ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

নামাজের শুদ্ধাচার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:০৮ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০২৩ মঙ্গলবার

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ। বিশ্বাস, নামাজ, যাকাত, রোজা ও হজ। বিশ্বাসের পরই নামাজের স্থান। কোরআনে ৮২টি আয়াতে নামাজের উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি আয়াতে নামাজের কথা বলা হয়েছে। আর সঠিক জীবনদৃষ্টি লাভে কোরআনের জ্ঞান অর্জনকে করা হয়েছে ফরজ।

শুদ্ধাচারের এই পর্বে নামাজ নামাজ পড়ার সময় করণীয়-বর্জনীয় বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করা হয়েছে। 

করণীয়

> নামাজ হচ্ছে আল্লাহর সাথে বান্দার সাক্ষাতের শ্রেষ্ঠ সময়। তাই আজানের সাথে সাথে নামাজের জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুত হোন।

> নামাজ নিয়মিত ও নির্ধারিত সময়েই আদায়ে সচেষ্ট হোন।

> ওজু/ গোসলের প্রয়োজন থাকলে তা করুন।

> পরিধেয় পোশাক পবিত্র আছে কিনা নিশ্চিত হোন।

> কাঁচা পেঁয়াজ বা রসুনের গন্ধ মুখে নিয়ে নামাজ পড়া সমীচীন নয়। ভালোভাবে ব্রাশ বা মেসওয়াক করে তারপর নামাজ আদায় করুন।  

> পুরুষ হলে কমপক্ষে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখুন। নারীরা দুহাতের কব্জি, পায়ের পাতা ও মুখমণ্ডল ব্যতীত পুরো দেহ ঢেকে রাখুন।

> হাঁচি কাশি ঢেঁকুর হাই এলে যথাসম্ভব সংবরণ করুন। প্রয়োজনে রুমাল ব্যবহার করুন।

> পূর্ণ একাত্মতা নিয়ে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ান। একবার লম্বা দম নিন, দম ছাড়ুন। ভাবুন, আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। মনে মনে নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধির এ দোয়া করুন− ‘হে আল্লাহ! নামাজে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই আমার মনকে সকল চিন্তামুক্ত করে তোমারই দিকে রুজু করো। অন্তরকে প্লাবিত করো তোমারই প্রেমে। প্রতিটি সেজদাকে পরিণত করো মেরাজে। সকল অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করো। আশ্রয় দাও তোমারই রহমতের ছায়ায়।’

> আনুষ্ঠানিকতা অথবা দায়সারাভাবে নয়, কৃতজ্ঞচিত্তে পূর্ণ মনোযোগ ও আন্তরিকতার সাথে ভালবেসে নামাজ আদায় করুন।

> নামাজের জন্যে নির্ধারিত ওঠাবসা ও অন্যান্য মুদ্রা ছাড়া অহেতুক হাত-পা নাড়াচাড়া করা, শরীর চুলকানো ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন।

> নামাজের ফরজগুলোর মধ্যে কোনো একটি ফরজ ছুটে গেলে বা নামাজের মধ্যে কোরআন তেলাওয়াতে যদি এমন ভুল হয়, যে কারণে আয়াতের মর্মার্থ বদলে যায়, তাহলে পুনরায় নামাজ শুরু করুন।

> মসজিদে ধীরস্থিরভাবে আসুন। রাকাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায় তাড়াহুড়ো করে দৌড়ে না এসে জামাতের সাথে যতটুকু পাবেন, আদায় করুন। বাকিটা নিজে নিজে পড়ে নিন।

> নামাজের জন্যে মসজিদে গিয়ে বসে বসে ঘুমানো বা ঝিমানো থেকে বিরত থাকুন। ঘুম ঘুম বা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব হলে জায়গা বদল করে বসুন।

> একটু পরেই জামাত শুরু হবে, সুন্নত পড়ার সময় নেই দেখেও তাড়াহুড়ো করে সুন্নত নামাজে দাঁড়িয়ে যাবেন না।

> জামাতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতার সোজা করে এমনভাবে দাঁড়ান, যেন মাঝে কোনো ফাঁক না থাকে।

> নামাজের জামাত শুরু হয়ে গেলে অন্যের অপেক্ষায় না থেকে সামনের সারির ফাঁকা জায়গায় নিজেই গিয়ে দাঁড়ান।

> জামাতের নামাজে প্রয়োজনে খানিকটা আগপিছ করতে হলেও চেষ্টা করুন যথাসম্ভব কম নড়াচড়া করতে।

> জামাতে নামাজ পড়লে ইমামের আগে রুকু, সেজদা, ওঠাবসা ও সালাম (অর্থাৎ যে-কোনো রুকুন) আদায় করা থেকে বিরত থাকুন।

> জামাতে সালাম ফেরানোর সাথে সাথেই মসজিদ থেকে চলে যাওয়ার জন্যে উঠে পড়বেন না। একটু সবর করুন। নামাজ আদায় করতে পারার জন্যে আল্লাহকে শুকরিয়া জানান। তারপর বেরিয়ে আসুন।

> নামাজ আদায়রত কারো সামনে দিয়ে যাওয়া-আসা করা থেকে বিরত থাকুন। একান্তই যেতে হলে সেজদা পরিমাণ জায়গার পর দেড় হাত দূরত্ব রেখে বা সামনে কিছু একটা রেখে তারপর যান।

> জুমার নামাজ মার্কেটে/ রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে আদায় করতে হলে জামাত শেষে দ্রুত রাস্তা ছেড়ে দিন। জামাতের পরের সুন্নত অথবা নফল নামাজ বাসায় গিয়ে আদায় করুন।

> রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের সামনেই জায়নামাজের ধুলা ঝাড়বেন না। জায়নামাজ ভাঁজ করে বাসায় এনে ধুলা পরিষ্কার করুন।

> তাহাজ্জুদ অথবা নফল নামাজ পড়ার সুযোগ থাকলে সুযোগকে কাজে লাগান। কিন্তু আপনার এ ইবাদতের কথা জনে জনে বলে বেড়াবেন না।

> ‘একটু পরে পড়ছি’ অথবা ‘হাতের কাজটা শেষ করেই উঠছি’− এ ধরনের চিন্তা নামাজ কাজা হওয়ার কারণ হতে পারে।

> নামাজে তাড়াহুড়ো করবেন না। এই নামাজই হতে পারে আপনার জীবনের শেষ নামাজ− একথা মনে করে ধীরস্থির, প্রশান্তচিত্তে নামাজ আদায় করুন।

> নামাজী হয়ে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ। সেইসাথে প্রয়োজন সদাচারী মানুষ হতে পারা। তাই নামাজী হওয়ার সাথে সাথে জীবন থেকে অন্যায়, অশ্লীলতা, নিজের ও অন্যের প্রতি জুলুম করা থেকে ধীরে ধীরে মুক্ত হতে পারছেন কিনা তা নিয়মিত পর্যালোচনা করুন। এসব ভ্রষ্টাচার থেকে মুক্ত হতে পারলেই বুঝবেন, আপনার জীবনে নামাজ কায়েমের পথে অগ্রগতি হয়েছে।

বিরত থাকুন

> নামাজের শুরুতে নিয়ত করার সময় কোমরে হাত রেখে দাঁড়ানো।

> নামাজরত অবস্থায় সেজদা দেয়ার আগে ফুঁ দিয়ে ধুলা সরানো।

> মুখ ঢেকে রেখে/ চোখ বন্ধ করে নামাজ পড়া। নামাজ পড়তে পড়তে ওপরের দিকে দৃষ্টি দেয়া/ ডানে-বামে তাকানো।

> মেঝেতে লুটিয়ে থাকে এমন লম্বা কাপড় পরিধান করে নামাজে দাঁড়ানো। নামাজরত অবস্থায় কাপড় টেনে ঠিক করা।

> ক্ষুধার্ত অবস্থায় কিংবা প্রস্রাব/ পায়খানার বেগ চেপে রেখে নামাজ পড়া।

> নামাজরত অবস্থায় কারো সাথে ভাব বিনিময় বা কথা বলা; সশব্দে হেসে ফেলা; দুঃখসূচক শব্দ যেমন : আহ! উহ! হায়! ইত্যাদি উচ্চস্বরে বলা।

> জানা থাকার পরও কেবলার দিক থেকে অন্যদিকে ফিরে যাওয়া।

> নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বা ধূমপান করে এসে নামাজে দাঁড়ানো।

> কাউকে নামাজ পড়তে জোর করা, হাত ধরে টেনে জামাতে নিয়ে যাওয়া। কেউ নামাজ না পড়লে তাকে বেনামাজী বলে অপদস্থ করা।

লেখাটি শহীদ আল বোখারী মহাজাতক- এর "শুদ্ধাচার" বই থেকে নেওয়া।

এমএম//