জোবরা গ্রামে এখনও আতঙ্কের নাম ড. ইউনূসের ঋণ প্রকল্প (ভিডিও)
হাসান ফেরদৌস, চট্টগ্রাম থেকে
প্রকাশিত : ০২:৫৯ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বুধবার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা গ্রামে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের উত্থান হলেও সেখানে মানুষের কাছে এখনও আতংকের নাম ড.মুহাম্মদ ইউনূসের ঋণ প্রকল্প। স্থানীয়দের অভিযোগ, নানা প্রলোভন দেখিয়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালু করা হলেও পরে আর এলাকার খবর রাখেননি তিনি। বরং ঋণপ্রকল্পে জড়িত হয়ে স্বর্বশান্ত অনেকে এলাকা ছেড়েছেন আবার অনেকে মানমিক ভারসাম্য হারিয়ে মারাও গেছেন।
সুফিয়া খাতুন! জোবরা গ্রামের সিকদার পাড়ার ড. ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের প্রথম ঋণ গ্রহিতা। ১৯৭৬সালে এখানে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প শুরুর পর তিনিসহ অনেকেই যুক্ত হন। ঋণ পেয়ে জোবরার ঘরে ঘরে তখন আনন্দের উৎসবে মেতে উঠলেও সেই আনন্দ বেশি দিন টেকেনি। বরং সুদে-আসলে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে এলাকা ছেড়েছেন রহিমা ও সায়েরা খাতুনসহ অনেকেই।
জোবরা গ্রামের বাসিন্দা মো: নেছার উদ্দিন বলেন, “সুদের হার বেশি ছিল কিন্তু সপ্তাহে নিত তাই মানুষের মালুম হয়নি।
আরেক বাসিন্দা হাজী মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংক গরিবকে চুষে খেয়েছে। সুদের টাকা শোধ করতে অনেকেই ঘরবাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে চলে গেছে।”
জোবরা এলাকায় খালে বাঁধ দিয়ে তেভাগা খামার গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। স্থানীয় নবযুগ ক্লাবে শুরু হয় এই কার্যক্রম। ধীরে ধীরে শুরু করেন ঋণ প্রকল্প। এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ড. ইউনূস বিশ্বব্যাপী নিজের অবস্থান গড়ে তুললেও অবহেলিত থেকে গেছে জোবরা।
নবযুগ ক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন বলেন,“সারা বিশ্ব দেখছে এই গ্রাম অবহেলিত। কোনো উন্নয়ন হয়নি। কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও নাই।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো: সেলিম বলেন, “আগে মুরুব্বিরা যতটুকু উন্নয়ন কাজ করে গেছেন, এখন তাও নাই।”
গ্রামীণ ব্যাংকের অতিরিক্ত সুদ এবং হয়রানির কারণে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কথা জানান স্থানীয়রা।
জোবরা গ্রামের গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা মো: ইউনুস বলেন, “১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। কিন্তু তা শোধ দিতে যা কষ্ট হয়েছে বলার মতো নয়।”
স্থানীয় বাসিন্দা মো: নুরুজ্জামান বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা নিয়ে লাভ করতে গেলে অন্যদিকে লোকসানে পড়তে হয়েছে। কারণ আমাকে সুদ দিতে হতো।”
ক্ষুদ্র ঋণের নামে সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ফতেহপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, “সরকার বলে সুদ এক ডিজিটে আসতে হবে কিন্তু তিনি যেভাবে মানুষের কাছ থেকে সুদ নেন তাতে দুই ডিজিটে দাঁড়ায়। অর্থাৎ ১৩ শতাংশ, এটা যখন কিস্তি আকারে দেওয়া হয় তখন সেটা ৪২ শতাংশ হয়ে যায়। এটা কোন আইনে, বাংলাদেশের আইনকে উনি মানেননা।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এই জোবরা গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হলেও গ্রামের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। এখানকার মানুষ এখনও দারিদ্র্যের কষাঘাতে প্রতিনিয়ত নিষ্পেষিত হচ্ছেন।
এএইচ