ঢাকা, বুধবার   ০৬ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২১ ১৪৩১

শার্শায় ব্যাপকহারে দেখা দিয়েছে গরুর রোগ, আতঙ্কে খামারিরা

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০২:০৩ পিএম, ২ অক্টোবর ২০২৩ সোমবার

গরুর ক্ষুরা ও পক্স রোগের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কে আছেন যশোরের খামারিসহ সাধারণ চাষীরা। জেলার শার্শা উপজেলায় হঠাৎ করে ব্যাপকহারে দেখা দিয়েছে গরুর এ রোগ। উপজেলার সীমান্তবর্তী বেনাপোল, নাভারন, বাগআঁচড়া, শার্শা উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামের খামারে ও বিভিন্ন কৃষকের প্রায় এক হাজার গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কোন কোন গ্রামে বেশ কিছু গরুর মৃত্যুও হয়েছে। 

এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন খামারি ও কৃষকরা। চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা তারা।

খামারি রফিকুল ইসলাম বলেন, ষাঁড় ও গাভী মিলিয়ে আমার খামারে ১২টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে আমার ৬টি গরু পরে আরও ২টি গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং তার চিকিৎসা চলছে।

শার্শা উপজেলার একাধিক কৃষকেরা জানান, তাদের পোষা গরুর গায়ে গোলাকৃতি পক্স দেখা দিয়েছে, সারা গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। এ সময় তারা গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে চিকিৎসা দিলেও নিরাময় হচ্ছে না। আক্রান্ত গরু অসুস্থ হয়ে কিছুই খাচ্ছে না। কিছু দিন পর মারা যাচ্ছে। মৃতের ঝুঁকিতে পড়ছে বাচ্চা গরু ও গাভী। এছাড়া দেখা দিয়েছে খুরা রোগ।

উলাশী গ্রামের খামারি আল আমিন বলেন, দুই দিনে তার দুটি গাভী মারা গেছে। যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা।

যে সকল খামারী বা কৃষকের গাভী ও ষাঁড় আক্রান্ত হয়েছে তারা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে সরকারিভাবে কোনো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে অনেক খামারী ও সাধারন মানুষ খুরা রোগে আক্রান্ত বড় বড় গরু স্বল্প মূল্যে মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। 

আক্রান্ত গরু অল্প মূল্যে ক্রয় করে মাংস ব্যবসায়ীরা কোন ডাক্তারী পরীক্ষা ছাড়াই রাতের আধারে জবাই করে মাংস বিক্রি করছে। এমন ঘটনা সারা শার্শায় ঘটলেও দেখার কেউ নেই। নেই কোন প্রতিকার। যে কারণে অসুস্থ গরুর মাংস খেয়ে অসুস্থ বা মারাত্মক ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ। 

উপজেলার প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় গরুর খামার রয়েছে প্রায় ৯৯৮৫টি, ছাগল ১০৮৩০, ভেড়া ৫৫টি। উপজেলার অনেক গ্রামে গরুর পক্স, ক্ষুরা রোগসহ বিভিন্ন রোগ হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। অনেকে সরকারি অফিসের পশু ডাক্তারের কাছে আসে না। স্থানীয় হাতুড়ি ডাক্তার দিয়ে তাদের পশু চিকিৎসা করান। যার অধিকাংশ চিকিৎসা ভুল। এ জন্য ভুল চিকিৎসায় অনেক গরু মারা যায়। 

শার্শা উপজেলা প্রাণীসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. রুবাইয়াত ফেরদৌস বলেন, শার্শা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গত ৩ মাসে প্রায় ১০-১২ হাজার গরু, ছাগলের বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। খামারীসহ সাধারণ মানুষকে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করাসহ মাঠ দিবস পালন করা হয়েছে। শার্শায় পশু চিকিৎসায় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ১৬টি উঠান বৈঠক করা হয়েছে। 

তারপরও এসব সাধারণ কৃষক ও খামারীরা তাদের পশুকে না এনে স্থানীয় গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করান। এর পর যখন দেখেন পশু মরার পথে তখন হাসপাতালের স্মরনাপন্ন হন। মানুষের মত পশু যখন অসুস্থ হবে তখনি অসুস্থ পশুকে ডাক্তারের কাছে হাসপাতালে আনতে হবে বলে তিনি জানান। 

এএইচ