ঢাকা, রবিবার   ১২ জানুয়ারি ২০২৫,   পৌষ ২৯ ১৪৩১

ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ থেকে চীন কী পেতে চায়?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪৩ এএম, ২ নভেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার

ইসরায়েল- গাজার সংঘাতের বিষয়ে আলোচনা করতে চীনা শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথে দেখা করেছেন।

ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে সংঘাত যখন প্রকট রূপ নিয়েছে, তখন উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার করতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালনের কথা জানিয়েছে চীন, যা অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল।

কিন্তু এই মধ্যস্থতার মাধ্যমে চীন যেসব লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, সেক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই গত সপ্তাহ শেষে ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে ইসরায়েল-হামাসের সংঘাত নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি ওই বৈঠক করেছেন এমন সময় যখন এই সংঘাত আঞ্চলিক একটি বড় যুদ্ধে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা এক্ষেত্রে একটি সমাধান খুঁজে বের করার জন্য চীনের সাথে কাজ করবে।

চীনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত ঝাই জুন আরব নেতাদের সাথে দেখা করতে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার পর মি. ওয়াং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছেন।

মি. ওয়াং জাতিসংঘের বৈঠকেগুলোয় ওই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় অন্যতম সোচ্চার ভূমিকা রেখেছিলেন।

আশা করা হচ্ছিল যে, আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমন করতে ইরানের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে কাজে লাগাতে পারে চীন। ইরান গাজায় হামাস আর লেবাননে হেজবুল্লাহকে সমর্থন করে থাকে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা দৃশ্যত মি. ওয়াংকে ইরানিদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করে তোলার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

চীন ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। এই বছরের শুরুতে অভাবনীয়ভাবে বেইজিং দুই বৈরি দেশ ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক সহজ করতে মধ্যস্থতা করেছিল।

তেহরান বলেছে যে তারা গাজার পরিস্থিতি সমাধানে "চীনের সাথে যোগাযোগ আরও জোরদার করতে প্রস্তুত" রয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের অধীনস্থ ন্যাশনাল ওয়ার কলেজের চীনা পররাষ্ট্রনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডন মারফি বলেছেন, "যেহেতু সংঘাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে চীনা সরকারের তুলনামূলকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, তাই চীনকে সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।"

বিশেষ করে ফিলিস্তিন, আরব, তুরস্ক ও ইরানের সঙ্গে চীনের ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

"যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আবার ইসরায়েলের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে সাথে নিয়ে চীন সংঘাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারে,"তিনি বলেন।

তবে অন্যান্য পর্যবেক্ষকরা মনে করেন যে, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে চীন তেমন শক্তিশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবে না।

"চীন এই ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ বা প্রভাবশালী কোন দেশ নয়। এই অঞ্চলের মানুষের সাথে কথা বলে, চীন কোন সমাধান আনতে পারবে বা সমাধানে অবদান রাখতে পারবে তা কেউই আশা করে না," এমনটাই মনে করেন, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং মধ্যপ্রাচ্য ও চীন সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ জোনাথন ফুলটন।

সংঘাতের বিষয়ে চীনের প্রথম বিবৃতি ইসরায়েলকে ক্ষুব্ধ করেছি এবং তারা সেজন্য "গভীর হতাশা" প্রকাশ করেছিল যে, চীনের বিবৃতিতে হামাসের কোন নিন্দা করা হয়নি বা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

হামাসের বন্দুকধারীরা গত ৭ই অক্টোবর গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের উপর একটি নজিরবিহীন আক্রমণ করে। এতে ১৪শ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন এবং কমপক্ষে ২৩৯ জনকে জিম্মি করা হয়।

তারপর থেকে, ইসরায়েল গাজায় পাল্টা হামলা চালিয়ে আসছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এ পর্যন্ত সাড়ে আট হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

ইসরায়েল এখন ওই অঞ্চলে সেনা ও ট্যাঙ্ক পাঠিয়েছে।

এ বিষয়ে চীন তাদের প্রথম বিবৃতি নিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়ে। পরে মিঃ ওয়াং ইসরায়েলকে বলেন যে "সব দেশেরই আত্মরক্ষার অধিকার আছে।" তবে তিনি অন্যান্য জায়গায় এটাও বলেছেন যে ইসরায়েলের পদক্ষেপগুলো "আত্মরক্ষার প্রচেষ্টার বাইরে" চলে গিয়েছে।

চীন বর্তমানে ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। কারণ দেশটি দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের প্রতি প্রকাশ্যে তাদের সহানুভূতি প্রকাশ করে এসেছে।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাও জেদং-এর সময়কাল থেকেই চীন ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানিয়ে আসছে।

বিশ্ব জুড়ে তথাকথিত "জাতীয় মুক্তি" আন্দোলনের সমর্থনে মাও জেদং ফিলিস্তিনিদের অস্ত্র পাঠিয়েছিলেন। মাও ইসরায়েলকে তাইওয়ানের সাথেও তুলনা করেছিলেন। উভয়ই যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত - এদের পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের ঘাঁটি হিসাবে তিনি আখ্যা দিয়েছিলেন।

পরবর্তী দশকগুলোতে চীন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে এবং ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তোলে। এখন ইসরায়েলের সাথে চীনের শত কোটি ডলারের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।

তবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছে চীন।

সাম্প্রতিক সংঘাতের বিষয়ে চীনা কর্মকর্তারা এমনকি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অনলাইনে ইহুদি-বিদ্বেষের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত জাতীয়তাবাদী ব্লগাররাই এ ধরনের বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে।

চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ ফিলিস্তিনিদের উপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে ইসরায়েলের পদক্ষেপকে নাৎসিবাদের সাথে তুলনা করেছে। এসব বিষয় নিয়ে বেইজিংয়ের জার্মান দূতাবাস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

এদিকে বেইজিংয়ে ইসরায়েলি দূতাবাসের এক কর্মীর পরিবারের সদস্যের ওপর ছুরিকাঘাতের ঘটনাও অস্বস্তি বাড়িয়েছে।

চীন যখন ইসরায়েলি সরকারকে আলোচনায় সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে তখন এসব ঘটনা তাদের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলছে।

এতো অনিশ্চয়তার পরও চীন কেন এই আলোচনায় জড়াচ্ছে?

একটি কারণ হল মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ, সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে যা বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে

বেইজিং এখন বিদেশ থেকে আমদানি করা তেলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। বিশ্লেষকদের ধারণা তাদের তেলের প্রায় অর্ধেক উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে আসে।

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। বিআরআই চীনের বৈদেশিক ও অর্থনৈতিক নীতির ভিত্তি হয়ে উঠেছে ।

মধ্যস্থতার আরেকটি কারণ হল এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে বেইজিংয়ের তাদের হারানো সুনাম পুনরুদ্ধার করার সুবর্ণ সুযোগ পাবে।

চীনের ধারণা, "ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়ানো মানে আরব দেশ, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং গ্লোবাল সাউথের বড় অংশকে নিজেদের সাথে রাখা", ডা. মারফি উল্লেখ করেন।

এই যুদ্ধটি এমন এক সময়ে শুরু হয়েছে যখন চীন নিজেকে বিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও ক্রেতা হিসেবে উপস্থাপন করছে।

চীন, চলতি বছরের শুরু থেকে, যুক্তরাষ্ট্রের "আধিপত্যবাদী" নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রচার করে আসছে। এর সমালোচনার পাশাপাশি দেশটি চীনা নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থার একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করতে শুরু করেছে।

ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়ার জন্যআনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করা থেকে বিরত রয়েছে চীন ।

কিন্তু একই সময়ে চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া " মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটছে এবং ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনকে ঘিরে নানা ধরণের জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে.." উল্লেখ করেছেন ড. মারফি।

চীনে ইংরেজি ভাষার রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র দ্য গ্লোবাল টাইমস একটি কার্টুন চিত্র প্রকাশ করেছে যাতে দেখা যায় মার্কিন সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী জনপ্রিয় চরিত্র আংকেল স্যাম মার্কিন পতাকা শোভিত টুপি পরে একটি রক্তাক্ত হাত তুলে রেখেছে এবং বলছে “গাজায় কোন যুদ্ধ বিরতি নয়”।

যুক্তরাষ্ট্র "আগুনে ঘি ঢালছে" বলে অভিযুক্ত করেছে চীনের সামরিক সংবাদপত্র পিএলএ ডেইলি।

ইউক্রেন যুদ্ধে কিয়েভকে সাহায্য করায় ওয়াশিংটনের সমালোচনা করার গিয়েও একই কথা বলেছিল বেইজিং।

চীনে ইংরেজি ভাষার রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র দ্য গ্লোবাল টাইমস একটি কার্টুন চিত্র প্রকাশ করেছে যাতে দেখা যায় মার্কিন সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী জনপ্রিয় চরিত্র আংকেল স্যাম মার্কিন পতাকা শোভিত টুপি পরে একটি রক্তাক্ত হাত তুলে রেখেছে এবং বলছে “গাজায় কোন যুদ্ধ বিরতি নয়”।

পর্যবেক্ষকদের একটি অংশ মনে করছেন যে, বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিজেদের এমন একটি অবস্থান তৈরি করছে যে, যাতে বিশ্বে তাদের এই পশ্চিমা প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে।

কিন্তু স্পষ্টভাবে হামাসকে নিন্দা না করে চীন তার নিজের অবস্থানকেও ক্ষুণ্ণ করার ঝুঁকিও নিয়েছে।

তবে চীনে এই দীর্ঘমেয়াদী উচ্চাকাঙ্খা অর্জনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

এর মধ্যে একটি চ্যালেঞ্জ হল, চীনের দুটি বিপরীতমুখী অবস্থান এবং এর মধ্যে তাদের কূটনৈতিক অবস্থানকে ভারসাম্যেপূর্ণ করে তোলা।

কারণ চীন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং এ ব্যাপারে মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর সাথে সংহতি জানিয়েছে।

আবার তাদের বিরুদ্ধেই নিজ দেশে উইঘূর মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর গণহত্যা ও অধিকার খর্ব করার অভিযোগ রয়েছে। সেইসাথে তাদের জোরপূর্বক তিব্বতে পাঠিয়ে দেয়ার অভিযোগও উঠেছে।

তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে, আরব বিশ্বের সাথে চীন দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার কারণে এই বিষয়গুলো সম্ভবত বড় কোন সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না।

বড় সমস্যা হল, বেইজিংকে এই সংকট সমাধানে ভাসাভাসা ভূমিকা রাখতে দেখা যাচ্ছে। তারা খুব জোরালোভাবে যুক্ত হচ্ছে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

এর চেয়েও খারাপ বিষয় হল, বেইজিং তাদের স্বার্থের জন্য হামাস ও ইসরায়েল দ্বন্দ্বকে ব্যবহার করছে বলেও মনে করা হতে পারে।

চীন ধারণা করছে যে "ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে তারা আরব দেশগুলির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে আরও এগিয়ে যেতে পারছে, যা ব্যতিক্রমী কিছু নয়," বলছেন ড. ফুলটন।

তিনি উল্লেখ করছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই ইস্যুতে আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেই অনেক বিভেদ রয়েছে।

তবে মি. ওয়াং ই দাবি করেছেন যে চীন কেবল মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি চায় এবং "ফিলিস্তিন প্রশ্নে তাদের স্বার্থের কোন ব্যাপার নেই"।

কিন্তু চীনের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো, এই বক্তব্যটি বিশ্বের সামনে সত্যি বলে প্রমাণ করে তোলা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসবি/