সাদেকপুর যেন আতঙ্কপুরী, গ্রামছাড়া অন্তত ১শ’ পরিবার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২:৫০ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৩ বৃহস্পতিবার
পূর্ব শত্রুতা ও গরুর বাজার নিয়ে দু’গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের জেরে প্রকাশ্যে হত্যা। সেই হত্যার পর বাড়ি-ঘরে চলে হামলা-ভাংচুর আর লুটপাট। সব মিলিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সাদেকপুর এখন আতঙ্কপুরী। প্রতিপক্ষের ভয়ে তিন মাস ধরে গ্রামছাড়া হয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রিত অন্তত ১শ’ পরিবার।
এতে ছেলে-মেয়েদের স্বাভাবিক লেখাপড়া বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে গ্রামের স্বাভাবিক জীবন-যাপন। অসহায় হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকা পরিবারগুলো তাদের বাড়িতে ফিরতে চায়। এদিকে পুলিশ বলছে গ্রামে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
সরজমিন সাদেকপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাজার জুড়ে সুনসান নীরবতা। দোকানগুলো একাধারে তালাবদ্ধ। গ্রামের মেঠো পথজুড়ে মাঝে মধ্যে কারো দেখা মিললেও বেশীরভাগ সময়ই থাকেছে নীরব-নিস্তব্ধতা। দেখে মনে হতে পারে হিন্দি সিনেমার কোন ভয়ানক দৃশ্যের প্রদর্শন। কিন্তু তা নয়, একটি খুনের ঘটনা ও পরবর্তী গ্রাম্য সহিংসতার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের সাদেকপুর গ্রাম এখন এমনই আতঙ্কপুরী। হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ভয়ে ঘ- বাড়ি এমনিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে গ্রামছাড়া হয়ে আছে অন্তত ১শ’ পরিবার।
জানা যায়, পূর্ব শত্রুতা ও একটি গরুর বাজার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গ্রামের ইসমাইল মিয়ার গোষ্ঠীর সাথে নজু, বাছির ও সাবেক মেম্বার মালেক মিয়ার গোষ্ঠীর বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে গত ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় সাদেকপুর বাজারে উভয় পক্ষ্যের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন ইসমাইল মিয়ার পক্ষের গোলাপ মিয়া।
পরে ২৯ জুলাই ঢাকাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
গ্রামছাড়া পরিবারগুলোর অভিযোগ, মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিপক্ষের লোকজন দলবল নিয়ে নির্বিচারে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ অবস্থায় তারা গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ৩ মাস ধরে বিভিন্ন গ্রামে পরিবার নিয়ে আশ্রিত। গ্রামে ফিরতে চাইলেও প্রতিপক্ষের লোকজনদের হামলায় পালিয়ে আসতে হয়। এতে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা এখন হুমকীর মুখে। তারা তাদের ভিটে বাড়িতে ফিরতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
এদিকে, নিহত গোলাপ মিয়ার স্ত্রী ও সন্তান জানান, পূর্ব শত্রুতার জেরে গোলাপ মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁদ পেলে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার সুষ্ঠু বিচারসহ দ্রুত আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানান তারা। এছাড়া প্রতিপক্ষের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের সাথে তারা কোনভাবেই জড়িত নন বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, এসব ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষের ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরও জানান, গ্রামে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে টহলের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
গ্রামবাসী স্বাভাবিক জীবন যাপন করুক। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা থাকবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এএইচ