ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

বায়ু দূষণে আয়ু কমছে দেশের মানুষের (ভিডিও)

মফিউর রহমান

প্রকাশিত : ১২:৪৯ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রবিবার

দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছরের ওপরে। তবে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে থাকলে এটি উন্নীত হতো প্রায় ৮০ বছরে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে, শুধুমাত্র বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমছে প্রায় ৭ বছর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যা উত্তরণে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। 

বৈশ্বিক বায়ু দূষণে শীর্ষ শহরের তালিকায় প্রায়ই উঠে আসছে রাজধানী ঢাকার নাম। তবে ঢাকার আশপাশসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও দূষণের মাত্রা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালতি এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-২০২৩ শীর্ষক বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, দূষিত বায়ু গ্রহণের প্রভাবে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমছে ৬ দশমিক ৮ বছর। 

এলাকাভেদে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরজুড়ে গাজীপুর দেশের সবচাইতে দূষিত অঞ্চল। কেবল এই জেলায় বসবাসরত মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে ৮ দশমিক ৩ বছর। এই প্রতিবেদনে দেখানো হয়, বায়ুদূষণ সারাবিশ্বেই অন্যতম বড় স্বাস্থ্য-সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

গবেষণা তথ্য বলছে, বিশ্বের ৬টি দেশের বায়ু দূষণ পরিস্থিতি বেশি ভয়াবহ। দেশগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নাইজেরিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৯৯৮ সালের তুলনায় বায়ু দূষণ ৬৩ শতাংশ বেড়েছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটারে বাতাসে সর্বোচ্চ দূষণ কণা থাকতে পারে ৫ মিলিগ্রাম। তবে বাংলাদেশ ১৫ মিলিগ্রামকে মানদণ্ড হিসেবে নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু বাস্তবে দেশের বাতাসে দূষণকারী বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ৭০ থেকে ৮০ মিলিগ্রাম, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ু দূষণ স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশপাশি বিদেশি বিনিয়োগও নিরুৎসাহিত করে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম বলেন, “কি কারণে বায়ু দূষণ হচ্ছে সেগুলো আমরা সবাই জানি। কিন্তু প্রতিরোধে সেরকমভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা বলে আমাদের বায়ু দূষণটা কমছেনা। যার প্রেক্ষিতে নেগেটিভ রিপোর্টগুলো বাংলাদেশে আসছে। এটা ব্যাট ক্যাম্পেইন যে বাংলাদেশে পলিউশন, বাংলাদেশে বায়ু দূষণ, পানি দূষণ।”

মেক্সিকো, চীন বা যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি অনুসরণ করে বায়ুদুষণ ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনছে, বাংলাদেশেও  ওই ধরনের টেকসই বৈজ্ঞানিক পন্থা অনুসরণের আহ্বান জানান তিনি। 

ড. আবদুস সালাম বলেন, “অন্যান্য সিটিগুলোতে বায়ু দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে অনেক সফল হয়েছে। তারা অনেক ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করে দিয়েছে, তারা যে জ্বালানি তেল পোড়ায় সেটা উন্নতমানের। জ্বালানি তেলের বিভিন্ন গ্রেড আছে কিন্তু আমাদের এখানে কোন গ্রেডের জ্বালানি ব্যবহার করবে সেটার কোনো স্ট্যান্ডার্ড নাই।”

বায়ুর মানের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ইউরোপের দেশগুলো। এ অঞ্চলের মানুষ ১৯৯৮ সালের তুলনায় ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ ভালো মানের বায়ুর মধ্যে বসবাস করছে বলেও জানান এ বিশেষজ্ঞ।

এএইচ