ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, ৩ আসামি গ্রেপ্তার
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:৪২ পিএম, ২৬ অক্টোবর ২০২৩ বৃহস্পতিবার
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের আলোচিত ক্লুলেস হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতারসহ খুনের রহস্য ৩ মাসেই উদঘাটন করেছে সিরাজগঞ্জ পিবিআই।
বৃহস্পতিবার সকালে পিবিআইয়ের কনফারেন্স রুমে ঘটনার বর্ণনা দেন পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো: রেজাউল করিম।
পুলিশ সুপার জানান, চলতি বছরের ৭ এপ্রিল কাজিপুরের মাজনাবাড়ি আফাজ উদ্দিন হুদা (৬৬) নিখোঁজ হন। স্বজনরা অনেক খোঁজাখুজি করেও তার সন্ধান পাননি। পরে ৯ এপ্রিল স্থানীয় একটি ভূট্টা ক্ষেতের মধ্যে তার গলিত মরদেহ দেখতে পায়। পরে পুলিশ এসে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় তার ভাতিজা বাদী হয়ে কাজিপুর থানায় ১১ এপ্রিল অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে। কিন্তু থানা পুলিশের তদন্তে তেমন কোন অগ্রগতি না হওয়ায় বাদীর আবেদনে মামলাটি পিবিআইয়ে স্থানান্তর হয়।
এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো: গোলাম কিবরিয়া তিনমাস গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে কাজিপুরের মাজনাবাড়ীর মোঃ বিপুল মিয়া, মোঃ শাহিন মিয়া (১৯), সরিষাবাড়ির মোঃ মোমিনুল ইসলাম কাজিপুর থানা ও সরিষাবাড়ি থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করে পিবিআই।
পরে তারা সকলেই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে বিজ্ঞ আদালতে তাদের দেওয়া ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারার জবানবন্দি পর্যালোচনায় এবং সার্বিক তদন্তে জানা যায় যে আফাজ উদ্দিন হুনা (৬৬) ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত ছিলেন এবং লেখাপড়া জানতেন। তার নির্দিষ্ট কোন থাকার জায়গা ছিল না। নিজস্ব ঘর না থাকায় সে অধিকাংশ সময় তার বাড়ির পাশে মুনসুর নগর বুদ্ধি প্রতিবন্ধি স্কুলের একটি কক্ষে একাই বসবাস করতেন এবং নিজেই রান্না করে খেতেন।
ভিকটিমের নির্দিষ্ট কোন পেশা না থাকায় তিনি গ্রামের লোকজনের কাছে সুদের উপর টাকা লাগাতেন এবং স্থানীয় নতুন বাজার নামক স্থানে বসে নিয়মিত লাভের টাকা আদায় করতেন। ভিকটিম সুদের উপর টাকা লাগানোর হিসেব রাখার জন্য সার্বক্ষনিক একটি ডাইরী সংরক্ষণ করতেন। গ্রামের লোকজনের কাছে ভিকটিমের লাখ লাখ টাকা সুদের উপরে লাগানো ছিল বলে জনশ্রুতি আছে।
ভিকটিমের কাছে সবসময় ২-৩ লাখ টাকা থাকতো বলে এলাকার লোকজন জানতো। আসামি বিপুল মিয়া ওরফে বিপ্লবের সঙ্গে ভিকটিমের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় মাঝেমধ্যে ভিকটিম আসামি বিপুলদের বাড়িতে আসা যাওয়া করতেন ও আসামি বিপুলের রুমে বসে টাকার হিসেব করতেন।
এক পর্যায়ে আসামি বিপুল ভিকটিমের টাকার লোভে পড়ে গ্রেফতারকৃত আসামিগণসহ অপর পলাতক আসামির সাথে যোগসাজশ করে হত্যাকান্ডের অনুমান ১৫-২০ দিন পূর্বে ভিকটিমকে হত্যা করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সুযোগের অপেক্ষায় থাকাবস্থায় চলতি ৭ এপ্রিল রাত অনুমান সাড়ে ৯টায় আসামিরা ভিকটিমের নিয়মিত বাড়ি ফেরার রাস্তায় অপেক্ষা করতে থাকে।
ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১১টায় পূর্ব মাজনাবাড়ি নতুন বাজার হতে ভিকটিম বাড়ি ফেরার সময় ঘটনাস্থলের পাশের রাস্তায় পৌঁছালে আসামিরা ভিকটিমের পথরোধ করে এবং অতর্কিতভাবে বেয়ারিং সংযুক্ত কাঠের লাঠি দিয়ে ভিকটিমের মাথায় একাধিকবার আঘাত করে। মাথার আঘাতের ফলে ভিকটিম মাটিতে পড়ে নিস্তেজ হয়ে গেলে আসামিরা ভিকটিমকে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
পরবর্তীতে আসামিরা ভিকটিমের নিকট থাকা নগদ ৮৮ হাজার টাকা এবং টাকার হিসাব রাখার ডায়েরী নিয়ে নেয়। আসামিরা ভিকটিমের মৃতদেহ গোপন করার লক্ষ্যে ভিকটিমের গলায় গামছা পেচিয়ে ও ধরাধরি করে মৃতদেহটি রাস্তার পাশে মোঃ নজরুল ইসলামের ভুট্টা ক্ষেতে রেখে দেয়। পরে নিজেদের মধ্যে সমহারে টাকা ভাগ করে পালিয়ে যায়।
মামলার বাদী মো: ওয়াজেদ আলী জানান, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তিনি নিশ্চিন্ত হয়েছেন। আসামিদের দৃষ্টানমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এএইচ