ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

প্রেমঘটিত বিরোধে স্কুলছাত্র মাহফুজকে হত্যা, আটক ৫

নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৪:১১ পিএম, ৬ অক্টোবর ২০২৩ শুক্রবার

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় স্কুলছাত্র দিদারুল ইসলাম মাহফুজকে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। 

বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের একাধিক চৌকষ দল অনুসন্ধান করে সদরা উপজেলার ইব্রাহিমপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোঃ হাবিল হোসেন (৩০), মোঃ রানা (২২) ও মোঃ রানা শেখ (১৯) নামে তিনজনকে আটক করে। এসময় তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা হাতুড়ি ও  লুন্ঠিত ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়। 

এছাড়া ঘটনার সাথে জড়িত সামিউর ইসলাম শুভ (১৯) ও মোঃ ইমন প্রামানিক (২০) নামে আরও দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ। 

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করে পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত আসামি মোঃ রানার স্ত্রীর সাথে দেদারুল ইসলাম মাহফুজের প্রেমঘটিত বিরোধকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম জানান, চকগোয়াশ গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ১০ শ্রেণীর ছাত্র দিদারুল ইসলাম মাহফুজ বুধবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহনের জন্য ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। সে লেখাপড়ার পাশাপাশি ইজিবাইক চালিয়ে উপার্জিত অর্থ সংসারে যোগান দিত। ইজিবাইক নিয়ে বের হওয়ার পর আর বাড়ি ফিরে আসেনি। 

তার পিতা দেলোয়ার ছেলের মোবাইল ফোনে রিং দিলে নম্বরটি বন্ধ পান। পরদিন সকালে লোক মারফত মোবাইল ফোনে জানতে পারেন যে, বাগাতিপাড়া উপজেলার দেবনগর রাঙ্গামাটিয়া খ্রিস্টানপাড়ার জনৈক মতলবের আমবাগানে গুরুতর আহত ও প্রায় সজ্ঞাহীন অবস্থায় তার ছেলে দিদারুল ইসলাম মাহফুজ পড়ে আছে। লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহফুজকে মৃত ঘোষণা করেন। 

এ ঘটনায় মাহফুজের বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বাগাতিপাড়া থানায় এজাহার দায়ের করেন।  

এদিকে ঘটনার খবর পাওয়ার পর হত্যাকান্ডের মূল রহস্য দ্রুত সময়ের মধ্যে উদঘাটন, আসামি গ্রেফতার ও মামলার যথাযথ তদন্তের লক্ষ্যে জেলা পুলিশের জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়।  এরপর ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদের সনাক্ত করতে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করে পুলিশের একাধিক চৌকশ টিম গঠন করা হয়। 

তারা অপরাধের ধরণ বিশ্লেষণ, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার অভিযান পরিচালনা করে নাটোর সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর গ্রাম থেকে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ওই তিনজনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জড়িত আরও ২ জনকে গ্রেফতার করাসহ লুন্ঠিত ইজিবাইক ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা হাতুরি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম আরও বলেন, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামিরা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।  প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মোঃ রানার স্ত্রী’র সাথে দেদারুল ইসলাম মাহফুজের প্রেমঘটিত বিরোধকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। 

আসামি রানার পরিকল্পনায় অন্যান্য গ্রেফতারকৃত আসামিদের সহায়তায় হাতুড়ি দিয়ে মাথায় এলোপাথারিভাবে আঘাত করে মাহফুজকে গুরুতর আহত অবস্থায় মৃত ভেবে ফেলে রেখে তার ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। 

গ্রেফতারকৃত মোঃ রানা বাগাতিপাড়া উপজেলার চকহরিরামপুর গ্রামের মোতাহার আলীর ছেলে, হাবিল হোসেন নাটোর সদর উপজেলার ইব্রাহীম পুর গ্রামের মৃত ফিরোজ মোল্লার ছেলে, রানা শেখ সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের আমিন চান শেখের ছেলে, সামিউর ইসলাম শুভ কুঠি বাশবাড়ীয়া গ্রামের সুমন আলীর ছেলে এবং ইমন প্রামাণিক নূরপুর মালঞ্চি এলাকার জালাল প্রামানিকের ছেলে। 

গ্রেফতারকৃতরা ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত। ঘটনার সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম।

এএইচ