ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

অক্টোবরে যুক্তরাজ্যে খুলছে কৃষি ভিসা

মিলটন রহমান, লন্ডন থেকে

প্রকাশিত : ০৭:০৯ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৭:৫৭ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার

ব্রেক্সিটের পর অন্যান্য খাতের মতো ব্রিটেনের শ্রমখাতও সংকটে পতিত হয়। কারণ ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে যেসব শ্রমিক ব্রিটেনের বিভিন্ন খাতে শ্রম বিনিয়োগ করতেন তাদের বড় একটি অংশ ব্রেক্সিটের পর ফিরে যান নিজ দেশে। ফলে শ্রম ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করে ব্রিটেনে। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়ে কৃষিখাত। ব্রিটেনের কৃষি উৎপাদন অব্যহত রাখতে বিশেষ করে ইস্ট ইউরোপীয় শ্রমিকদের অবদান ছিলো সবচেয়ে বেশি। ব্রেক্সিটের আগে তারা সহজেই এসে প্রতিটা মৌসুমে কৃষিখাতে নিজেদের নিয়োজিত করতে পেরেছেন। এখন সে পরিস্থিতি নেই।

ব্রেক্সিটের পর বদলেছে সম্পর্ক। চাইলেই আগের মতো ইস্ট ইউরোপীয়রা ব্রিটেনের কৃষি খাতে কাজ করতে পারবেন না। তাদের আসতে হবে
ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এবার শ্রম কিনতে গিয়ে ব্রিটিশ সরকার পারিশ্রমিকের দিকটিও বিবেচনায় রেখেছে। ফলে প্রথম বারের
মতো বাংলাদেশ, ভারত এবং থাইল্যান্ড থেকে কৃষি শ্রমিক আনতে শুরু করেছে ব্রিটেন। এসব দেশ থেকে কম পারিশ্রমিকে শ্রমিক পাওয়া
যাবে। এর জন্য কিছু দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্সি কাজ করছে(যেমন বাংলাদেশ থেকে কৃষি শ্রমিক নিয়োগের দায়িত্ব পেয়েছে
রিজেন্সি রিক্রুটম্যান্ট এজেন্সি)। তারা সরাসরি এসব দেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ করবে।

এ ক্ষেত্রে সেসব দেশে এজেন্সিগুলোর কোন প্রতিনিধি কিংবা শাখা নেই। যারা আসতে আগ্রহী, তারা ওইসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিয়ম মেনে নিজের আগ্রহের কথা জানাবেন। এজেন্সি যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত প্রার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য যাবতীয় দলিলাদি পাঠাবে। ওইসব দলিলসহ ভিসা আবেদনের সমুদয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে ব্রিটিশ এম্বেসিতে। এসব দলিপত্রের মধ্যে পাসপোর্ট, এনআইডি কার্ড, ব্যাংক হিসাব বিবরণী(একাউন্টে অন্তত ১২শ পাউন্ড সমপরিমাণ টাকা থাকতে হবে) গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজি জানা কিংবা দক্ষতার কোন প্রমাণ দিতে হবে না। বাংলাদেশে ব্রিটিশ ভিসা আবেদন গ্রহনের দায়িত্ব পালন করছে ভিএফএস সেন্টার। ভিসা ফি দিতে হবে ২৫৯ পাউন্ড। ভিসা আবেদন করার জন্য পুরণ করতে হবে সিজনাল ওয়ার্কার ভিসা(টি৫) ফর্ম। আবেদনের তিন সপ্তাহের মধ্যে জানানো হবে ফলাফল। ভিসার মেয়াদ ছয় মাস।

ভিসা পাওয়ার পর কাজ শুরুর অন্তত চৌদ্দদিন আগে ব্রিটেনে প্রবেশ করতে হবে। ব্রিটেনে আসার পর নিয়োগে দায়িত্বরত এজেন্সি
এবং কৃষি ফার্ম কর্তৃপক্ষ এয়ারপোর্ট থেকে শ্রমিকদের স্বাগত জানাবে এবং নিয়ে যাবে কাজের স্থানে। এ ক্ষেত্রে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা
কি হবে তাও একটা বড় প্রশ্ন। এটি নির্ভর করবে কৃষি ফার্ম কর্তৃপক্ষের উপর। অনেক ফার্ম রয়েছে, তারা শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা
করে। তবে থাকার ব্যবস্থা না করলেও তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ ওইসব এলাকায় বাসা ভাড়া একেবারে কম। কম খরচেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা শ্রমিকরাই করতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকে কৃষি শ্রমিক আনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম আলী
তালুকদারের সাথে কথা বলে বিষয়টি সম্পর্কে আরো জানার চেষ্টা করেছি।

তিনি জানানেল, অক্টোবর মাসের শুরুতে হোম অফিস জানাবে বাংলাদেশ থেকে কতজন শ্রমিক আনা যাবে। সে হিসেবে তারা কাজ শুরু করবেন। সব ঠিক থাকলে অক্টোবর মাস থেকে ব্রিটেনে বাংলাদেশী কৃষি শ্রমিকদের আসার দ্বার উন্মোচন হবে। সামার মৌসুমের জন্য ইতোমধ্যে তারা পাঁচজন শ্রমিক ব্রিটেনে এনেছেন। এ ক্ষেত্রে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। লন্ডনে নিযুক্ত হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমের সাথেও এ বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, ব্রিটেনে আসা কৃষি শ্রমিকদের যাবতীয় সুবিধা অসুবিধা
হাই কমিশন দেখভাল করবে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা, আয়-ব্যয়সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিষয়েও হাই কমিশন  ‍ভূমিকা রাখবে।

সাইদা মুনা তাসনিম মনে করেন, কৃষি শ্রমিকরা ঠিকঠাক কাজ শেষ করে ছয়মাস পরে দেশে ফিরে গেলে ব্রিটিশ সরকারের আস্থা বাড়বে। এতে করে ভবিষ্যতে আরো কৃষি শ্রমিক ব্রিটেনে আসার সুযোগ পাবে। এভাবে ব্রিটেনে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য একটি
বড় কাজের ক্ষেত্র তৈরী হতে পারে বলেও তিনি মনে করেন। মোহাম্মদ নাসিম আলী তালুকদারও বললেন, বাংলাদেশ থেকে আসা শ্রমিকরা
কাজের দক্ষতা দিয়ে আস্থা অর্জন করতে পারলে এবং নির্দিষ্ট সময়ে দেশে ফেরত গেলে ব্রিটেনে বড় একটি শ্রমবাজার পাবে বাংলাদেশ।
তিনি শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে প্রয়োজনে ব্রিটেনে পাড়ি জামানোর আগে বাংলাদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার ইচ্ছেও পোষণ
করেছেন। বললেন, দক্ষতার বিকল্প নেই। আমরা দক্ষ শ্রমিক আনতে পারলে দীর্ঘ মেয়াদী একটি শ্রমবাজার আমাদের হবে।

ছবি: লন্ডনে নিযুক্ত হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম

ব্রিটেন বাংলাদেশ থেকে কৃষি শ্রমিক আনবে, এমন সংবাদ প্রচারের সাথে সাথে যথারীতি একটি দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা নানান ভুল তথ্য দিয়ে আসতে আগ্রহী শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করছে। এমনকি এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার- প্রচারণায় বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে ব্রিটেনে আসতে আগ্রহী কৃষি শ্রমিকদের। বাংলাদেশে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে কোন বিজ্ঞাপন বা প্রচার প্রচারণা চালাতে পারবে না। সে অনুমতি ব্রিটেন এবং বাংলাদেশ সরকার কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্সি কাউকে দেয়নি। কেবল দায়িত্বপ্রাপ্ত
এজেন্সি বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি সাপেক্ষে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে পারবে।

আগামী মাসে হোম অফিসের অনুমতি পাওয়ার পর বাংলাদেশে এমন বিজ্ঞাপন প্রকাশ করবে একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্সি, অর্থাৎ যে এজেন্সি হোম অফিস থেকে স্পন্সর লাইসেন্স পেয়েছে। আরো পরিস্কার করে যদি বলি তা হলো একমাত্র প্রতিষ্ঠান রিজেন্সি রিক্রুটিং এজেন্সি। অতএব দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির সাথে এ বিষয়ে কোন কথা বলা যাবে না বা বলার প্রয়োজন নেই। আসতে আগ্রহীরা সরাসরি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন। আর যেসব দালালচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করি। তা না হলে ব্রিটেনে বাংলাদেশের শ্রমিকদের বিপুল সম্ভাবনাময় এই সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যাবে। আমাদের চলমান অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে এমন প্রকল্প যত বেশি পাওয়া যায় ততই মঙ্গল। এ বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। আবার এও বলতে চাই, সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে যদি দীর্ঘ সূত্রিতার আবতারণা করে তাও হবে দুঃখজনক। সরকারের দাফতরিক জটিলতার ফাঁদে পড়ে আমাদের এমন সম্ভাবনা অংকুরে বিনষ্ট হোক তা কারো কাম্য নয়।

 

প্রাসঙ্গিকভাবে বলতে চাই বাংলাদেশে থেকে ব্রিটেনে কাজ নিয়ে আসা অন্যদের কথা। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ‘কেয়ার ভিসা‘। অর্থাৎ কেয়ারার। যাদের কাজ হচ্ছে শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের সেবা করা। সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাংলাদেশ থেকে মোটা অংক ব্যয়ে বিভিন্ন কেয়ার এজেন্সির কাজ থেকে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে ব্রিটেনে এসেছেন। যাদের পঁচানব্বই ভাগের কেয়ার সার্ভিস সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। তার সাথে যুক্ত হয়েছে কাজ না পাওয়া। অধিকাংশ কেয়ার এজেন্সি বিভিন্ন দেশ থেকে আনা কেয়ারারদের কাজ দিচ্ছে না। ফলে এক সময় গিয়ে তাদের ভিসা বাতিল হয়ে যাবে এবং তারা হয়ে পড়বে অবৈধ। এ বিষয়ে সবাইকে সেচতন হওয়া উচিত বলে মনে করি। যদিও এ বিষয়টি কৃষি ভিসার সাথে সম্পর্ক যুক্ত নয়, তবুও বললাম, এজন্যে যাতে কেউ প্রতারক দালাল চক্রের হাতে না পড়ে। কৃষি ভিসায় ব্রিটেনে আসার জন্য কোন দালালের প্রয়োজন নেই। নিজেই সরাসরি আবেদন করতে পারবেন আক্টোবর মাস থেকে।
 

এসবি/