ধূমপান ভেপিং ও মাদক: ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:৫৫ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:২৭ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার
প্রতিটি ধর্মই মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে নিজের ও অন্যের কল্যাণ করতে এবং ক্ষতিকর কাজ থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু ধূমপান এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এ বদভ্যাস নিজের ও অন্যের জন্যে বয়ে আনে রোগ, সম্পদের অপচয় ও দুর্দশা। শুধু তা-ই নয়, জাহান্নামের বৈশিষ্ট্য আগুন, ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ—এ তিনটির সমাহার ঘটে ধূমপানে। তাই যারা ধার্মিক ও স্রষ্টায় বিশ্বাসী, তাদের কাছে বিষয়টি সুস্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। আসুন জেনে নিই, ধূমপান ভেপিং ও মাদক সম্পর্কে ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি :
ইসলাম ধর্ম
আল কোরআন
হে বিশ্বাসীগণ! নিশ্চয়ই মাদকদ্রব্য, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য নির্ণয়ক তীর বা পাশা নাপাক ঘৃণ্য বস্তু এবং শয়তানের হাতিয়ার। অতএব তোমরা তা পুরোপুরি বর্জন করো, যাতে তোমরা সফল ও পরিতৃপ্ত হতে পারো। —সূরা মায়েদা : ৯০
মানুষ জিজ্ঞেস করবে, তাদের জন্যে কী কী হালাল করা হয়েছে? হে নবী! বলো, জীবনের জন্যে ভালো ও কল্যাণকর সবকিছুই তোমাদের জন্যে হালাল। —সূরা মায়েদা : ৪
নবীজীর (স) হাদীস
মদ-মাদক এবং নেশাকারক প্রতিটি দ্রব্যই হারাম। —তিরমিজী, নাসাঈ
নেশাকারক দ্রব্য অর্থাৎ মাদক পরিমাণে কম হোক বা বেশি, তা অবশ্যই হারাম। —ইবনে মাজাহ, আহমদ
১. মদ (বা মাদক) প্রস্তুতকারী, ২. মদ (বা মাদক) প্রস্তুতের পরামর্শদাতা, ৩. মদ (বা মাদক) বহনকারী, ৪. মদ (বা মাদক) পরিবেশনকারী, ৫. মদ (বা মাদক) সরবরাহকারী, ৬. মদ (বা মাদক) বিক্রেতা, ৭. মদের (বা মাদকের) মূল্য গ্রহণকারী, ৮. মদ (বা মাদক) ক্রেতা এবং ৯. মদ (বা মাদক) পান বা ব্যবহারকারী সবার ওপরই আল্লাহর অভিসম্পাত! —তিরমিজী
ইসলামি চিন্তাবিদদের মতামত
২০০০ সালে ডাব্লিউএইচও-র তত্ত্বাবধানে দ্য রাইট পাথ টু হেলথ : হেলথ এডুকেশন থ্রু রিলিজিয়ন বইটি প্রকাশিত হয়। এ বইতে ইসলামিক রুলিং অন স্মোকিং অংশে মিশরের প্রখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন মুফতি বা ইসলামি চিন্তাবিদের বক্তব্য রয়েছে। তাদের মধ্যে আট জনই ধূমপানকে হারাম বলেছেন এবং দুজন বলেছেন, এটা সখত মাকরুহ, হারামের কাছাকাছি।
বিশ্ববরেণ্য ইসলামি চিন্তাবিদ ইউসুফ আল কারযাভি তার দ্য ল’ফুল এন্ড দ্য প্রহিবিটেড ইন ইসলাম বইতে বলেন, ‘যদি একথা প্রমাণিত হয় যে, তামাক স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর তাহলে এটি হারাম।’
মিশরের সর্বোচ্চ ধর্মীয় জুডিশিয়ারি এবং সরকারি সংস্থা ‘দারুল ইফতা আল মিশরিয়া’ ২০১৭ সালে বিধান দেয়—সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করা নিষিদ্ধ। ধূমপান যেহেতু ক্ষতিকর, তাই সিগারেট উৎপাদনের কাজ করাও পাপ। সৌদি আরবের আলেমরাও একই মতামত দিয়েছেন। কারণ ধূমপান আসক্তি বা নেশায় পরিণত হয়।
হিন্দু ধর্ম
তোমার নেশাকারী বন্ধু যদি বিদ্বান বা ধনীও হয়, তারপরেও বজ্রপাততুল্য এবং অবশ্য পরিত্যাজ্য। —ঋগবেদ ৮.২১.১৪
‘মদ্যপস্ত্রীনিসেবন’ অর্থাৎ যে নারী মদ্যপান করে তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা পাপ।’ —৪১ নং উপপাপ, হিন্দুশাস্ত্র
নিশ্চয়ই সুরা বা মদ হলো অন্নের মলস্বরূপ, পাপস্বরূপ। তাই ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় নির্বিশেষে সকলের জন্যে এটি অবশ্য বর্জনীয়। —মনুসংহিতা ১১.৯৪
মদ্যপান করে ব্রাহ্মণ অপবিত্র স্থানে পতিত হবে বা বেদবাক্য অশুদ্ধ বলবে অথবা কোনো নিষিদ্ধ কর্ম করবে। এই কারণে মদ্যপান করা উচিত নয়। —মনুসংহিতা ১১.৯৭
খ্রিষ্ট ধর্ম
মদ্যপায়ীদের সঙ্গী হয়ো না।—হিতোপদেশ ২৩:২০
তোমরা কি জানো না যে, তোমরা ঈশ্বরের আবাসস্থল আর ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের মধ্যে বাস করে? যদি কেউ ঈশ্বরের ঘর নষ্ট করে, তবে ঈশ্বরও তাকে নষ্ট করবেন। —১ করিন্থীয় ৩:১৬-১৭
নিজেকে ভাই বলে দাবি করে এমন ব্যক্তি যদি দুশ্চরিত্র, লোভী, প্রতিমাপূজারি, পরচর্চাকারী, মাতাল বা জোচ্চোর হয় তবে তার সাথে মেলামেশা করবে না এমনকি পানাহারও করবে না। —১ করিন্থীয় ৫:১১
বৌদ্ধ ধর্ম
প্রাণিহত্যা, চুুরি, ব্যভিচার, মিথ্যাকথন ও মদ্যপান হতে বিরত হওয়া শীলগুণ। শীলগুণ বা চারিত্রিক উৎকর্ষতায় সতত সুন্দর, নৈতিকতাগুণে গুণান্বিত হয়ে জীবনযাপন করাই কর্তব্য। —বুদ্ধবাণী
এসবি/