দোয়া কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:৩৯ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শুক্রবার
মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি বান্দার দীনতা, হীনতা ও বিনয় প্রকাশের একটি বিশেষ মাধ্যম হচ্ছে দোয়া। এর মাধ্যমে বান্দা নিজেকে মহান স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক তৈরি করে।
বস্তুত সৃষ্টিজগতের সবকিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মুখাপেক্ষী। সকল কল্যাণ ও উপকার যেমন তার কাছ থেকে আসে তেমনি বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্টও একমাত্র তিনিই দূর করতে পারেন। তাঁর হাতেই সব ক্ষমতা। তিনি সকল শক্তির আঁধার। এ জন্য মহামহিম সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর সামনে বিনয় ভরে নিজের অক্ষমতার কথা প্রকাশ করা এবং তার কাছে শক্তি-সামর্থ্য চাওয়া বান্দার জন্য পূর্ণতার পরিচায়ক। এর মাধ্যমে বান্দার নিজস্ব অবস্থান উন্নত হয়। দিল থেকে অহংবোধ দূর হয় এবং মর্যাদা সমুন্নত হয়।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে বিভিন্ন বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। বান্দা যাতে দোয়ার মাধ্যমে তাঁর শরণাপন্ন হয়। তাকে স্মরণে রাখে। সর্বোপরি তাঁর অসীম রহমত লাভে ধন্য হতে পারে।
আল্লাহর কাছে চাওয়ার মধ্যে কোনো লাজ-লজ্জা বা শরমের কিছু নেই। এটা হীনম্মন্যতারও বহিঃপ্রকাশ নয়। বরং এটাই হলো প্রাচুর্যের চাবিকাঠি, সব এবাদতের সারকথা। বস্তুত এবাদতের উদ্দেশ্য হলো নিজের অহংবোধ মিটিয়ে রাব্বুল আলামিনের কাছে সমর্পিত হওয়া। আর এতেই রয়েছে বান্দার অজস্র সম্মান ও মর্যাদা। তাই দোয়া অনুগত্য বা দাসত্বের বহিঃপ্রকাশ। আর আল্লাহ তায়ালা বান্দার এমন বিনম্র মনোভাবকে খুব পছন্দ করেন। বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তাঁর নিজের প্রয়োজন ও অভাবের কথা তুলে ধরে তখন আল্লাহ তায়ালা খুব খুশি হন।
দোয়া যে কত গুরুত্বর্পূণ সেটা সবার জানা উচিত। তারপরও দোয়াটাকে আমরা অনেক সময় অনেকে দোয়ার যে গুরুত্ব এই গুরুত্বটা বুঝি না। বুঝি না বলে দোয়াতে যেভাবে ডুবে যাওয়া দরকার সেই ডুবে যেতে পারি না।
না চাইলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন!
আমরা এককথায় বলতে পারি যত উপাসনা যত ইবাদত এর সাংরাশ হচ্ছে এই দোয়া বা প্রার্থনা।
নবীজী (সা.) বলেছেন, দোয়া হচ্ছে বিশ্বাসীর হাতিয়ার, বিশ্বাসীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে দোয়া। ধর্মের মূলধারা হচ্ছে দোয়া এবং দুনিয়া ও আখেরাতের আলো হচ্ছে দোয়া। অনেক সময় আমরা নিজের জন্যে আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে সংকোচ বোধ করি।
কিন্তু নবীজী (সা.) খুব পরষ্কিারভাবে বলেছেন যে, নিজের জন্যে প্রার্থনা করা এটা হচ্ছে উত্তম ইবাদত এবং তিনি খুব স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তোমরা আল্লাহর কাছে চাও, না চাইলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। অতএব আল্লাহর কাছে চাইবেন।
একমাত্র দোয়া-ই পারে অভাব ও সমস্যা মুক্ত করতে! অনেকে আবার বলেন যে, আল্লাহ তো সব জানেন তার কাছে চাওয়া-চাওয়ির দরকারটা কী? আরে সব জানেন তারপরও চাইতে হয়। কারণ তিনি পছন্দ করেন যে আপনি চান।
নবীজী (সা.) বলেছেন যে, আল্লাহ বলেন, তোমরা আমার ইবাদতের জন্যে আন্তরিকভাবে সময় অন্বেষণ করো তাহলে তোমার অন্তর তৃপ্ত হবে তোমার অভাব দূর হবে। তা না হলে তোমার কর্মব্যস্ততা বাড়বে কিন্তু তুমি অভাবী ও সমস্যাগ্রস্তই থেকে যাবে।
অর্থাৎ আন্তরিকভাবে দোয়ার জন্যে আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্যে সময় বের করতে হবে। যত ব্যস্ত হোন আপনার তা না হলে ব্যস্ততা বাড়বে কিন্তু অভাব এবং সমস্যা থেকে যাবে। একমাত্র দোয়াই আপনাকে অভাব এবং সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
নবীজী (সা.) বলেন যে, তুমি যদি কোনো বিপদে পড়ো আল্লাহর কাছে দোয়া করবে তিনি বিপদ দূর করে দেবেন। খরা ও অজন্মার কারণে যদি দুর্ভিক্ষে পড়ো তাঁর কাছে দোয়া করবে। তিনি খাদ্যশস্যের ব্যবস্থা করবেন। যদি জনমানবহীন বা পানিবিহীন প্রান্তরে হারিয়ে যাও বাহনও যদি নিখোঁজ হয় তুমি তাঁর কাছেই দোয়া করবে। তিনি বাহনের ব্যবস্থা করবেন।
এগুলো কিন্তু শুধু বক্তব্য নয়। আপনি নিজের জীবনে যদি অনুসন্ধান করেন আপনি নিজেই পাবেন যে, এমন সময় যখন আপনার মনে হয়েছিল যে, আর কোনোকিছু নাই, তখন সাহায্য চলে আসছে নিজের জীবনে এটা বের করতে পারবেন।
দিলে দাও না দিলে নাই এগুলো করবেন না!
নবীজী (স) বলেন যে, যখন তুমি দোয়া করবে কখনো বলবে না যে, আল্লাহ ইচ্ছা হলে আমাকে ক্ষমা করো ইচ্ছা হলে দয়া করো ইচ্ছা হলে রিজিক দাও, না। যখন তুমি চাইবে প্রবল বিশ্বাস রাখবে।
নবীজী বলেন যে, যখন তুমি চাইবে প্রবল বিশ্বাস ও দৃঢ়তার সাথে চাইবে। তোমাকে কিছু দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহকে বাধা দেয়ার কেউ নাই।
আল্লাহকে কি কেউ বাধা দিতে পারবে, মানে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে চাইবেন। চাই, দিবা না কেন? অর্থাৎ চাইবেন যখন বলিষ্ঠভাবে চাইবেন! মিনমিন কিনকিন করবেন না। দিলে দাও না দিলে নাই এগুলো করবেন না।
আসলে আমরা চাইতে ভুল করি চাইতে দ্বিধান্বিত হই। আরে আপনি কী চাইতে পারেন, কতটা চাইতে পারেন আল্লাহর কাছে? আল্লাহর কাছে কি পৃথিবীটা একটা বড় কিছু? মহাবিশ্বের যে সীমানা সবকিছুই তো আল্লাহর। এবং এখন বিজ্ঞানের মানে টেলিস্কোপের গতি বাড়ছে তত সীমানা বাড়ছে। কারণ আল্লাহ বান্দাকে যা দেবেন তা তাঁর কাছে বিশাল কিছু নয় তাঁর কাছে খুবই তুচ্ছ।
নেতিবাচক কথা না বললে বিশ্বাসীর দোয়া সবসময় কবুল হয়! নবীজী (সা.) বলেছেন যে, দোয়া করো কিন্তু অধৈর্য হয়ো না তাড়াহুড়া করো না। অর্থাৎ কখনো বলো না যে, এত দোয়া করলাম কই কবুল তো হতে দেখলাম না। কোনো নেতিবাচক কথা বলবে না।
নবীজী বলেন যে, কোনো নেতিবাচক কথা বলবে না ধৈর্য হারালে দোয়া আগ্রহ কমে যাবে হতাশা তোমাকে আচ্ছন্ন করবে। আসলে অস্থির হয়ে নেতিবাচক কথা না বললে বিশ্বাসীর দোয়া সবসময় কবুল হয়।
এই হাদীস থেকে আমরা সবাই একটি শিক্ষা গ্রহণ করব যে, কখনো দোয়ার ব্যাপারে কোনো নেতিবাচক কথা বলব না। হা-হুতাশ করব না কখনো বলব না যে, এত দোয়া করলাম কই কবুল তো হলো না! কক্ষনো না, সবসময় আল্লাহর কাছে চাইবেন, প্রবল বিশ্বাস নিয়ে চাইবেন। যত বিশ্বাস নিয়ে চাইবেন এবং বিশ্বাসে অটল থাকবেন কোনো রকম সন্দহে-সংশয় থেকে দূরে থাকবেন ইনশাআল্লাহ আল্লাহ কবুল করবেন।
কেআই//