হামাসের রকেট হামলায় অন্তত ২২ ইসরায়েলি নিহত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:৩১ পিএম, ৭ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার
গত কয়েক বছরের মধ্যে ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় আক্রমণ চালিয়েছে ফিলিস্তিনের হামাস গোষ্ঠী। গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চল লক্ষ্য করে পাঁচ হাজার রকেট ছুড়েছে তারা। এতে অন্তত ২২ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এদিকে হামাসের হামলার জবাবে এবার গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘোষণা করে বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।
শনিবার (৭ অক্টোবর) ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি শহরে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস।
ইসরায়েলের ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) রেসকিউ সার্ভিসের মতে, হামাসের নজিরবিহীন এ হামলায় অন্তত ২২ জন নিহত এবং ২৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে। নিহত বা আহতদের মধ্যে কতজন বেসামরিক নাগরিক তা এমডিএ জানায়নি।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে শনিবার একের পর এক রকেট ছোড়া হয়েছে ইসরায়েলের শহরগুলোকে লক্ষ্য করে। এ হামলায় অন্তত দুইজন ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সরকারি টিভি চ্যানেল ‘কান’।
অন্যদিকে টাইমস অভ ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের হামলায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের আরেক শীর্ষ সংবাদমাধ্যম হারেৎজ ইমারজেন্সি সার্ভিসেস রিপোর্টের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ২০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।
এছাড়া ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, এ হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় ২০০ জন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, শনিবার ভোরে হামাসের আকস্মিক হামলার পর দেশ যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। ইসরায়েলের নাগরিকরা, আমরা যুদ্ধে আছি। কোনো অপারেশনে নয়, রাউন্ডে নয়, যুদ্ধে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, সকাল সাড়ে ৬টা থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলে ২২০০ রকেট ছুড়েছে হামাস। এ ছাড়াও স্থল, আকাশ ও নৌপথে হামাসের সদস্যরা ইসরাইলে প্রবেশ করছেন।
দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে হামাস গুরুতর ভুল করেছে। আইডিএফ সৈন্যরা (ইসরাইলি সেনাবাহিনী) প্রতিটি অবস্থানে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, রকেট হামলার বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের প্রধানরা বৈঠক করবেন।
হামলার দায় স্বীকার করে হামাসের নেতা মোহাম্মেদ দেইফ বলেন, আমরা শনিবার ইসরাইলের উদ্দেশে পাঁচ হাজার রকেট ছুড়েছি। এর মধ্য দিয়ে আমরা অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম শুরু করে দিয়েছি।
দেইফ বলেন, যথেষ্ট হয়েছে। ইসরাইলকে আমরা উপযুক্ত জবাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশপ্রেমিক সব ফিলিস্তিনিকে এই যুদ্ধে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছেন, দক্ষিণ ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি যোদ্ধা ও ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে লড়াই চলছে। যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় মানুষজন কয়েকদিন চলার মতো জিনিসপত্র কেনার জন্য দোকানে ভিড় জমিয়েছে। অনেকেই নিজ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে রওনা দিয়েছেন।
হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ জানিয়েছেন, ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে ৫ হাজার রকেট ছোড়া হয়েছে। এর পাশাপাশি তিনি সব ফিলিস্তিনিকে লড়াইয়ে যোগ দিতে আহ্বান জানান।
অন্যদিকে ইসরায়েলের পুলিশপ্রধান কোবি শাবতাই বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনীও পাল্টা আক্রমণে হামাসের কয়েকজন যোদ্ধাকে হত্যা করেছেন। এ পরিস্থিতিতে তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ঘরে অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের ও ফিলিস্তিনি দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। ২০২১ সালের ১০ দিনের যুদ্ধের পর এটিই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আরবভূমির বুকে তৈরি ইহুদি দেশটিকে জন্মলগ্ন থেকেই ধ্বংস করার চেষ্টা চালাচ্ছে পাশের মুসলিম দেশগুলো। এপর্যন্ত একাধিক যুদ্ধও হয়েছে দু’পক্ষের মধ্যে। ফের নতুন করে প্যালেস্টাইনের জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের হামলার পরে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল।
এমএম//