ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

মনকে বর্তমানে রাখবেন যেভাবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:০৪ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বুধবার | আপডেট: ০৪:০৫ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বুধবার

মন। দর্শনশাস্ত্রের একটি অন্যতম কেন্দ্রীয় অনুভূতি। আমরা ‘মন’ বলতে সাধারণভাবে বুঝি-বুদ্ধি এবং বিবেকবোধের এক সমষ্টিগত রূপকে। যা চিন্তা, অনুভূতি, আবেগ, ইচ্ছা এবং কল্পনার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মানুষের মন যতক্ষণ তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, মানুষ যতক্ষণ মনের কথা মনে রাখতে পারে, ততক্ষণ মানুষের অধীনেই তার মন ন্যস্ত থাকে। মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে সে মন অবচেতন হয়ে যায়। ফলে সে মন আর তার অধীনে থাকে না। সে ভাবনার রাজ্যে ঘুরে বেড়ায়, বর্তমানে থাকতে চায় না। 

‘মন’-এর ব্যাপারে একটা প্রচলিত কথা আছে, ‘মানুষের মন আকাশের রঙের ন্যায়’। এ কথাটির একটি তাৎপর্যও আছে। কারণ আকাশের রঙের যেমন কোনো স্থায়িত্ব নেই, কখন কোন অবস্থা ধারণ করে বলা যায় না। তেমনি মানুষের মনও নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে একই বিষয়ের ওপর তার স্থায়িত্ব থাকে না। মন বড়ই বিচিত্র।

জীবনে সফল হওয়ার জন্যে মনকে বর্তমানে রাখতে হবে। কিন্তু মন তো বর্তমানে থাকতে চায় না। শুধু বাঁদরের মতো অতীত ও ভবিষ্যতে চলে যায়। এই চঞ্চল মনকে নিয়ন্ত্রণ করে কীভাবে মানুষ করা ও বর্তমানে রাখা যায়- আসুন জেনে নিই কিভাবে মনকে ভালো রাখবেন, বর্তমানে রাখবেন-  

যখনই দেখবেন মন অতীতে চলে যাবে, সচেতন হবেন যে, আমার মনটা অতীতে চলে গেছে। আবার বর্তমানে নিয়ে আসবেন। আবার যখন মন ভবিষ্যৎ নিয়ে আকাশকুসুম কল্পনায় তখন আবার মনটাকে বর্তমানে নিয়ে আসবেন এবং মনটাকে বর্তমানে রাখার সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা। 

মন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে, কিন্তু ভবিষ্যৎ কল্পনা করে না, কারণ ভবিষ্যতের একটা লক্ষ্য মনের সামনে খুব পরিষ্কার।

অতএব মনের ঐ ভবিষ্যতে ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই, পার্মানেন্ট হয়ে গেছে। মানে ভবিষ্যতের সাথে মনের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তো তার অন্যদিকে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই! ভবিষ্যৎ মানে হচ্ছে লক্ষ্য, আর বর্তমান মানে হচ্ছে লক্ষ্য অর্জনের জন্যে যে পরিকল্পনা যে কাজ সেই কাজ।

মন অতীত নিয়ে অনুশোচনা করার সুযোগ পাবে না কারণ সবসময় যদি ইতিবাচক কাজে মনকে ব্যস্ত রাখেন।

মন কখন অতীত বা ভবিষ্যতে দৌড়াদৌড়ি করে? যখন আপনার কোনো কাজ নাই তখন। অতএব মনকে সবসময় কাজ দিয়ে রাখবেন এবং কাজের অভাব নাই। যাদেরই মন এরকম বাঁদরের মতো নাচানাচি করে, তারা কাজ শুরু করেন। দেখেন মন বাঁদর হবে না। মন একেবারে ঠিক ভালো মানুষ হয়ে যাবে। কারণ মনকে তো কিছু দিতে হবে।

আপনি যদি কিছু দিয়ে না রাখেন সে তো তার মতন চলবে। যদি আপনি কাজ না দেন এই মনটাকে কে কাজ দেবে? তো অতএব মনটাকে সবসময় একটার পর একটা কাজ দিয়ে রাখতে হবে, এবং একসাথে কাজ, একটার পর একটা কাজ লাইনে রেখে দেবেন। যাতে একটা কাজ শেষ হওয়ার পরে আপনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে না পারেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস যেই ফেলবেন, শয়তান ঢুকে যাবে।

কারণ মানুষ সবচেয়ে ভুল করে কখন? মানুষ সবচেয়ে হতাশ হয় কখন? যখন সে একা থাকে এবং কাজ না থাকে। অতএব সবসময় কাজ দিয়ে রাখবেন। এমন কাজ করবেন, যে কাজে আনন্দ রয়েছে! এবং সেই কাজটা যত কী হবে? যত মানুষের জন্যে হবে, যত অন্যের জন্যে হবে, তত আপনি কাজে আনন্দ পাবেন।

যে রকম, একটা ফুল নিজে নিয়ে এসে আপনি একটা ফুলদানিতে রাখলেন। সেটাতে যতটা আনন্দ পাবেন, যদি এই ফুলটা আপনি যাকে পছন্দ করেন তাকে দিতে পারেন তাহলে বেশি আনন্দ পাবেন না কম আনন্দ পাবেন? যদি দিয়ে বেশি আনন্দ মানুষ না পেত তাহলে সে কখনো দিত না।

যেরকম মা রান্না করছেন, পিঠা বানাচ্ছেন। নিজে খাওয়ার আগে কিন্তু বাচ্চাদের দিচ্ছেন। নিজে খেয়ে যতটা তৃপ্তি পেতেন তাকে দিয়ে তিনি তার চেয়ে বেশি তৃপ্তি পাচ্ছেন। তো দেয়ার তৃপ্তিটা এখানে। অতএব সবসময় কী করবেন? এমন কাজ করবেন, যে কাজে আনন্দ রয়েছে। আপনি দেখবেন যে, আপনার অস্থিরতা নাই।
কেআই//