক চিন্তাশক্তি বাড়লে কারো সাথে ঝগড়া হবার আশঙ্কা কমে যায়।
এমএম//